

প্রবন্ধ
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহর সাদৃশ্য সিল দিয়ে তৈরি আংটির বিধান
২৮ এপ্রিল, ২০২৫
আবেগ বিক্রি করে খেতে আমরা পটু। যে কোন জিনিসের ইসলামি রুপায়ন হলেই সেটার প্রতি ঝুঁকে পড়ি আমরা। ছবির এই আংটি অনেকে অনলাইনে বিক্রি করছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহর সাদৃশ্য সিল দিয়ে বিক্রি হচ্ছে আংটি। অনেক আলেমও বিক্রি করছেন অনলাইনে। বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি আংটিটি স্টিল দ্বারা তৈরী। কয়েকটি বিষয় এখানে দ্রষ্টব্যঃ (১) যদি স্টিলের তৈরী হয়, তাহলে তো নারী পুরুষ কারোর জন্যই কোনভাবে পরিধান করার কোন সুযোগ নেই। (২) যদি রুপার তৈরী হয়, তাহলে দেখতে হবে এর ওজন কত। সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম ৩৭৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পুরুষের জন্য রুপার আংটি পরিধান বৈধ। এখন এটি সেই ওজন কিনা, যাচাই করা জরুরী। (৩) টয়লেটে আল্লাহ-নবীর নাম সম্বলিত কোন আংটি উন্মুক্ত নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নাই। ঢেকে যেতে হবে। নোটঃ পুরুষের জন্য শুধুমাত্র রুপার আংটি পরিধান জায়েজ। মহিলাদের জন্য শুধুমাত্র স্বর্ণ-রুপা এবং বর্তমানে সিটিগোল্ড/ইমিটিশন, হীরা, পাথর, কাচ, প্লাস্টিকের আংটি ব্যাবহার জায়েজ। এই ছাড়া বাকি যত ধাতুর আংটি হতে পারে : পিতল, লোহা, কাসা, তামা, সীসা, দস্তা, পারদ, এ্যালুমিনিয়াম, সিলভার সমস্ত প্রকার আংটি সরাসরি পরিধান তথা স্বর্ণ রুপার প্রলেপ দেয়া ছাড়া পরিধান নাজায়েজ। তবে আংটি ছাড়া মহিলারা অন্যান্য অলংকারের ক্ষেত্রে সমস্ত ধাতুর অলংকার ব্যাবহার করতে পারবে। অতএব শুধুমাত্র সিল/স্টিকার দেখেই লাফিয়ে পড়া যাবে না। যাচাই বাছাই করা জরুরী। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পুরুষদের আংটি যদি ৪ গ্রাম রুপার সাথে অন্য ধাতু এবং পাথর ব্যবহার করার ফলে ওজন ৪.৩৭৪ গ্রামের বেশি হয় তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ।
বিস্তারিত পড়ুনরাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের বিধান
২৭ এপ্রিল, ২০২৫
রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস ও তা ব্যবহার এর বিধানঃ যদি কোনো ব্যক্তি রাস্তায় টাকা বা কোনো মূল্যবান জিনিস পড়ে থাকতে দেখেন, আর যদি তিনি মালিককেও চেনেন এবং তার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, এবং রেখে দিলে জিনিসটির নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা তুলে মালিকের কাছে পৌঁছে দিবেন । আর যদি এই আশা থাকে যে মালিক নিজেই এসে খুঁজে নেবেন, সেই সুযোগ থাকে, তাহলে তা না তুললেও চলবে। তবে যদি মালিককে না চেনেন, এবং রেখে দিলে জিনিসটির নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা তুলে নিবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে তা "লুকতা" তথা গুম হওয়া জিনিস হিসেবে গণ্য হবে। আর লুকতার বিধান হলো, তা মালিকের কাছে পৌঁছানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা, জনসমাগমের জায়গায় বা সম্ভাব্য স্থানগুলিতে ঘোষণা দেওয়া। যদি মালিককে না পাওয়া যায় এবং এই ধারণা হয় যে মালিক তা নিতে আর আসবেন না এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন, যদি তিনি গরিব তথা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন, তবে তিনি তা নিজেই ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি তিনি গরিব না হন, তাহলে নিজে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। বরং কোন মিসকিন বা ফকিরকে দিয়ে দিতে হবে। নিজে ঋণ হিসেবে নিয়ে পরবর্তীতে সদকা করে দেয়ার নিয়তে রেখে দেয়ার সুযোগ নাই। উল্লেখ্য যেঃ ঐ পথে পাওয়া বস্তু সদকা করার পর বা নিজে গরিব হওয়ার কারণে তা ব্যবহার করার পরে মালিক এলে এবং তার জিনিস বা টাকার দাবি করেন, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি আখেরাতে সাওয়াবের অধিকারী হবেন। অবশ্য যদি কেউ কোনো গুম হওয়া জিনিস নিরাপত্তার জন্য তুলে নেয় এবং তা রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, তারপরেও যদি তা চুরি হয়ে যায়, তবে এটি তার ত্রুটি বলে গন্য হবে না এবং ধরে নেয়া হবে যে এই লুকতা তার কাছে আমানত ছিল; সুতরাং তার ওপর ক্ষতিপূরণের দায় থাকবে না। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। অনুরুপভাবে যদি কেউ হারিয়ে হওয়া জিনিস নিরাপত্তার জন্য তুলে নেয় এবং পরে সেই ব্যক্তি মারা যান, তবে তার ওয়ারিশদের (উত্তরাধিকারীদের) দায়িত্ব হবে সেই পাওয়া জিনিসটি সংরক্ষণ করা বা ঘোষণা দিয়ে মালিক বা তার উত্তরাধিকারী খুঁজে বের করা। যদি সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তা সদকা করা বাধ্যতামূলক। যদি ওয়ারিশরা গরিব হন, তাহলে তারা তা ব্যবহার করতে পারবে, নতুবা পারবে না।
বিস্তারিত পড়ুনপ্রচলিত ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, অলিম্পিক খেলাধুলার হুকুম এবং তা থেকে উপার্জনের বিধান
২৭ এপ্রিল, ২০২৫
ভূমিকাঃ সাধারণভাবে শরীয়ত ফুটবল ক্রিকেট বা অন্য খেলাগুলাকে ঢালাওভাবে নিষিদ্ধ করেনি। বরং যদি শরীয়তের নিয়ম-কানুন রক্ষা করা হয় তাহলে এই খেলা জায়েজ হবে তো বটেই ক্ষেত্র বিশেষ সওয়াবের কাজ হবে। যদি আপনার এই খেলা শারিরিক ব্যায়াম তথা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য হয়ে থাকে অথবা ধর্মীয় এবং পার্থিব কোন উপকারিতা লাভের জন্য হয়ে থাকে অথবা কমপক্ষে মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি দুর করার জন্য খেলা হয়ে থাকে তাহলে এই খেলা জায়েজ হবে নিঃসন্দেহে। বরং দ্বীনি স্বার্থে শরীর চাঙ্গা করার জন্য খেললে সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ! তার জন্য শর্তঃ (১) উক্ত খেলাধুলার মধ্যে কোনপ্রকার গোনাহ অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। যেমন সেটা সুদ/ঘুষ/জুয়ার ভিত্তিতে হতে পারবে না, খেলাধুলায় কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করা যাবে না। যেমনটা জয়ী হলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অঘটন ঘটিয়ে দেয়! মারারামারি বিভিন্ন ফেৎনার অনুপ্রবেশ বন্ধ হতে হবে। (২) খেলায় জড়িত থাকার কারণে শরীয়তের যে কোন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কোন হুকুমের পরিপন্থী হতে পারবে না। তার কারণে দ্বীনের জরুরী বিষয় বাধাগ্রস্ত হতে পারবে না। বিশেষ করে নামাজ রোজা ইত্যাদি বিষয়গুলো যার উপর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত, যা দ্বীনের শ্রেষ্ঠ স্তম্ভ তা বাধাগ্রস্থ হতে পারবে না। খেলার সুবাদে নামাজ কাযা, রোজা ভঙ্গ করলে তা খেলা কখনোই বৈধ হবে না। গানবাদ্য নর্তকীর নৃত্য অশ্লীলতার অনুপ্রবেশ হতে পারবে না। বিশেষ করে নিজের চোখের হেফাজত করতে হবে। কোনপ্রকার বেপর্দা হওয়া যাবে না। সতর বের করা যাবে না। ফুটবল খেলায় হাটুর উপরে কাপড় বের করে খেলা হয় যা সুস্পষ্ট হারাম হবে। (৩) খেলাধুলায় জড়িত থাকার কারণে যদি দ্বীন থেকে দুরে সরে যায়, মসজিদ বাদ দিয়ে স্টেডিয়ামুখী হয় তাহলে ঐ খেলার উপর আল্লাহর গজব!! খেলায় জড়িত থাকার কারণে দ্বীনি এবং দুনিয়াবি জরুরী কাজগুলো ব্যাহত হতে পারবে না। যেমন খেলাধুলার কারণে পরিবারের অধিকারগুলো আদায় না করলে খেলাটা অন্যায় হবে অবৈধ হবে! উপরোক্ত শর্তগুলো যদি পরিপূর্ণরুপে পাওয়া যায় তবেই খেলা বৈধ!! যেমন বিভিন্ন মাদরাসায় আসরের পরে ক্রিকেট/ফুটবল খেলে, গ্রামে খেলে। উল্লেখিত শর্ত পূরণ হলে খেলা জায়েজ। মৌলিক কথায় ফিরে আসিঃ বলুন তোঃ ক্রিকেট ফুটবল বা প্রচলিত কোন খেলার মধ্যে উক্ত শর্তগুলির প্রতি লক্ষ করে খেলাধুলা করা হয়? কোন খেলা ইসলামি মুলনীতি অনুযায়ী খেলা হয়? কোন খেলা শরীয়তের দলীলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? অন্তত ১৫/১৬ টি কারণ রয়েছে যার কারণে খেলার বৈধতার দিক থাকলেও উক্ত ১৫/১৬ টি কারণে তা হারাম হয়ে যাচ্ছে! কারণগুলো লক্ষ করুনঃ (১) অধিকাংশ খেলাধুলা জুয়ার উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। জুয়া ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল খেলার কল্পনা করা দুষ্কর! বড় বড় টুর্ণামেন্ট বা ঘরোয়া লীগ বা যাইই বলেন : সকল দলের এন্ট্রি ফি দিতে হয় : আর কাপ জিতলে একটি দল পাবে!! এন্ট্রি ফির টাকা সবাই জমা দেয়, এটি আবার টুর্ণামেন্টের বিভিন্ন কাজে খরচ হয়, যেমন : প্রাইজমানিসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে। সবাই টাকা দিয়ে শরিক হচ্ছে, কিন্তু পুরস্কার পাচ্ছে একটি দল! এটাকে শরীয়তে জুয়া বলে। ইসলামী শরীয়তে যে সমস্ত বিষয় কঠোরভাবে নিষেধ তার অন্যতম একটি বিষয় হলো জুয়া! আল্লাহ কুরআনে বলেনঃ انما الخمر والميسر.....رجس من عمل الشيطا فاجتنبوه. অনুবাদঃ নিশ্চয়ই জুয়া হলো শয়তানের নাপাক নিকৃষ্ট কাজের অন্তর্ভুক্ত। অবশ্যই তোমরা তা পরিহার করো। (২) একজন মুমিনের জীবনে ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো নামাজ। খেলাধুলার কারণে চুক্তিবদ্ধ হতে হয় যে খেলা চলাকালীন নামাজ পড়া যাবে না, অথবা পড়ার অনুমতি থাকে না। ডে নাইট ম্যাচগুলো শতভাগ নামাজ পড়া হয় না। টেস্ট বা টি টুয়েন্টি অথবা ফুটবল যাই বলুন নামাজ পড়া হয় না ইচ্ছাকৃত! একটি অনর্থক কাজ খেলাধুলার জন্য নামাজ মিস হয়ে যাচ্ছে! আমরা তো এটাও দেখেছি খেলার উদ্বোধনের জন্য ঢাকার মসজিদের আযান বন্ধ রাখা হয়েছিল! আল্লাহ কুরআনে বলেনঃ ان الصلاۃ كانت علي المومنين كتابا موقوتا . অনুবাদঃ নিশ্চয়ই মুমিনের জন্য তার নামাজকে যথাযথ সময়ে আদায় করা ফরজ করা হয়েছে। لا طاعۃ لمخلوق في معصيۃ خالق . পাপ কাজে মাখলুকের আনুগত্য করা যাবে না। তাই খেলার কারণে ম্যানেজমেন্টের কথা মেনে নামাজ বাদ দেয়া বৈধ নয়! (৩) ইসলামের তৃতীয় শ্রেষ্ট রুকন বা স্তম্ভ হলো রোযা রাখা। শতভাগের ৮০% ক্রিকেটার রোজা রাখে না খেলাধুলার কারণে! يا ايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام অনুবাদঃ হে ঈমানদারগন! তোমাদের উপর তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত রোজা ফরজ করা হয়েছে। (৪) প্রাপ্ত অর্থের অধিকাংশশ টাকা সুদ/ঘুষ/মদ বিক্রি অবৈধ পন্থার অনুদান থেকে! الذين ياكلون الربي لا يقومون الا كما يقوموا الذی يتخبته الشيطان من المس. যারা সুদ খায় তারা কেয়ামতে এমনভাবে দাড়াবে যেন শয়তান তাকে স্পর্শ করার দ্বারা বিকলাঙ্গ করে দিয়েছে! (৫) সমস্ত ইবাদাতে অমনোযোগিতা সৃষ্টি হয়! অবসাদ পেয়ে বসে। অবসরে আল্লাহর কথা স্বরণ হয় না। ধ্যান ধারণা হয় খেলাধুলা নিয়ে। দ্বীন বিমুখ হয়ে খেলার প্রতি ঝোক বেড়ে যায়। দ্বীন থেকে দুরে সরে যায়। আখেরাত বিমুখ হয়ে যায়। اذكر اﷲ ذكرا كثيرا অনুবাদঃ সদা আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করো! (৬) খেলাধুলা মুসলিমের আবিষ্কার নয়। বরং খৃষ্টীয় কালচার। শরীর চর্চার জন্য উল্লেখিত শর্তাবলী মেনে খেললেই যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু সেসব বাদ দিয়ে আজ খেলাকে পেশা আর সংস্কৃতি হিসেবে গ্রহণ করেছি আমরা। ইহুদি খৃষ্টানের কালচার আমরা প্রচার প্রসার করছি। خالفوا اليود والنصاري . তোমরা ইহুদি নাসারাদের বিরোধীতা করো, তাদের অনুসরণ কখনোই নয়। (৭) জিন্দেগীর সবচেয়ে মুল্যবান সময় অনর্থক কাজে ব্যয় হয়। যার মধ্যে দ্বীন দুনিয়ার ফায়দা নেই। কোন আমল ঈমান শিখতে পারে না। তার গোটা জীবন খেলাধুলা নিয়ে গবেষণায় কেটে যায়। সর্বদাই খেলাধুলার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে! الذين ضل سعيهم في الحياۃ الدنيا وهم يحسبون انهم يحسنون صنعا . তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ: যারা দুনিয়ায় অনর্থক কাজে সময় ব্যায় করতেছে অথচ তারা সবাই ভাবতেছে যে তারা ভালো কাজ করতেছে! (৮) শতভাগ পর্দা লঙ্ঘন হয়। বেপর্দা অশ্লীলতা বেহায়া নর্তকীর নৃত্য ড্যান্স, ওপেন সেক্সুয়াল সিন এগুলা অহরহ!! অর্ধনগ্ন যুবতী নারীর ইন্টারভিউ দিতে হয়! উপস্থাপিকা! سۃر الرجل ما بين السرۃ الي الركبۃ . يا علي ! لا تتبع نظرتك فان لك الاولي . পুরুষের সতর হলো : নাভির থেকে নিয়ে হাটু পর্যন্ত! (৯) গজবের টুর্ণামেন্ট শুরু হয় গানবাদ্য দ্বারা। যেটা শয়তানের হাতিয়ার। সঙ্গে উপস্থিত আম জনতাও নেশায় বুঁদ হয়ে যায়। তারাও গোনাহে শামিল হয়ে যায়। আতশবাজি আরো ভয়াবহ কাজ হয় যা গজবের কারণ! ومن اناس من يشتري لهو الحديث ليضل عن سبيل اﷲ بغير علم ويتخذها هزوا . ان اتغني مزمار الشياطين . কিছু মানুষ এমন আছে : যারা গানবাদ্য ক্রয় করে আমদানি করে যেন লোকদের পথভ্রষ্ট করতে পারে অজ্ঞতাবশত এটা! এবং দ্বীনকে তারা তামাশার বস্তু ধর্তব্য করে! গানবাদ্য হলো শয়তানের হাতিয়ার। عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ فِى هَذِهِ الْاُمّةِ خَسْفٌ وقَذْفٌ وَمَسْخٌ وَذَلِكَ اِذَا شَرِبُوْا الْخُمُوْرَ واتَّخَذُوْا القَيْنَاتِ وَضَرَبُوْا بِالْمَعَازِفِ. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া। عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ. বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ: রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা ( খেলাধুলা) বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ (বুখারী) (১০) নিজে ক্রিকেট /ফুটবল খেলার কারণে বংশ পরম্পরায় এই খেলার সূত্র চালু হয়ে যায়। ছেলে থেকে নাতি/তার নিন্ম বংশধর এভাবে ক্রমবিকাশ হতে থাকে নিজের গোনাহের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে অবিরত। من سن في الاسلا سنۃ سيءۃ فعمل بعده كتب عليه مثل وزر من عمل بها ولا ينقص من اوزارهم شيءا. যে ব্যক্তি একটি পাপ কাজের পথ দেখিয়ে যায় : সেটা দেখে যে ব্যক্তি পাপ করে তখন ঐ ব্যক্তির গোনাহ পথদেখানেওয়ালা ব্যক্তির ঘাড়ে যায়। কারোর গোনাহে কমতি হয় না। (১১) পুরো দুনিয়া লাইভ দেখে, তারাও গোনাহে লিপ্ত হয়। বেপর্দার সয়লাবে তারা হারিয়ে যায়। নেশায় মাতাল হয়ে যায়। গানবাদ্য তারা হাতে তালি দেয়!! انساكم كما نسيتم لقاء يمكم هذا. তোমরা দুনিয়াতে আমাকে ভুলেছো আমি আজ কিয়ামতে তোমাকে ভুলে যাব! (১২) সমর্থকদেরর মধ্যে খেলাধুলার সাপোর্ট নিয়ে দাঙ্গামা বাধে। গীবত করে একে অন্যের। বিভেদ মারামারির সূত্রপাত হয়। এমনকি রক্তারক্তি হবার ঘটনা কম নয়। ولا تفسدوا في الارض بعد اصلاحها . ان الله لا يحب المحسنين . যমিনের মধ্যে ফাসাদ ঝগড়া করো না, আল্লাহ ঝগড়া ফাসাদকারীদের পছন্দ করেন না। (১৩) বিধর্মীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। তাদের লাইফস্টাইল ফলো করে জনতা। তাদের মত চুল কাটে, পোষাক পরিধান করে। তাদের কারণে সাধারণ পাবলিকের আমল নষ্ট হয়। . من تشبه بقوم فهو منهم যে ব্যক্তি বিধর্মীর সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। (১৪) নামাজে মন বসে না। স্কোর দেখতে মন ছটফট করে। নামাজ শেষ করেই স্কোর দেখে প্রশান্তি লাভ করে। রাত জেগে খেলাধুলা করার কারণে, খেলাধুলা দেখার কারণে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়! নামাজ পড়া হয় না! ان الصلاۃ تنهي عن الفحشاء والمنكر নামাজের মত নামাজ হলে তা সমস্ত পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে! (১৫) ইহুদি খৃষ্টানের সঙ্গে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব হয়। খেলাধুলার সুবাদে বিষয়টি অতি স্বাভাবিক। لا تتخذوا اليود والنصاري اولياء ইহুদি খৃষ্টানকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করিও না । (১৬) টুর্ণামেন্ট বা লীগের সুবাদে প্রতিষ্ঠিত জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠান নড়েচড়ে বসে। দুনিয়া জুড়ে অনলাইনে জুয়ার ভয়াল থাবায় ডুবে যায়!! নিঃস্ব হয়ে যায়। পুরো শরীয়ত বিঘ্নিত হলো!! واتقوا اﷲ . সকল কাজে আল্লাহকে ভয় করো! উপরোক্ত যে কারণগুলো বলা হলো : সমস্ত কারণ পর্যবেক্ষণ করে কুরআন সুন্নাহ এবং উলামায়ে কেরামের চুড়ান্ত রায় এটাঃ উক্ত ঈমান বিধ্বংসী দ্বীন বিরোধী কারণগুলি বিবেচনা করে এমন পদ্ধতিতে খেলা সম্পুর্ণ হারাম!! কারণ খেলার দ্বারা দ্বীন ধ্বংসের পথে। ব্যক্তির জিন্দেগী বরবাদ। তাই যেই খেলার দ্বারা দ্বীন বাধাগ্রস্থ হয় শরীয়ত কখনোই তা খেলার অনুমোদন করে না। তা অকাট্য হারাম। আর যে বিষয় অকাট্য হারাম হয় তার থেকে উপার্জন করা কুরআন সুন্নাহর আলোকে এবং উম্মতের ইমামদের মতে তা সম্পুর্ণ হারাম উপার্জন বলে বিবেচিত হবে। কারণ খেলাটাকে শরীয়ত কোন "গ্রহনযোগ্য কাজ" হিসেবে ধর্তব্য করেনি! বরং অনর্থক ফালতু কাজ হিসেবে বিবেচনা করেছে। আর ফালতু অনর্থক কাজ কে নিজের উপার্জনের পেশা বানিয়ে নেয়া এবং ঐ অনর্থক কাজ করার জন্য শরীয়তকে জবাই করাটা কস্মিনকালেও ইসলামী শরীয়ত বৈধতা প্রদান করে না।
বিস্তারিত পড়ুনবিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ চতুর্থ (শেষ) পর্ব
১৬ এপ্রিল, ২০২৫
চতুর্থ বিষয়ঃ অবশ্য কেউ কেউ বলার চেস্টা করেন যে, বিটকয়েন যদিও সরাসরি টাকা নয় কিন্তু বিটকয়েন টোকেন হিসেবে তো ব্যবহার হতে পারে। আমাদের দেশে টাকা কিন্তু দুই রকম আছে, একটা সরকারি নোট, একটা ব্যাংক নোট। আমাদের ১০০০ বা ৫০০ টাকার যেসব নোট দেখি এগুলো কিন্তু মূল টাকা না, সরকারি টাকাও না। মুল টাকাগুলোর মধ্যে বাহককে... লেখাটা থাকে না। এবং এই নোটগুলোর কিন্তু বাস্তব কোন ভ্যালু নাই, যে কারণে সরকার ইচ্ছামতন প্রতি বছর টাকা ছাপাচ্ছে আর মুদ্রাস্ফীতি বাড়াচ্ছে। এর জবাব আগেই গিয়েছে। কোন মুদ্রা যথাযথভাবে মুদ্রার হওয়ার জন্য দুটি শর্ত একেবারে জরুরি। (১) রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং তার ব্যাবহারযোগ্য হওয়া। (২) জনগণ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করা। ৫০০/১০০০ টাকা বাংলাদেশের এগুলোর সরকারি স্বীকৃতি এবং ব্যাবহারযোগ্যতা তো আছেই, সঙ্গে জনগনের গ্রহণ করাটাও আছে। অর্থাৎ কোন বস্তু মুদ্রা কিংবা মূল্যমান হওয়ার জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও ভ্যালু থাকতে হবে। যেমন আমাদের দেশের একশ টাকায় ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে একশ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে’ এ বাক্য লেখার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া আছে। এখন রাষ্ট্র কর্তৃক এ স্বীকৃতি বিলুপ্ত করলে তা মূল্যমান হারিয়ে কেবল একটি কাগজের টুকরায় পরিণত হবে। কাউকে ফ্রি দিলেও নিতে চাইবে না। ‘চাহিবামাত্র...’ এ বাক্যটিই রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি। বিটকয়েন টোকেন হিসেবেও জায়েজ হবে না। এর কারণ একাধিকঃ এর প্রচলণকারী কারা জানা নাই, অজ্ঞাত। পরিচালনা কমিটি নাই। এটির কোন বাস্তবিক অস্তিত্ব নেই, স্রেফ স্ক্রিন ভিউ। এটি সবার কাছে সহজলভ্য না, ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারিভাবে এগুলোর কোন প্রচারণা নেই, বৈধতাও নেই। সর্বশেষ এটি টোকেন হলেও এর প্রকাশকের অজ্ঞতা, এর ভবিষ্যৎ বিষয়ে অজ্ঞতা, এর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রকাশক না থাকা, কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্বশীল না থাকা, রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ না থাকা, ব্যাপকভাবে স্প্যাকুলেশন হওয়ায় এর মূল্য স্থির না থাকা এবং আইনবহির্ভূত কাজে অধিক ব্যবহৃত হওয়ায় এটি ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যমানবিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) হয় না; সঙ্গে জুয়া তো আছেই। তাই উসুলে শরীআহ মতে এটি মুল্যমানই রাখবে না ধোঁকা প্রতারণার সমুহ সম্ভাবনার কারণে। কিছু কিছু ভাই বলেন - হাতে মাল না থাকার কারনে যে লেনদেন নিষিদ্ধ হয়, এই সুত্রে সফটওয়্যার, পিডিএফ বই, অনলাইন কোর্স কেনাবেচাও নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। কারন বাস্তবে এটা কবজ করা যায় না। অনুরুপভাবে এখন কিছু দেশের সরকার বিটকয়েনের লেনদেন অনুমোদন দিয়েছে। তাহলে বিটকয়েনের হুকুম সেখানে কি হবে? তাছাড়া গতকয়েক বছরে বাংলাদেশের টাকার তুলনায় বিটকয়েনের রেট কম অস্থির ছিল। তাই এটি জায়েজ হওয়ার কথা! উপরের সবকিছুই স্রেফ যুক্তি। শরয়ী উসুলের আলোকে তা টিকবে না। কিন্তু শরীয়ত এখানেও কথা বলেছে। এগুলোকে বই, পিডিএফ এর সত্ত্বাধিকারীর বিষয়টি শরীয়তে بيع الحقوق، حقوق الطبع، ইত্যাদি পরিভাষায় নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ নিজেদের কোন পণ্যের সত্ত্বাধিকারী বিক্রয় করা, যেমন প্রকাশনা সত্ত্বাধিকারী, কোর্সের সত্ত্বাধিকারী ইত্যাদি বিক্রি করা। এগুলা জায়েজ। কারণ বর্তমানে এগুলা পণ্যের স্থানে। এব্যাপারে বুহুস ফি ক্বযায়া মুআসিরাহ এবং ফিক্বহুল বুয়ু আল্লামা মুফতি তাক্বি উসমানি সাহেব আলোচনা করেছেন। এসব সফটওয়্যার, পিডিএফ এগুলো বর্তমানে মালে মুতাক্বাওওয়িম তথা মুল্যমান বলেছেন, সমস্ত ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন। তাই বিক্রিতে সমস্যা নাই। আর কিছু কিছু রাষ্ট্র যদিও বৈধতা দেয়, কিন্তু সেটি মুল্যমান হতে হলে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা দরকার, নতুবা কিছু দেশে চালু হলেই তা মুল্যমান স্বীকৃতি লাভ করে না। এবং তা ধোঁকা, প্রতারণা মুক্ত থাকতে হবে, প্রকাশকের অজ্ঞতাই বড় রিস্কের কারণ! আর এ কথা সঠিক যে টাকার তুলনায় গত একবছর বিটকয়েনের রেট কম আপডাউন করেছিলো। কিন্তু বিটকয়েনের রেট আপডাউনের অবস্থা সবসময়ই ভয়াবহ। এর অস্তিত্ব না থাকার কারণে এখানে বিনিয়োগ পুরাটাই জুয়া। পঞ্চম বিষয়ঃ বিটকয়েন তথা ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে বিশ্বের গ্রহণযোগ্য ফতোয়া বিভাগগুলো যেমন বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ, পাকিস্তানের জামিয়া বানুরি টাউন, মিশরের দারুল ইফতাসহ অসংখ্য মুফতি উলামায়ে কেরাম এটাকে নাজায়েজ বলেছেন। "তেজারত কা মাসায়েল কা এনাসাইক্লোপিডিয়া" এর দ্বিতীয় খণ্ডের ৯২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে : آج کل عالمی مارکیٹ میں ایک کوئن رائج ہے جسے ’’بٹ کوئن‘‘ یا ’’ڈیجیٹل کرنسی‘‘ کہتے ہیں،یہ ایک محض فرضی کرنسی ہے، اس میں حقیقی کرنسی کے بنیادی اوصاف اور شرائط بالکل موجود نہیں ہیں،لہٰذا موجودہ زمانہ میں ’’کوئن‘‘ یا ’’ ڈیجیٹل کرنسی‘‘ کی خرید وفروخت کے نام سے انٹر نیٹ پر اور الیکٹرونک مارکیٹ میں جو کاروبار چل رہا ہے، وہ حلال اور جائز نہیں ہے، وہ محض دھوکہ ہے، اس میں حقیقت میں کوئی مبیع وغیرہ مادی چیز نہیں ہوتی ، اور اس میں قبضہ بھی نہیں ہوتا، صرف اکاؤنٹ میں کچھ عدد آجاتے ہیں، اور یہ فاریکس ٹریڈنگ کی طرح سود اور جوے کی ایک شکل ہے؛ اس لیے ’’بٹ کوئن‘‘ یا کسی بھی ’’ڈیجیٹل کرنسی‘‘ کے نام سے نہاد کاروبار میں پیسے لگانا اور خرید وفروخت میں شامل ہونا جائز نہیں ہے۔ ‘‘(ص:٩٢،ج:٢،حرف باء،بٹ کوئن،ط:بیت العمار،کراچی) "বর্তমানে বিশ্ববাজারে একটি মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে, যাকে ‘বিটকয়েন’ বা ‘ডিজিটাল কারেন্সি’ বলা হয়। এটি এক প্রকার কাল্পনিক মুদ্রা, যার মধ্যে বাস্তব মুদ্রার প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য ও শর্ত নেই। এ কারণে বর্তমানে ‘কয়েন’ বা ‘ডিজিটাল কারেন্সি’ নামে ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক বাজারে যে ব্যবসা চলছে, তা বৈধ নয়। এটি আসলে প্রতারণার শামিল, কারণ এতে কোনো প্রকৃত বস্তুর অস্তিত্ব নেই, এবং হস্তান্তরও সম্ভব হয় না, কেবল অ্যাকাউন্টে কিছু সংখ্যা যুক্ত হয়, যা মূলত ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো সুদ ও জুয়ার এক ধরণ। তাই ‘বিটকয়েন’ বা যেকোনো ‘ডিজিটাল কারেন্সি’তে বিনিয়োগ করা বা কেনাবেচায় অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়।" (পৃষ্ঠা: ৯২, খণ্ড: ২) দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে বিটকয়েন সম্পর্কে জানতে চাইলে লম্বা ফতোয়া প্রকাশ করেছে। বিস্তারিত বলেছে। দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছেঃ "বিটকয়েন বা অন্য কোনও ডিজিটাল মুদ্রা একটি কেবল কল্পনাপ্রসূত মুদ্রা। এর মধ্যে প্রকৃত মুদ্রার মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি নেই। বর্তমানে বটকয়েন বা ডিজিটাল মুদ্রার কেনাবেচার নামে যে ব্যবসা চলছে, তা আসলে একটি প্রতারণা; এর মধ্যে বাস্তবিকভাবে কোনও পণ্য বা বস্তু নেই এবং এই ব্যবসায়ে বেচাকেনার বৈধতার শারীয় শর্তগুলি পাওয়া যায় না। বরং এটি বাস্তবে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো সুদ এবং জুয়ার রূপ। সুতরাং, বিটকয়েন বা অন্য কোনও ডিজিটাল মুদ্রার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে চলমান এই ব্যবসা শরিয়া অনুযায়ী বৈধ নয়। অতএব, বিটকয়েন বা অন্য কোনও ডিজিটাল মুদ্রার নামের এই ব্যবসায়ে অংশগ্রহণ করা বা অন্য কাউকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে দেওয়া উচিত নয়। আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন মুদ্রাগুলি প্রকৃতপক্ষে সম্পদ নয়; এগুলি কেবল কাগজের টুকরা। এগুলোর মধ্যে যে মূল্য বা পরিচিত মূল্য আছে, তা দুই কারণে হয়; প্রথমত, এর পেছনে দেশের অর্থনৈতিক উপাদান থাকে; এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অবনতি মুদ্রার মূল্যকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ, অর্থনীতির কারণেই দেশের মুদ্রার মূল্য বাড়ে এবং কমে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি দেশ জনগণের জন্য তাদের মুদ্রার জন্য একটি গ্যারান্টি এবং দায়িত্বশীল থাকে; এ কারণেই যখন একটি দেশ তাদের কোনো মুদ্রা বন্ধ করে, তখন মুদ্রাটি কেবল কাগজের নোট হয়ে যায় এবং এর কোনো মূল্য বা মর্যাদা থাকে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ডিজিটাল মুদ্রার পেছনে কী আছে যার কারণে এর মূল্য নির্ধারিত হয় এবং এর উন্নতি ও অবনতি থেকে মুদ্রার মূল্য বাড়ে এবং কমে? সেই সঙ্গে, এই মুদ্রার গ্যারান্টি ও দায়িত্ব কে? এবং মুদ্রার পেছনে যে কিছু থাকে, তা কি সত্যিকার অর্থে গ্যারান্টির নিয়ন্ত্রণে আছে, নাকি এটি কেবল কাল্পনিক ও প্রতীকী? ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখাগুলি পড়ার পর এবং এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পর, জানা গেল যে ডিজিটাল মুদ্রা কেবল একটি কাল্পনিক বিষয়। এর শিরোনাম হাতির দাঁতের মতো, যা কেবল দেখানোর জন্য; এবং বাস্তবে এটি ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো ইন্টারনেটে চলমান জুয়া ও সুদের ব্যবসার একটি রূপ। এতে প্রকৃতপক্ষে কোনো ক্রিয়াকলাপ বা পণ্য নেই এবং এই ব্যবসায় বাণিজ্যের বৈধতা সম্পর্কিত শরীয়তের শর্তাবলিও নেই। সুতরাং সংক্ষেপে বলা যায় যে, বিটকয়েন বা অন্য কোনো ডিজিটাল মুদ্রা কেবল একটি কাল্পনিক মুদ্রা, এটি বাস্তব এবং প্রকৃত মুদ্রা নয়। এছাড়া কোনো ডিজিটাল মুদ্রায় বাস্তব মুদ্রার মৌলিক গুণাবলী নেই। ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবসায় জুয়া ও সুদের উপাদান স্পষ্টভাবে দেখা যায়; তাই বিটকয়েন বা অন্য কোনো ডিজিটাল মুদ্রার কেনাবেচা বৈধ নয়। একইভাবে, বিটকয়েন বা অন্য কোনো ডিজিটাল মুদ্রার বাণিজ্যও ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো অবৈধ; সুতরাং এই ব্যবসা থেকে বিরত থাকা উচিত। বাস্তবে এটি ফরেক্স ট্রেডিং ইত্যাদির মতো ইন্টারনেটে চলমান জুয়া ও সুদের ব্যবসার একটি রূপ। এতে প্রকৃতপক্ষে কোনো পণ্য বা সম্পদ নেই এবং এর ব্যবসায় বাণিজ্যের বৈধতা সম্পর্কিত শরীয়তের শর্তাবলিও নেই। সুতরাং, যদি প্রকৃতপক্ষে এটি এমনটাই হয় (যেমন প্রকাশ্যে বোঝা যাচ্ছে), তাহলে নির্দেশ হবে যে ডিজিটাল মুদ্রায় টাকা লগ্নি করা বা এর জন্য কাউকে কোম্পানির সদস্য হিসেবে যুক্ত করা বৈধ নয়; কারণ ইসলামিতে জুয়া এবং সুদের ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও অবৈধ। তবে, যদি এই মুদ্রা সত্যিকার অর্থে একটি মুদ্রা হয়ে যায়, কেবল ডিজিটাল না থাকে এবং এর প্রকৃতি সম্পূর্ণভাবে প্রকৃত মুদ্রার মতো হয়ে যায়, তবে এর নিয়ম সাধারণ মুদ্রার মতো হবে।" (১) তবে বিটকয়েনের লেনদেন জায়েজ হতে হলে কিছু শর্ত আছেঃ রাষ্ট্রীয়ভাবে মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত হতে হবে। জনসাধারন এই লেনদেনের ধোঁকা, প্রতারণা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ হতে হবে। সহজলভ্য হতে হবে। রেট অস্বাভাবিক রকমের আপডাউন হতে পারবে না, স্থিতিশীল হতে হবে। এর প্রকাশক অজ্ঞাত হতে পারবে না। উপরোক্ত শর্তগুলি পরিপূর্ণ পেতে হবে। সবকিছু পর্যালোচনার পরে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যেঃ বিটকয়েন তথা ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং এজাতীয় ডিজিটাল কয়েনের লেনদেন মৌলিকভাবে জায়েজ নাই। তবে উপরোক্ত শর্তগুলি পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া গেলে এটিকে মুদ্রা বলে গন্য করা হবে এবং শরয়ী নীতিমালা অনুযায়ি লেনদেন বৈধ হবে।
বিস্তারিত পড়ুনবিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ তৃতীয় পর্ব
১৬ এপ্রিল, ২০২৫
বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ দ্বিতীয় পর্বে বিটকয়েন কেন মুদ্রা নয়, কি কি অসঙ্গতি রয়েছে সেসব বিষয়গুলি তুলে ধরেছি। প্রথম বিষয় হচ্ছে - ফুক্বাহায়ে কেরাম মুদ্রা গণ্য হওয়ার জন্য কিছু শর্ত করেন। তারমধ্যে যেমন - জনসাধারণের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এর প্রচলন শুরু হবে। অর্থাৎ এটির ব্যাপক প্রচলন হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সেটির বৈধতা থাকার কারণে। খোদ রাষ্ট্রই কোন বস্তুকে মুদ্রার জন্য আখ্যায়িত করবে। যেমন আমাদের দেশে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকাকে মুদ্রা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর মুদ্রা বা টাকা হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য এটা অন্যতম শর্ত। এই জন্য হানাফি মাজহাবের এ্যানাসাইক্লোপিডিয়া খ্যাত কিতাব "আল হিদায়া" গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে এই বিষয়ে বলা হয়েছেঃ قوله: ويجوز بيع الفلس بالفلسين باعيانهما عند أبى حنيفة وابى يوسف وقال محمد لا يجوز لأن الثمنية ثبت باصطلاح الكل... بخلاف النقود لأنها للثمنية خلقة অর্থাৎ মুদ্রা পরিগনিত হবে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচলন এবং স্বীকৃতির মাধ্যমে। এটা ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ এর মত। (আল হিদায়া : ৮১/৩) উল্লেখিত শর্তাবলির কোনটিই পাওয়া যায় না এখানে। তাই এটি মুদ্রাই নয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে - এছাড়াও যেটি মুদ্রা হবে, তার অন্যতম একটি বিষয় হলো সেটি মৌলিকভাবে ধোঁকা, প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকবে, কোন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে না। কিন্তু বিটকয়েন এটি জুয়ার মতই এবং ধোঁকা খাওয়া প্রতারিত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি রাতারাতি পরিবর্তন হয়,দাম আকাশছোয়া হয়, আবার কমে যায়, এবং এই কয়েন অনেক সময় হ্যাক হয়ে যায়। অথচ এরকম লেনদেন মানব জীবনে বড় বিপর্যয়ের কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ قال اللّٰہ تعالی: یٰأیھا الذین آمنوا إنما الخمر والمیسر والأنصاب والأزلام رجس من عمل الشیطن فاجتنبوہ لعلکم تفلحون ( المائدة، ۹۰) “হে বিশ্বাসীরা! নিঃসন্দেহে মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা এবং ভাগ্য নির্ধারণের তাস-প্রথা শয়তানের কাজ; সুতরাং এগুলি থেকে দূরে থাকো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।” (সুরা মায়েদা: ৯০) অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَلَا تَأْکُلُوْا أَمْوَالَکُمْ بَیْنَکُمْ بِالْبَاطِلِ﴾ أي بالحرام، یعني بالربا، والقمار، والغصب والسرقة (معالم التنزیل ۲: ۵۰) “আর নিজেদের মধ্যে অগ্রহণযোগ্য উপায়ে (অর্থাৎ হারাম উপায়ে) তোমাদের সম্পদ খাবে না।” অর্থাৎ সুদ, জুয়া, দখল ও চুরি। (মাআলিমুত তানযিল : ৫০/২) জুয়ার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লামা শামি রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ، لأن القمار من القمر الذي یزداد تارةً وینقص أخریٰ۔ وسمی القمار قمارًا؛ لأن کل واحد من المقامرین ممن یجوز أن یذہب مالہ إلی صاحبہ، ویجوز أن یستفید مال صاحبہ، وہو حرام بالنص (رد المحتار، کتاب الحظر والإباحة، باب الاستبراء، فصل في البیع، ۹: ۵۷۷، ط: مکتبة زکریا) কারণ জুয়া এমন একটি বিষয়, যা একবার বাড়ে, একবার কমে। জুয়াকে জুয়া বলা হয়; কারণ প্রতিটি জুয়াড়ির জন্য অনুমোদিত যে তার সম্পদ অন্যের কাছে চলে যেতে পারে এবং অন্যের সম্পদ থেকে লাভ গ্রহণ করা যেতে পারে। এবং এটি স্পষ্টতই হারাম। (রদ্দুল মুহতার: ৫৭৭/৯) তৃতীয় আরেকটি বিষয় হলো - বিটকয়েনকে যদি মুদ্রা ধরেও নিই (যদিও এটি মুদ্রা নয়) এবং টাকার বিনিময়ে যদি এটাকে ক্রয় করতে হয়, তাহলে এটি শরয়ী পরিভাষায় "বাইয়ুস সারফ" তথা যে চুক্তিতে উভয় পক্ষেই মুদ্রা-দ্রব্য থাকে। এখন যদি বিটকয়েনকে বিটকয়েনের মোকাবেলায় বিক্রি করা হয় তাহলে সেখানে মজলিসেই উভয় পক্ষেরই তা হস্তগত করা আবশ্যক। যেমনটা হেদায়ার মধ্যে এসেছেঃ قوله: وعقد الصرف ما وقع على جنس الاثمان يعتبر فيه قبض العوضيه فى المجلس ....وما سواه مما فيه الربوا يعتبر فيه التعيين ولا يعتبر فيه التقابض "বাইয়ুস সারফের মধ্যে চুক্তির মজলিসেই হস্তগত করা আবশ্যক" (হেদায়া : ৮০/৩) আর বিটকয়েনকে ভিন্ন দেশের কারেন্সির বিনিময়ে বিক্রি করলে মাসআলা হলো: এক দেশের কারেন্সি আরেক দেশের কারেন্সির বিনিময়ে কম-বেশি করে বিক্রি করা জায়েজ আছে। তবে সেক্ষেত্রেও বৈঠকেই কমপক্ষে একপক্ষকে টাকাটি হস্তগত করে নিতে হবে। যদি একজনও তাদের বিনিময়কৃত কারেন্সি হস্তগত না করে, তাহলে ক্রয়-বিক্রয়টি জায়েজ হবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়িল: ৪/২৮; জাদিদ মুআমালাত কে শরয়ি আহকাম: ১-১৩৯) কিন্তু সেটা বিটকয়েনে পাওয়া যায় না। এছাড়াও বিটকয়েন কখনোই স্বর্ণ রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত নয়, যেমনটা প্রচলিত টাকা পয়সা। বিটকয়েনের ট্রানজেকশন, লেনদেন সবকিছুই অজ্ঞাত, এটি সহজলভ্য নয়,সব মানুষ এটা ব্যাবহার করতে পারে না, যেটা শরয়ী কারেন্সি নীতি বহির্ভূত বিষয়। তাছাড়া এটি অজ্ঞাত এবং এর পরিচালক জানা যায় না, তাই মানুষের সম্পদ সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যেই থাকে, যা শরীয়তে নিষেধ। যেহেতু এই মুদ্রা শুধু মাত্র ইলেক্ট্রোনিক্যালি জমা থাকে, তাই আপনার কম্পিউটার বা কম্পিউটিং ডিভাইজ যদি ক্র্যাশ হয়ে যায় কিংবা আপনি যদি অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড ভুলে যান তবে, আপনার সকল কয়েন গায়েব হয়ে যাবে। এবং আপনি কখনোই এই কয়েন গুলো রিকভার করতে পারবেন না। বিটকয়েন লেনদেন পুনরাবৃত্তি না করতে না পারা, সেবা গ্রহিতা সংশ্লিষ্ট সেবা না পেলে, মুদ্রা ফেরত পাওয়ার কোন উপায় নেই।
বিস্তারিত পড়ুনবিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ দ্বিতীয় পর্ব
১৬ এপ্রিল, ২০২৫
বিটকয়েন মুলত কি, ক্রিপ্টোকারেন্সি কাকে বলে - এসবের বাস্তবতা নিয়ে বিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ প্রথম পর্বে কমবেশি লেখা হয়েছে। এখন আমরা বিটকয়েন/ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের শরয়ী বিধান নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন এটি আদতে বৈধ নাকি অবৈধ এটি নির্ভর করবে বিটকয়েনের সত্ত্বার উপর বিবেচনা করে। এটি মুলত কি? এটি কি কোন মুদ্রা? এটি কি বিনিময়যোগ্য? ইত্যাদি বিষয় সামনে আসবে। দেখুন, এই বিটকয়েন লেনদেন বৈধ হতে হলে সবার পূর্বে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে, যাচাই করতে হবে। বিটকয়েনের ব্যাপারে যাচাই করার মত বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে। তারমধ্যে মৌলিকভাবে উল্লেখযোগ্য হলোঃ বিটকয়েন প্রকাশকের অজ্ঞতা। এটির প্রকাশক কে বা কারা, নিয়ন্ত্রন করা করে জানা যায় না। এর ভবিষ্যত বিষয়ে অজ্ঞতা। এটির স্থায়িত্ব বা গ্যারান্টি নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রকাশক নেই। কেন্দ্রিয়ভাবে এর দ্বায়ভার বা যিম্মাদারও নেই। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ নেই। এর কোন সেন্ট্রালাইজড কন্ট্রোল নাই। এতে ব্যাপকভাবে স্প্যাকুলেশন হয়। এর মূল্য স্থীর থাকে না। রাতারাতি দামে আপডাউন হয়। আইন বহির্ভূত কাজে অধিক ব্যবহার হওয়া। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে মালে মুতাকাওয়্যিম তথা মূল্যমান বিশিষ্ট হবে কিনা তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। উপরের প্রত্যেকটি বিষয়ই বিটকয়েন জায়েজ-নাজায়েজ হওয়ার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। কেননা উপরোল্লেখিত বিষয়ের দ্বারাই কোন বস্তু লেনদেনের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে অথবা হারিয়ে ফেলে। কোন বস্তু লেনদেনের যোগ্যতা অর্জন শরীয়ত সম্মত পন্থায় বিনিময় করতে গেলে তাকে মুল্যমান সমৃদ্ধ বস্তু হতে হবে। কিন্তু উক্ত বিষয়গুলো বিটকয়েনের মধ্যে পাওয়ার কারণে বিটকয়েন তার শরয়ী বিনিময় যোগ্যতা বা মুল্যমান হারিয়ে ফেলেছে। বিটকয়েন আসলে পারিভাষিক দৃষ্টিকোন তথা বাস্তবতার বিবেচনায় কোন স্বীকৃত মুদ্রা নয়। যদিও এর দ্বারা চলমান বিশ্বে লেনদেনের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। মুদ্রা হতে হলে বেশকিছু বিষয়ের প্রতি ফোকাস রাখা আবশ্যক। এব্যাপারে আইএফএ কনসালটেন্সি এর মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম হাফিজাহুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ মুদ্রার পরিচয় দিতে যেয়ে বলেনঃ অর্থনীতিবিদ ও ফকীহদের দৃষ্টিতে মুদ্রার চারটি বৈশিষ্ট্য ও অর্থনৈতিক কাজ (Economic Activities) রয়েছে। যথা- Medium of Exchange: এর সারকথা হল, যে জিনসটি মুদ্রা হবে তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে-যেকোন কিছু ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে তা কাজ করবে। Widely Acceptable: এর সারকথা হল, যে জিনিষটি মুদ্রা হবে সেটার জন্য জরুরী হল-তা ব্যাপকভাবে কোনও প্রকার দলীল-প্রমাণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য হওয়া। এর বিপরীতে কাংখিত বস্তু দিতে প্রস্তুত হওয়া। এর জন্য একটি অন্যতম শর্ত হল, দেশীয় আইনে তা অস্বীকার না করা। Standard of Value/Measure of Value: এর সারকথা হল, কাপড়ে দীর্ঘতা মিটার বা গজে মাপা হয়। চাউল-গমের পরিমাণ ওযনের মাধ্যমে জানা যায়। তেমনি এসব বস্তুর ভেল্যু পরিমাপ করার মাধ্যম হল মুদ্রা। অর্থাৎ যে জিনিষটি মুদ্রা হবে তার মধ্যে এই গুণ থাকতে হবে যে, এর মাধ্যমে বস্তুসমূহের ভ্যল্যু সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হবে। যেমন, বলা হয় ঘড়িটির মূল্য দুইশত টাকা। বইটির মূল্য তিনশত টাকা। Store of Value: এর সারকথা হল, মানুষ সম্পদ সঞ্চয় করে। ভবিষ্যতে তা কাজে আসে। সম্পদ সঞ্চয়ের জন্য এমন কিছু দরকার, যার মূল্যমান সাধারণত হ্রাস হবে না। নষ্ট হবে না। এর দ্বারা নিজ সম্পদের ভ্যাল্যু সংরক্ষণ করা যাবে। এটি করার মাধ্যম হল-মুদ্রা। এক লক্ষ টাকা আপনার কাছে থাকার অর্থই হল, এ পরিমাণ সম্পদের ভ্যাল্যু আপনার কাছে আছে। অর্থাৎ যে জিনিষটি মুদ্রা হবে তার মধ্যে এই গুণ থাকতে হবে যে, এর মাধ্যমে বস্তুসমূহের ভ্যাল্যু সহজেই সংরক্ষণ করা যায়। সারকথা, এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কোন কিছুকে মুদ্রা বলতে হলে আগে দেখতে হবে তার মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না। কোন একটা বৈশিষ্ট্য না থাকলে সেটা মুদ্রা হবে না। আলোচিত বিটকয়েনে-অন্তত আমাদের দেশে-দ্বিতীয় গুণটি নেই। কারণ এটি ব্যাপকভাবে গৃহিত নয়। সরকারীভাবেও অনুমোদিত নয়। সুতরাং একে আমাদের দেশে শরঈ ও অর্থনীতি কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই কারেন্সি বা মুদ্রা বলা যায় না। বিশেষত সরকারীভাবে এর লেনদেন আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। শরীয়তের মাসয়ালা হল, বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এর জন্য রাষ্ট্র ইসলামী হওয়া জরুরী নয়। আরো সংক্ষেপে বললে, বিটকয়েন শরঈভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার মৌলিক কারণ তিনটি। যথা- গারার তথা ধোঁকা (Uncertainty), জাহালাহ (অজ্ঞতা) ও গ্যামব্লিং। মূলত বিটকয়েনের প্রকাশকের অজ্ঞতা, এর ভবিষ্যত বিষয়ে অজ্ঞতা, এটি সেন্ট্রালাইজড না হওয়া, তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ না হওয়া থেকেই এসব গারার ও জাহালাহ-এর সৃষ্টি। নিষিদ্ধ কাজের মাধ্যম হওয়া। এসব বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি মূল্যমান বিশিষ্ট সম্পদ না হওয়া। উপরোক্ত বিষয় থেকে বেশকিছু বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। বিশেষত মুদ্রার যেই বৈশিষ্ট সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া এই মুদ্রার কোন গ্যারান্টার নাই। এই মুদ্রার দাম আপ-ডাউনের ক্ষেত্রে সীমাতিরিক্ত। স্থিতিশীল নয়। মুদ্রার যেই শরয়ী পরিচয় তার তেমন কিছুই নেই এরমধ্যে। শরীয়তে কোন পণ্যের বিনিময় মুল্য হিসেবে স্বর্ণ এবং রুপাকে মুল মুদ্রা হিসেবে ধর্তব্য করা হয়েছে। তাই ইসলামে মুদ্রা ব্যবস্থা বলতে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাকে বুঝানো হয়ে থাকে। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে নিয়ে সব খলিফা ও সুলতানদের আমলে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন ছিলো সর্বসাকুল্যে। কাগজের মুদ্রা ব্যবস্থা আসার আগ পর্যন্ত স্বর্ণের বা রূপার কয়েন ছিলো সকল মুসলিমের মুদ্রা। কাগজের মুদ্রার প্রচলন হওয়ার পর থেকে সেটা আর থাকেনি। কাগজের মুদ্রা গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পেছনে যে কারণটি ছিলো সেটি হলো, গ্রাহকের হাতে থাকে কাগজের মুদ্রাটি কেবল মূল স্বর্ণ বা রৌপ মুদ্রার এভিডেন্স। এর অর্থ হলো গ্রাহকের হাতে থাকা কাগজের মুদ্রার বিপরীতে জাতীয় ব্যাংকে স্বর্ণ বা রৌপ্য গচ্ছিত রয়েছে। তার প্রমাণ হিসাবে গ্রাহক কেবল কাগজকের এই নোটগুলো বহন করছে। এ জন্যই কাগজের নোটের মধ্যে লেখা থাকে "চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে।" সেই সাথে মূল মুদ্রা দ্বারা যেসব কাজ করা যেতো এই কাগজের মুদ্রা দ্বারা সে সব কাজ কারার এখতিয়ার জাতীয় ব্যাংক দিয়ে রেখেছে। চোর ডাকাত ছিনতাইকারীর হাত থেকে নিজের অর্থগুলোকে রক্ষা করার একটি কার্যকরী উপায় হয়ে ওঠে কাগজের মুদ্রা। তাই সকলে এটি গ্রহণ করে নেয়। বিপরীতে বিটকয়েনের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা, নিশ্চয়তা এসবের কিছুই নাই। বরং এটি শুধুমাত্র স্ক্রিনে প্রদর্শিত একটি সংখ্যা মাত্র। এটি মুলত অস্তিত্বহীন। শরীয়তে এজাতীয় জিনিস লেনদেনের মাধ্যম হতে পারে না। যেমন ফতোয়ায়ে আলমগিরির মধ্যে এসেছেঃ "أن يكون موجودا فلا ينعقد بيع المعدوم وما له خطر العدم كبيع نتاج النتاج والحمل كذا في البدائع."(ص:٢،ج:٣،کتاب البیوع، الباب الأول،ط:دار الفكر،بيروت) "যেটি ক্রয় বিক্রয় করা হবে, সেটি অস্তিত্বে থাকা, বিদ্যমান থাকা। (অর্থাৎ যে বস্তু অস্তিত্বে আছে তা-ই বিক্রয়যোগ্য।) সুতরাং অস্তিত্বহীন বস্তু বা যা অনুপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন: প্রাণীর গর্ভস্থ সন্তান বা অনাগত ফল, এসব বিক্রয় বৈধ নয়।" (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: পৃষ্ঠা: ২, খণ্ড: ৩, কিতাবুল বয়ূ, প্রথম অধ্যায়, প্রকাশক: দারুল ফিকর, বৈরুত) এজাতীয় জিনিস ক্রয় বিক্রয়ের বস্তু হতে পারে না। তাছাড়া এটি হস্তান্তরযোগ্য নয়। অথচ ক্রয় বিক্রয়ের অন্যতম শর্তই হচ্ছে যে বস্তু হস্তান্তরযোগ্য হতে হবে। যেমন বাদাইয়ুস সানাই কিতাবের মধ্যে আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ "(ومنها) أن يكون مقدور التسليم عند العقد، فإن كان معجوز التسليم عنده لا ينعقد، وإن كان مملوكا له." (بدائع الصنائع: ص:١٤٧،ج:٥،کتاب البیوع،فصل فی الشرط الذی يرجع إلي المعقود عليه،ط:دار الكتب العلمية) "ক্রয় বিক্রয় চুক্তি সহীহ হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো, চুক্তির সময় সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য থাকতে হবে। যদি চুক্তির সময় সম্পত্তি হস্তান্তরের সামর্থ্য না থাকে, তবে সেই চুক্তি বাতিল হবে, যদিও তা চুক্তিকারীর মালিকানায় থাকে।" (বাদাইয়ুস সানাই: পৃষ্ঠা: ১৪৭, খণ্ড: ৫, দারুল কুতুবুল ইলমিয়্যাহ) আল্লামা ইবনুল হুমাম রাহিমাহুল্লাহ ফাতহুল কাদিরের মধ্যে বলেছেনঃ "قال (ولا بيع الطير في الهواء) لأنه غير مملوك قبل الأخذ، وكذا لو أرسله من يده لأنه غير مقدور التسليم. (قوله ولا بيع الطير في الهواء؛ لأنه قبل أخذه غير مملوك، وبعد أخذه وإرساله غير مقدور التسليم) عقيب العقد، ثم لو قدر على التسليم بعد ذلك لا يعود إلى الجواز عند مشايخ بلخ، وعلى قول الكرخي يعود، وكذا عن الطحاوي (ص:٤١٠،ج:٦،کتاب البیوع،باب البیع الفاسد،ط:دار الفکر،بیروت) "বাতাসে থাকা পাখি বিক্রয় করা যাবে না, কারণ এটি ধরা পড়ার আগে মালিকানাধীন নয়, আর ধরার পর হাত থেকে ছেড়ে দিলে সেটি হস্তান্তরযোগ্য থাকে না। যদি পরবর্তীতে হস্তান্তর সক্ষম হয়, তবু বালখের (একটি এলাকার নাম) মাশায়েখদের মতে এটির বৈধতা ফিরে আসবে না, যদিও ইমাম কারখী ও ইমাম ত্বহাভি রাহিমাহুমাল্লাহ এর মতে ফিরে আসবে। (পৃষ্ঠা: ৪১০, খণ্ড: ৬, দারুল ফিকর, বৈরুত) আল্লামা ইবনু নুজাইম রাহিমাহুল্লাহও একই কথা বলেছেনঃ "(قوله والطير في الهواء) أي لا يجوز لأنه غير مملوك قبل الأخذ فيكون باطلا، وكذا لو باعه بعد ما أرسله من يده لأنه غير مقدور التسليم فيكون فاسدا، ولو أسلمه بعده لا يعود إلى الجواز عند مشايخ بلخ، وعلى قول الكرخي يعود، وكذا عن الطحاويأطلقه فشمل ما إذا جعل الطير مبيعا أو ثمنا."(ص:٨٠،ج:٦،کتاب البيوع،باب البيع الفاسد،ط:دار الکتاب الإسلامي) ( আল বাহরুর রায়িক: ৮০/৬, দারুল কুততুবুল ইলমিয়্যাহ) উপরের দুই রেফারেন্স দ্বারা বোঝা গেলো যে হস্তান্তরযোগ্য নয় এবং অস্তিত্বহীন জিনিস ক্রয় বিক্রয় বৈধ নয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে : এই মুদ্রার দাম আপ-ডাউনের ক্ষেত্রে সীমাতিরিক্ত। স্থিতিশীল নয়। এর ফলে গ্রাহক সর্বচ্চো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। মিনিটে মিনিটে এর দাম আপডাউন হতে পারে। আর এর দ্বারা গ্রাহকের ক্ষতি সুনিশ্চিত। আর শরীয়তে এমন কোন লেনদেনের রাস্তা রাখেনি, যার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তৃতীয় বিষয় হচ্ছেঃ বিটকয়েন কোনভাবেই মুদ্রা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। কারণ টাকা নিজেই বিনিয়োগের জায়গা হয় না, বরং টাকা দিয়েই কোন বস্তুর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়। পক্ষান্তরে আপনি যদি বিটকয়েনকে মুদ্রা বা টাকা বলে গন্য করেন: বিটকয়েন সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের জায়গা, সেখানে ইনভেস্ট করা যাচ্ছে, যেটা তাকে মুদ্রা হওয়া থেকে বের করে দেয়। তাছাড়া এর মধ্যে জুয়া বা ধোঁকার মত রয়েছে। কারণ এটি কাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে বা এর ভ্যালিডিটি কি তার কোন নির্ভরযোগ্যতা নাই। সর্বপোরি এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে বোঝা যায় যেঃ বিটকয়েনের লেনদেন শরয়ীভাবে বিধিবদ্ধ নয়, জায়েজ নয়।
বিস্তারিত পড়ুনবিটকয়েনের শরয়ী পর্যালোচনাঃ প্রথম পর্ব
১৬ এপ্রিল, ২০২৫
ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বিটকয়েনের পরিচয়, বাস্তবতা বর্তমান সময়ে অনলাইনে সবচাইতে জনপ্রিয় বহুল আলোচিত একটি লেনদেনের নাম হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টোকারেন্সির অনেকগুলো লেনদেন পদ্ধতি আছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম এটা। যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইট কয়েন, রিপল, বিনান্স কয়েন সহ ক্রিপ্টোকারেন্সির আরো একাধিক প্রকার আছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের মধ্যে বিটকয়েন সবচাইতে বহুল প্রচলিত এবং লাভজনক(!) কিন্তু প্রতিটি লেনদেন বুঝতে হলে, শরীয়ত সম্মত হতে হলে সর্বপ্রথম সেটার পরিচিতি, প্রকারভেদ এবং পদ্ধতি জানা আবাশ্যক। আমরা আজকের এই পর্বে মৌলিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কাকে বলে, তার প্রকৃতি কি, এর প্রতিষ্ঠাতা কে এবং এর প্রকারভেদ, লেনদেন সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিচয় ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি নতুন লেনদেনের উপায়। বলা যেতে পারে ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একপ্রকার Digital Currency Of Cash। Crypto শব্দ টির অর্থ হল Secret বা গোপন এবং Currency শব্দের মানে হল অর্থ যার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্যের আগান প্রদান করা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি এর অর্থ হলো গোপনঅর্থ। ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি Encrypted Currency যেখানে লেনদেন সম্পূর্ণ গোপন থাকে এবং এর উপরে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির হাত থাকে না। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। এটিই এই লেনদেনের বৈশিষ্ট। ১৯৮৩ সালে এই ক্রিপটোকারেন্সি বা গুপ্ত মুদ্রা সূচনা হয়েছিল। এখন সবচাইতে ফেমাস লেনদেনে পরিণত হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে - ক্রিপটোকারেন্সি নোট বা কয়েনের মতো ছাপা কোনো আক্ষরিক সংখ্যা নেই। অর্থাৎ সহজে বললে এমন একটি মুদ্রা, যা অদৃশ্য, সংকেত বা নাম্বারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, এর না আছে নিজস্ব বস্তুগত কোন আকার, না তা স্পর্শযোগ্য। তেমনিভাবে এর না আছে নিজস্ব কোন মূল্যমান বা উপকারিতা (Intrinsic Value)। এটি ডিজিট আকারে অনলাইনে থাকায় একে ডিজিটাল মানি বা ভার্চুয়াল মানি বা ইলেক্ট্রনিক মানি বলা হয় ক্রিপটোকারেন্সির মধ্য দিয়ে আপনি পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন কিন্তু এটিকে ব্যাংকে বা লকার বা আপনি আপনার পকেটে নিয়ে ঘুরতে পারবেন না। ক্রিপ্টো কারেন্সির একটি ভ্যালু রয়েছে যা অন্যান্য কারেন্সি এর ভ্যালুর থেকে কয়েক হাজারগুণ বেশি আবার কম হতেও পারে। এই নির্ভর করে তার জনপ্রিয়তার উপর। ক্রিপটো কারেন্সি এর ভ্যালু অপরিবর্তিত থাকে না, এর ভ্যালু সর্বদা উঠানামা করে। যার ফলে একদিনে ক্রিপটোকারেন্সির ভ্যালু নানান রকমের হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যাবহারের বিভিন্ন দিক রয়েছে। ক্রিপ্টো মুদ্রা দিয়ে আপনি পন্য কেনাকাটা করতে পারবেন। ক্রিপ্টো মুদ্রা দিয়ে আপনি অনলাইনে লেনদেন করতে পারবেন। ক্রিপ্টো কারেন্সিকে আপনি দেশ-বিদেশে আদান প্রদান করতে পারবেন। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি একটা কোম্পানির মত। যার অনেকগুলো মুদ্রা রয়েছে। সেই ক্রিপ্টো মুদ্রার একটি হলো বিটকয়েন। বিটকয়েনের পরিচয় মোটামুটি স্পষ্ট। বিটকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সিরই একপ্রকার মুদ্রা। যেটা স্ক্রিনে সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। এটি ভার্চুয়াল মুদ্রা, বাস্তবিক অর্থে কোন অস্তিত্ব নাই,এর কোম্পানি তাকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে তৈরী করেছে। বিটকয়েনের কোন নিজস্ব ফেসভ্যালু নেই। আমাদের দেশে যেমন মুদ্রা/টাকা তৈরী হয় সরকারি নিয়ন্ত্রণে, মেশিনে। এবং আদান প্রদানের সময় এর যাবতীয় রেকর্ড সরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। যার ফলে মানি লন্ডারিং করাটাও টাফ ব্যাপার। তাছাড়া আদানপ্রদানে দেরিও হয়। সমস্ত ঝামেলা থেকে বাঁচতে এবং অবৈধ পথ অবলম্বন করতে ক্রিপ্টোকারেন্সি দারুন ভুমিকা রাখে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মুদ্রা তথা বিটকয়েন তৈরীর প্রসেস সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন এর মাধ্যমে কাজ করে। চেইন কথার অর্থ হলো শিকল। সহজ ভাষায় বললে ব্লকচেইন হল একটি চেনের মধ্যে অনেকগুলি ব্লকের সংযুক্ত অবস্থা। যখন ক্রিপটোকারেন্সিতে লেনদেন করা হয় তখন লেনদেনের সমস্ত তথ্য রেকর্ড করে রাখা হয় অর্থাৎ একটি ব্লকে লেনদেনের তথ্য নিরাপত্তার সহিত রাখা হয়। এবং লেনদেন দ্রুত হয়। বিটকয়েন হচ্ছে ভার্চুয়াল টোকেনের মত। যেমন দারাজে ব্যাবহার করি। যার ফলে এটির ব্যাবহার বাড়ছে প্রচুর আকারে। এই ছিলো মোটামুটি বিটকয়েন, ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিচয়। (বিভিন্ন তথ্য অনলাইন থেকে সংগৃহীত, পরিমার্জিত, সংশোধিত)
বিস্তারিত পড়ুনমেডিকেলে সহশিক্ষার বিধান
২৮ এপ্রিল, ২০২৫
ডাক্তারি বিদ্যা শিখতে গেলে বর্তমান সময়ে সহশিক্ষার বিকল্প পাওয়া কঠিন, অনুরুপভাবে মহিলা সার্জনের দরকারও বেশ আছে, সেক্ষেত্রে হুকুম কি হবে! নিঃসন্দেহে ডাক্তারি বিদ্যা মহৎ কাজ এবং পেশা। মানব জীবনে এটির গুরুত্ব অপরিসীম। শরীয়তেও এর মর্যাদা অনেক বেশি। তবে প্রতিটি কাজই শরীয়াহ অনুযায়ী হতে হবে। শরীয়াহর বাহিরে যেয়ে কোন কিছু করার সুযোগ নেই। পর্দা করা ফরজ। যে কোন অবস্থাতেই পর্দা করতে হবে। নুন্যতম ছাড় নাই। হ্যাঁ, যদি কখনো এমন অনন্যোপায় হতে হয়, যখন পর্দা করার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্তেও পর্দা করা সম্ভব হয়নি, যেমন কোন পুরুষ কোন নারীকে হটাৎ দেখে ফেলল, বা কোন নারীর অজান্তে কোন পুরুষ তাকে দেখে ফেললো; তাহলে এসব ক্ষেত্রে ঐ মহিলার গোনাহ হবে না। কোন মহিলার স্বামী বা সন্তান না থাকলেও পর্দার সহিত সে জীবিকা অর্জন করবে। সম্ভব নয়; এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। বরং স্বদিচ্ছার অভাব। পর্দা করা ফরজ, মেডিকেল পড়া, ডাক্তারি বিদ্যা শিক্ষা করা, উচ্চ শিক্ষিত হওয়া ফরজ নয়। ওয়াজিবও নয়। হ্যাঁ; মহিলাদের চিকিৎসার জন্য অবশ্যই মহিলা চিকিৎসক আবশ্যক, জরুরী। সেটার জন্য আলাদা সিস্টেম থাকতে হবে। সম্পূর্ণ মহিলাদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণাগার থাকতে হবে। সেটার ব্যাবস্থা করতে হবে। সারাদিন পুরুষের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করা, প্রশিক্ষণের জন্য পুরুষের শরীর স্পর্শ করা, পুরুষ হয়ে নারীর শরীর স্পর্শ করা এগুলার কোন নুন্যতম সুযোগ নেই। কোথাও যদি এমন হয়, কোন দেশে যদি এমন পরিস্থিতি তৈরী হয় : যেখানে গাইনী ডাক্তার নাই বললেই চলে, কোনভাবেই প্রয়োজন পূর্ণ হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে সহশিক্ষা ব্যাতীত অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকলে হোস্টেল বা ক্লাসে সর্বদা পর্দার মধ্যেই থেকে পড়তে হবে। পর্দা ছাড়া পড়ার কোন অনুমতি নাই। এবং মহিলা পুরুষের শরীর অথবা পুরুষ মহিলার শরীর স্পর্শ করবে না। বরং প্রত্যেকেই নারী নারীকে পুরুষ পুরুষকে দেখবে। অগত্যা কখনো যদি এমন কোন পরিস্থিতি সামনে আসে, যখন গাইরে মাহরামকে স্পর্শ না করে পারা যাচ্ছে না, নিজে এব্যাপারে সর্বচ্চো চেস্টা করার পরেও যদি স্পর্শ না করে থাকা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রশিক্ষণের জন্য সাময়ীক অনুমতি আছে। তবে এর জন্য অবশ্যই তাওবাহ করবে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে গাইনী ডাক্তারের সংখ্যা কম হলেও তা এমন নয় যে, তার দ্বারা কোনভাবেই প্রয়োজন পূরণ হচ্ছে না, বা রোগী মারা যাচ্ছে। শরয়ী পর্দার মধ্যে থেকে যদি প্রশিক্ষণ নেয়া,পড়াশোনা সম্ভব হয়, তাহলে সেটা করার অনুমতি আছে। নতুবা বর্তমান সময়ে মহিলাদের জন্য এরকম।সহশিক্ষা এবং পুরুষের শরীর এভাবে স্পর্শ করার মত কোন পরিস্থির বৈধতা নাই। তাছাড়া শরীয়ত আমাকেই ডাক্তার হওয়ার দায়িত্ব আরোপ করেনি, বা আমি না করলে প্রয়োজন কোনভাবেই পূরণ হচ্ছে না, বিষয়টি এমন নয়। এছাড়াও মহিলা ডাক্তার কোনভাবে না পাওয়া গেলে পরিস্থিতির কারণে, জান বাঁচানোর তাগিদে, অপারাগতা বশত পুরুষ ডাক্তার মহিলা পেশেন্টের চিকিৎসা করতে পারে। অতএব মহিলাদেরও ডাক্তারি পড়তে হবে, এ কথা বলে সার্বক্ষণিক বেপর্দার মধ্যে থাকার সুযোগ নাই। যদি কেউ মেডিকেলে পড়ে, এবং সে বেপর্দায় থাকে, পুরুষের সঙ্গে একান্ত বাধ্য হয়ে জরুরী কথা ছাড়া অতিরিক্ত কোন কথা বলে, গলার স্বর উচু করে; তাহলে এমন মহিলা কবীরা গোনাহে লিপ্ত বলে বিবেচিত হবে। আর পূর্ণাঙ্গ শরয়ী পর্দা সহকারে পড়তে পারলে তার সুযোগ আছে। নোটঃ ডাক্তারি বিদ্যা একটি অত্যন্ত জরুরী বিদ্যা, জীবন বাঁচানোর মত মহৎ কাজ জড়িত এখানে। সেটা শিক্ষা করার ক্ষেত্রেই যখন এতটা শরয়ী পাবন্দি করা জরুরী, শরীয়তের এত বিধি নিষেধ, তাহলে সরকারি চাকুরির জন্য, উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রচলিত সহশিক্ষার বিধান কি হতে পারে, সেটি একজন বিবেকবান ব্যক্তি মাত্রই বুঝে নিতে পারবে। প্রচলিত সহশিক্ষা ব্যবস্থার যে দৃশ্যপট আর চিত্রায়ন আমাদের সামনে আছে, শরয়ী বিধান অনুযায়ী তা সম্পূর্ণ রুপে নাজায়েজ । দলীল সমূহ ক্বাওয়াইদুল ফিক্বহঃ "إذا تعارض مفسدتان روعي أعظمهما ضرراً بارتکاب أخفهما". (ص/۵۶ ، فقه النوازل :۴/۲۱۴ ، أحکام الجراحة) ফতোয়ায়ে আলমগিরিঃ :امرأة أصابتها قرحة في موضع لایحل للرجل أن ینظر إلیه، لایحل أن ینظر إلیهما، لکن تعلم امرأة تداویها، فإن لم یجدوا امرأة تداویها ولا امرأة تتعلم ذلك إذا علمت، وخیف علیها البلاء والوجع أو الهلاك، فإنه یستر منها کل شيء إلا موضع تلك القرحة، ثم یداویها الرجل ویغض بصره ما استطاع إلا عن ذلك الموضع، ولا فرق في هذا بین ذوات المحارم وغیرهنّ، لأن النظر إلی العورة لایحل بسبب المحرمیة". (۵/۳۳۰ ، کتاب الکراهية، الباب الثامن فیما یحل للرجل النظر الخ) শামিঃ رد المحتار : "إذا کان المرض في سائر بدنها غیر الفرج یجوز النظر إلیه عند الدواء؛ لأنه موضع ضرورة، وإن کان في موضع الفرج، فینبغي أن یعلم امرأة تداویها، فإن لم توجد وخافوا علیها أن تهلك أو یصیبها وجع لاتحتمله یستروا منها کل شيء إلا موضع العلة، ثم یداویها الرجل، ویغضّ بصره ما استطاع إلا عن موضع العلة، ثم یداویها الرجل ویغضّ بصره ما استطاع إلا عن موضع الجرح". (۹/۴۵۳ ، الحظر والإباحة ، فصل في النظر والمسّ তাফসিরে ইবনে কাসিরঃ تفسير ابن كثير :ج: 6 / ص: 44) { وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ } "فقوله تعالى: { وقل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن } أي: عما حرم الله عليهن من النظر إلى غير أزواجهن. ولهذا ذهب [كثير من العلماء] إلى أنه لا يجوز للمرأة أن تنظر إلى الأجانب بشهوة، ولا بغير شهوة أصلا. واحتج كثير منهم بما رواه أبو داود والترمذي، من حديث الزهري، عن نبهان -مولى أم سلمة -أنه حدثه: أن أم سلمة حدثته: أنها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة، قالت: فبينما نحن عنده أقبل ابن أم مكتوم، فدخل عليه، وذلك بعدما أمرنا بالحجاب، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "احتجبا منه" فقلت: يا رسول الله، أليس هو أعمى لا يبصرنا ولا يعرفنا؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "أو عمياوان أنتما؟ ألستما تبصرانه" . ثم قال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح. وذهب آخرون من العلماء إلى جواز نظرهن إلى الأجانب بغير شهوة، كما ثبت في الصحيح: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم جعل ينظر إلى الحبشة وهم يلعبون بحرابهم يوم العيد في المسجد، وعائشة أم المؤمنين تنظر إليهم من ورائه، وهو يسترها منهم حتى ملت، ورجعت." মাবসুত, সারাখসিঃ (كتاب المبسوط للشيباني :ج: 1 / ص: 464) "ولا بأس بأن تنظر المرأة التي لا نكاح بينها وبين الرجل منه إلى جميع جسده ،ووجهه، ورأسه إلا ما بين سرته إلى ركبته، فإن ذلك عورة ،ولا ينبغي لها أن تنظر إليه...ولا ينبغي لها أن تمس منه قليلا ولا كثيرا إذا كانت شابة يشتهي مثلها ،أو كان شابا يجامع مثله." (رد المحتار :ج: 26 ،ص: 392) আল বাহরুর রায়িকঃ "وفي الأشباه : الخلوة بالأجنبية حرام إلا لملازمة مديونة هربت ودخلت خربة، أو كانت عجوزا شوهاء." (البحر الرائق شرح كنز الدقائق :ج: 3 / ص: 72) "ذكر الإمام أبو العباس القرطبي في كتابه في السماع: ولا يظن من لا فطنة عنده أنا إذا قلنا صوت المرأة عورة أنا نريد بذلك كلامها ؛ لأن ذلك ليس بصحيح،فإنا نجيز الكلام مع النساء الأجانب ومحاورتهن عند الحاجة إلى ذلك ،ولا نجيز لهن رفع أصواتهن ،ولا تمطيطها،ولا تليينها، وتقطيعها لما في ذلك من استمالة الرجال إليهن،وتحريك الشهوات منهم، ومن هذا لم يجز أن تؤذن المرأة." (رد المحتار :ج: 1 ، ص: 101) "قال في تبيين المحارم : وأما فرض الكفاية من العلم ، فهو كل علم لا يستغنى عنه في قوام أمور الدنيا كالطب، والحساب ،والنحو، واللغة، والكلام."
বিস্তারিত পড়ুনবন্দি মুক্তির পিছনে যাকাত-ফিতরার টাকা খরচের বিধান
২৪ মার্চ, ২০২৫
বন্দি মুক্তির পিছনে যাকাত-ফিতরার টাকা খরচ: বহুল আলোচিত -জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এটি। যাকাত অথবা ফিতরার টাকা বন্দি মুক্তির কাজে খরচ করা যাবে কিনা। দেখুন: যাকাত বা ফিতরা গ্রহনের উপযুক্ত হতে হলে একটি মৌলিক শর্ত আছে। আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট থাকা উচিত যে, যাকাত আদায়ের জন্য আবশ্যক হলো যে: তা কোনো দরিদ্র ও প্রাপ্য ব্যক্তির মালিকানায় প্রদান করতে হবে বা পৌছে দিতে হবে। যদি বন্দি ব্যক্তির মালিকানায় সম্পত্তি বলতে বাসস্থানের বাড়িই আছে। এছাড়া যদি তার মালিকানায় নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ-রুপা না থাকে তথা সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাষের জমি অথবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত কোন জিনিস, যেগুলোর মুল্য নিসাব পরিমানে পৌছে ;এরকম সম্পদ যদি না থেকে থাকে : তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ। বরং কোনো নিরপরাধ বন্দিকে মুক্ত করার জন্য যাকাত-ফিতরার টাকা খরচ করতে পারাটা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। এখন বন্দি মুক্তির পিছনে টাকাটা খরচ করার পদ্ধতি হলো: উক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে। যেহেতু জেলে তাকে সরাসরি মালিক বানানো কঠিন, তাই এই বিষয়টি আগে তাকে প্রথমে জানিয়ে মৌখিক অনুমতি নিতে হবে। তাকে বলা হবে যেন তিনি কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে নিজের প্রতিনিধি বানান, যিনি তার পক্ষে যাকাত গ্রহণ করে তার মুক্তির জন্য আইনগত প্রক্রিয়ায় খরচ করতে পারে। তিনি যেন তাকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যায়ের অনুমতি দেন কাউকে। যাকে / যাদেরকে অনুমতি দিবেন, তারা উক্ত অর্থ সংগ্রহ করে খরচ করতে পারবেন। তাহলে উক্ত যাকাত-ফিতরা আদায় হয়েছে বলে গন্য হবে। কিন্তু যদি এমন না তথা তার অনুমতি না নিয়ে /তিনি কাউকে প্রতিনিধি না বানালে: যদি তার পরিচিতরা সরাসরি কোনো আইনজীবী বা অন্য কাউকে মুক্তির ফি হিসেবে এই টাকা দেন, তাহলে যেহেতু যাকাতের টাকা দরিদ্র ব্যক্তির মালিকানায় যায়নি, সেহেতু এই কারণে যাকাত-ফিতরা আদায় হবে না। রেফারেন্স: ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৭০, রশিদিয়া "أما تفسيرها فهي تمليك المال من فقير مسلم غير هاشمي، ولا مولاه بشرط قطع المنفعة عن المملك من كل وجه لله تعالى." (كتاب الزكاة،الباب الأول في تفسيرها وصفتها وشرائطها،ج1، ص170، ط:رشيدية) ফতোয়ায়ে শামি: ২/৩৪৪, সাইদ "ويشترط أن يكون الصرف (تمليكا) لا إباحة." (شامي ، كتاب الزكاة، باب المصرف، ج2، ص344، ط: سعید)
বিস্তারিত পড়ুনযাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন
১৭ মার্চ, ২০২৫
যাকাত দেয়া ফরজ না হলেও যাকাত নিতে পারবে না বা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয়ঃ সমাজে এমন লোকের সংখ্যা খুব বেশি। কাউকে বাহ্যিকভাবে গরীব বা ভ্যান/রিক্সাচালক দেখেই তাকে যাকাতের টাকা দিয়ে দিলে আপনার যাকাত না আদায় হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অবশ্যই যাকাত দেয়ার পূর্বে সেই ব্যক্তির হালত যাচাই করা আবশ্যক। যদি কোন ব্যক্তির কাছে নগদ টাকা পয়সা অথবা স্বর্ণ রুপা অথবা ব্যাবসায়িক সম্পত্তি বলতে কিছুই না থাকে বা যদি এত অল্প পরিমানে থাকে, যেটা নেসাব পরিমান সম্পদের ( ৮৮ হাজার টাকার ) চাইতে কম : তাহলে এমন ব্যক্তির উপর যাকাত প্রদান করা ফরজ না। কিন্তু যদি সেই একই ব্যক্তির মালিকানায় নিজের বসবাসের বাড়িঘর ছাড়াও অতিরিক্ত কোন জমি থাকে, যা অব্যাবহৃত বা অন্যের কাছে বন্ধক রাখা ; যার মুল্য নেসাব সমপরিমান মুল্যমানের হয় অথবা তার মালিকানায় বেশ কয়েক কাঠা/বিঘা জমি আছে: তাহলে যতটুকু সম্পত্তিতে চাষাবাদ করলে তার বছর চলে, অতটুকু বাদে বাকি সমস্ত জমির দাম যদি নেসাব সমপরিমান মুল্যমানের হয় তাহলেও এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না। তদ্রুপ তার কোন অতিরিক্ত বাড়ি আছে, যেটা অব্যাবহৃত বা বছরে ২/১ বার ব্যাবহার করা হয় অথবা ভাড়া দেয়া, অথবা বাড়িতে এমন বেশকিছু অব্যাবহৃত জিনিসপত্র আছে, যা বছরে একেবারেই তেমন ব্যাবহার করা হয় না : তাহলে এমন সমস্ত জিনিসের মুল্য যদি নেসাব সমপরিমান হয়, তাহলে এমন ব্যক্তিকেও যাকাত দেয়া যাবে না। এমন ব্যক্তির উপর সদক্বাতুল ফিতর দেয়া আবশ্যক অতএব আপনার যাকাত সঠিক, উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করুন। নতুবা যাকাত ভুল মানুষকে দিলে পুনরায় যাকাত আদায় করা আবশ্যক!
বিস্তারিত পড়ুনযাকাতের নিয়ত করা
১৭ মার্চ, ২০২৫
১. যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাত প্রদানের নিয়ত করা জরুরি। -রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮ ২. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই যাকাত প্রদান করতে হবে। জনসমর্থন অর্জনের জন্য, লোকের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য কিংবা অন্য কোনো জাগতিক উদ্দেশ্যে যাকাত দেওয়া হলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।-সূরা বাক্বারা ২৬৪ যাকাতের উপযুক্ত খাতে যেমন ফকীর-মিসকীনকে দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়ত করতে হবে। এটাই মূল নিয়ম। তবে নিজের সম্পদ থেকে যাকাতের টাকা পৃথক করে রাখলে পৃথক করার সময়ের নিয়তই যথেষ্ট হবে। এখান থেকে ফকীর-মিসকীনকে দেওয়ার সময় নতুন নিয়ত না করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে।-রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮ ৩. যাকাতের উদ্দেশ্যে টাকা পৃথক করে রাখলেও মালিক তা প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে। তবে পরে যাকাত আদায়ের সময় যাকাতের নিয়ত করতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩৯১, ১০৩৯২ ৪. যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে কিছু টাকা দান করা হয়েছে, কিন্তু দান করার সময় দানকারীর মনে যাকাতের নিয়ত ছিল না তো গ্রহীতার কাছে সেই টাকা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যাকাতের নিয়ত করলে যাকাত আদায় হবে। তদ্রূপ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা হলে গ্রহীতা তা খেয়ে ফেলার বা বিক্রি করে দেওয়ার আগে যাকাতের নিয়ত করলেও যাকাত আদায় হবে। এরপরে যাকাতের নিয়ত করলে যাকাত হিসাবে আদায় হবে না।-আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮-২৬৯ ৫. যাকাতের টাকা আলাদা করে রাখা হয়েছে। কিন্তু ফকীর-মিসকীনকে দেওয়ার আগেই তা চুরি হয়ে গেল বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট হয়ে গেল তাহলে যাকাত আদায় হয়নি। পুনরায় যাকাত দিতে হবে।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৯৩৬,৬৯৩৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৩১-৫৩২; রদ্দুল মুহতার ২/২৭০ ৬. যে সম্পদের উপর যাকাত ফরয হয়েছে তার চল্লিশ ভাগের একভাগ (২.৫০%) যাকাত দেওয়া ফরয। সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা হারে নগদ টাকা কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়-চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও যাকাত আদায় হবে। -সুনানে নাসায়ী হাদীস ২২৩০-২২৩৩; সুনানে আবু দাউদ হাদীস ১৫৭০-১৫৭২; সুনানে তিরমিযী হাদীস ৬২৩; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ১৮০৩ ; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১৩৩-৭১৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৫৩৯-১০৫৮১ ৭. যে পরিমাণ যাকাত ফরয হয় স্বেচ্ছায় তার চেয়ে বেশি দিয়ে দিলেও অসুবিধা নেই। এতে যাকাত আদায় এবং বাড়তি দান দু’টোরই ছওয়াব পাওয়া যাবে।- মুসনাদে আহমদ হাদীস ২০৭৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৯০৭ ৮. যাকাত গ্রহণকারীকে একথা জানানোর প্রয়োজন নেই যে, তাকে যাকাত দেওয়া হচ্ছে। যেকোনোভাবে দরিদ্র ব্যক্তিকে যাকাতের মাল দেওয়া হলে মালিক যদি মনে মনে যাকাতের নিয়ত করে তাহলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।-রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮ ৯. অন্যের পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করতে হলে তার অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় সে ব্যক্তির পক্ষ থেকে যাকাত আদায় হবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/২৬৯ ১০. গৃহকর্তা যদি ঘরের লোকদেরকে যাকাত দেওয়ার অনুমতি দিয়ে রাখেন তাহলে তারা যাকাতের নিয়তে কাউকে কিছু দিলে তা যাকাত হিসেবে আদায় হবে। আর যদি পূর্বাগ্রে অনুমতি না দেওয়া থাকে আর ঘরের লোকেরা যাকাত হিসেবে কিছু দান করে তাহলে যাকে দান করা হল সে সেই অর্থ খরচ করার আগেই যদি গৃহকর্তা অনুমতি পাওয়া যায় তাহলেও তা যাকাত হিসেবে আদায় হবে। অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। পুনরায় আদায় করতে হবে। ১১. কোনো দরিদ্র ব্যক্তির কাছে কারো কিছু টাকা পাওনা আছে। এখন সে যদি যাকাতের নিয়তে পাওনা মাফ করে দেয় তাহলে যাকাত আদায় হবে না। তাকে যাকাত দিতে হলে নিয়ম হল, প্রথমে তাকে যাকাত প্রদান করা এরপর সেখান থেকে ঋণ উসূল করে নেওয়া।-আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০; রদ্দুল মুহতার ২/২৭১ ঋণগ্রস্তকেই যাকাতের টাকা প্রদান করা উত্তম। কেননা এতে তাকে ঋণের দায় থেকে মুক্ত করা হয়। আর কোনো স্বচ্ছল ব্যক্তি যদি যাকাত থেকে গণ্য করা নিয়ত ছাড়াই ঋণগ্রহীতার ঋণ ক্ষমা করে দেয় তবে তো কথাই নেই।-রদ্দুল মুহতার ২/২৭১ আল কাউসার থেকে সংগৃহীত
বিস্তারিত পড়ুনযাকাত কখন প্রদান করবে
১৭ মার্চ, ২০২৫
১. যে দিন এক বছর পূর্ণ হবে সেদিনই যাকাত আদায় করা ফরয হয়। এরপর যখনই যাকাত আদায় করুক সে পরিমাণই আদায় করতে হবে যা সেই দিন ফরয হয়েছিল। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৫৫৯ ২. বছর পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে চন্দ্রবর্ষের হিসাব ধর্তব্য, সৌর বর্ষের নয়। আল কাউসার থেকে সংগৃহীত
বিস্তারিত পড়ুনযাকাতের নিসাবের বিবরণ
১০ মার্চ, ২০২৫
১. স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হল বিশ মিসকাল। -সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৭৭, ৭০৮২ আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি। ২. রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হল দু’শ দিরহাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৯ আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে। ৩. প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৩৭ ৪. যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। এবছর যাকাতের নেসাব ৯৫ হাজার টাকা। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩ কিছু দৃষ্টান্ত ক) কারো কাছে নিসাবের কম সোনা এবং নিসাবের কম রুপা আছে, কিন্তু যে পরিমাণ সোনা আছে তার মূল্য মজুদ রুপার সাথে যোগ করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় বা তার চেয়ে বেশি হয়। তাহলে সোনা-রুপার মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৭৯,১০৬৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩ খ) কারো কাছে কিছু স্বর্ণালংকার আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এর যাকাত দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩ গ) কারো কাছে নিসাবের কম রুপা আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা বা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এরও যাকাত দিতে হবে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৩ ৫. নিসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের যাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৩২, ৭০৭৪, ৭০৭৫, ৭০৭৯, ৭০৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৯ ৬. কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৮৭২,৭০৪০,৭০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩২৫,১০৩২৭ ৭. বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে ঐ সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৪২,৭০৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০২ যে সব জিনিসের ওপর যাকাত ফরয নয় ৮. নিজ ও পোষ্য পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর যাকাত ফরয নয়।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৯-২০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫ ৯. গৃহের আসবাবপত্র যেমন খাট-পালঙ্ক, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি এবং গার্হস্থ সামগ্রী যেমন হাড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির উপর যাকাত ফরয নয়। তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৯৩,৭১০২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫ তবে এক্ষেত্রে মনে রাখাতে হবে য, যেসব বস্ত্তর উপর যাকাত আসে না সেগুলোতে যদি সোনা-রুপা সংযুক্ত থাকে তাহলে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে এই সংযুক্ত সোনা-রুপারও যাকাত ফরয হবে। ১০. পরিধেয় বস্ত্র, জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে তবুও তাতে যাকাত ফরয হবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫ ১১. দোকান-পাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমন আসবাবপত্র যা ব্যবসাপণ্য নয়, তার ওপর যাকাত ফরয নয়। তবে ফার্নিচারের দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে যেসব ফার্নিচার রাখা থাকে তা যেহেতু বাণিজ্যদ্রব্য তাই এসবের ওপর যাকাত ফরয হবে। ১২. ঘর-বাড়ি বা দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দিলে তাতেও যাকাত ফরয নয়। তবে এসব ক্ষেত্রে ভাড়া বাবদ যে অর্থ পাওয়া যাবে তার ওপর মাসআলা নং ৬ প্রযোজ্য হবে। ১৩. ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর-বাড়ি বা অন্য কোনো সামগ্রী যেমন ডেকোরেটরের বড় বড় ডেগ, থালা-বাটি ইত্যাদি ক্রয় করলে তার ওপরও যাকাত ফরয নয়। তবে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের উপর যাকাত আসবে। ঋণ ও পাওনা প্রসঙ্গ ১৪. কারো ঋণ যদি এত হয় যা বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে না তাহলে তার ওপর যাকাত ফরয নয়। -মুয়াত্তা মালেক ১০৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০০৩, ৭০৮৬, ৭০৮৯, ৭০৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪৭-৫৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৩ কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রসিদ্ধ মাসআলাটি সকল ঋণের ক্ষেত্রে নয়। ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে। ক. প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেওয়া হয়। খ. ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়। প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে যাকাতের নিসাব বাকি থাকে কিনা তার হিসাব করতে হবে। নিসাব থাকলে যাকাত ফরয হবে, অন্যথায় নয়। কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে যাকাতের হিসাবের সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে যাকাত কম দেওয়া যাবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৮৭ ১৫. বিয়ে-শাদিতে মোহরানার যে অংশ বাকি থাকে তা স্বামীর কাছে স্ত্রীর পাওনা। কিন্তু এই পাওনা স্বামীর ওপর যাকাত ফরয হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ যাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাবের সময় এই ঋণ বাদ দেওয়া যাবে না; বরং সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/২৬১ উল্লেখ্য যে, বিনা ওযরে মোহরানা আদায়ে বিলম্ব করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ১৬. অন্যকে যে টাকা কর্জ হিসেবে দেওয়া হয়েছে বা ব্যবসায়ী কোনো পণ্য বাকিতে বিক্রয় করেছে এই পাওনা টাকা পৃথকভাবে বা অন্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে মিলিতভাবে নিসাব পূর্ণ করলে তারও যাকাত দিতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১১১-৭১১৩,৭১২১,৭১২৩,৭১২৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৮৪-৪৮৬ ১৭. পাওনা উসূল হওয়ার পর ওই টাকার যাকাত আদায় করা ফরয হয়। তার আগে আদায় করা জরুরি নয়, তবে আদায় করলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩৪৭, ১০৩৫৬ ১৮. উপরোক্ত ক্ষেত্রে পাওনা উসূল হতে যদি কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে উসুল হওয়ার পর বিগত সকল বছরের যাকাত আদায় করা ফরয হয়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১১৬,৭১২৯,৭১৩১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩৪৬,১০৩৫৬ ১৯. স্বামীর কাছে পাওনা মোহরানা নিসাব পরিমাণ হলেও তা স্ত্রীর হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাতে যাকাত ফরয হয় না। হস্তগত হওয়ার পর যদি আগে থেকেই ঐ মহিলার কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ না থাকে তাহলে এখন থেকে বছর গণনা শুরু হবে এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে। ২০. আর যদি স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার আগ থেকেই নিসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক থেকে থাকে তাহলে এই সদ্যপ্রাপ্ত মোহরানা অন্যান্য টাকা-পয়সা বা সম্পদের সাথে যোগ হবে এবং সেই সব পুরানো সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। আল কাউসার থেকে সংগৃহীত
বিস্তারিত পড়ুনযাকাতঃ ফাযায়েল - মাসায়েল
৭ মার্চ, ২০২৫
যাদের উপর যাকাত ফরয হয় ১. আগেই বলা হয়েছে যে, যাকাত ইসলামের একটি অপরিহার্য ইবাদত। এজন্য শুধু মুসলিমগণই যাকাত আদায়ের জন্য সম্বোধিত হন। সুস্থমস্তিষ্ক, আযাদ, বালেগ মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে যাকাত আদায় করা তার ওপর ফরয হয়ে যায়। -আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯ বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯,৮২ কাফির যেহেতু ইবাদতের যোগ্যতা রাখে না তাই তাদের ওপর যাকাত আসে না। এছাড়া অসুস্থমস্তিষ্ক মুসলিমের ওপর এবং নাবালেগ শিশু-কিশোরের ওপরও যাকাত ফরয নয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৬১-৪৬২; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৯ রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮ যেসব জিনিসের উপর যাকাত ফরয হয় ১. সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরয হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরয হয়। ২. সোনা-রুপার অলংকার সর্বদা বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক সর্বাবস্থাতেই তার যাকাত দিতে হবে। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৫; সুনানে নাসায়ী হাদীস ২২৫৮; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৫৪-৭০৬১,৭০৬৩-৭০৬৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৭৪;৬/৪৬৯-৪৭১ ৩. অলংকার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও যাকাত ফরয হয়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭০৬১; ৭০৬৬; ৭১০২ ৪. জামা-কাপড় কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকাজ করা থাকলে তা-ও যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যে পরিমাণ সোনা-রুপা কারুকাজে লেগেছে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে তারও যাকাত দিতে হবে। -মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১০৬৪৮,১০৬৪৯,১০৬৫১ সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর অলংকার ইত্যাদির উপর যাকাত ফরয নয়। তদ্রূপ হিরা, মণি-মুক্তা ইত্যাদি মূল্যবান পাথর ব্যবসাপণ্য না হলে সেগুলোতেও যাকাত ফরয নয়।-কিতাবুল আছার মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৬১-৭০৬৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৪৭-৪৪৮ ৫. মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরয হয়।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৯১,৭০৯২ তদ্রূপ ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও যাকাত ফরয হয়। ৬. টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে যাকাত ফরয হয়। -আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২,৩০০ ৭. হজ্বের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরয হবে। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায় তাহলে যাকাত ফরয হবে না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩২৫ ৮. দোকান-পাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা থাকে তা বাণিজ্য-দ্রব্য। এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত আদায় করা ফরয। -সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/১৫৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক পৃ ১০৮; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১০৩,৭১০৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১০৫৫৭, ১০৫৬০, ১০৫৬৩ ৯. ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন জমি-জমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর যেমন মুদী সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি, তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দেওয়া ফরয হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১০৩,৭১০৪ আল কাউসার থেকে সংগৃহীত
বিস্তারিত পড়ুনরোযার কাফফারা এবং ফিদিয়া
৪ মার্চ, ২০২৫
রোযা রেখে কেউ ইচ্ছাকৃত পানাহার অথবা সহবাসের মাধ্যমে রোযা ভেঙ্গে ফেললে তাকে রোযার কাযা+কাফফারা দুটিই করতে হয়। কাফফারা হলো একটি রোযার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতে হবে। কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোযা রাখতে হবে। পেছনের রোযাগুলো কাফফারার রোযা হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তবে মহিলাদের হায়েযের কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই। তবে একই রমযানে একাধিক রোজা ভেঙ্গে ফেললে কাফফারা শুধুমাত্র একটিই হবে, আর প্রত্যেকটির জন্য কাযা আবশ্যক হবে। এর সামর্থ্য না থাকলে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরে খানা খাওয়াবে অথবা ৬০ জন মিসকিনকে সদকায়ে ফিতর পরিমাণ গম, আটা, চাল ইত্যাদি অথবা সমপরিমাণ নগদ (বর্তমান সদক্বাতুল ফিতরঃ ৯০/১০০ টাকা) টাকা দিবে। একজন মিসকিনকে ৬০ দিন দু বেলা খাওয়ালে ও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে শুধু একজনকে ৬০ দিনেরটা একদিনেই দিয়ে দিলে কাফফারা আদায় হবে না বরং তাতে মাত্র একদিনের কাফফারা আদায় হবে। হয়ত ১ জন মিসকিনকে ৬০ দিন খাওয়াতে হবে বা দিতে হবে, নতুবা ১ দিনে ৬০ মিসকিনকে দিতে হবে বা খাওয়াতে হবে। আর কেউ রমজান মাস পেয়েও শরিয়তসম্মত কারণে রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম না হলে তার জন্য রোজা না রাখার সুযোগ আছে। যেমন অতিশয় বৃদ্ধ অথবা এমন অসুস্থ যার আরোগ্য হওয়ার আশা করা যায় না, তার জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে ‘ফিদিয়া’ প্রদান করবেন। প্রতিটা রোযার পরিবর্তে সদকায়ে ফিতর পরিমান পণ্য বা তার মূল্য যাকাত খেতে পারে এমন গরীব-মিসকীনকে দান করাই হল এক রোযার ফিদিয়া। ফিদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই। তবে দারিদ্র্যের দরুন ফিদিয়া দিতে একেবারেই অক্ষম হলে আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে। পরে কখনো সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদিয়া আদায় করে দেবে।
বিস্তারিত পড়ুনরোযার আধুনিক কিছু মাসআলা
৪ মার্চ, ২০২৫
রোযার আধুনিক কিছু মাসআলাঃ রোযা রাখা অবস্থায় রক্ত দেয়ার দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হয় না। তবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়। আমরা অনেক সময় ভুল ধারণা করি যে: রোযা রেখে স্যালাইন নিলে বোধহয় রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। ইনজেকশন,ভ্যাকসিন,ইনস্যুলিন ও স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না, অবশ্য গ্লুকোজজাতীয় ইনজেকশন অর্থাৎ যেসব স্যালাইন ও ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয়, রোজা অবস্থায় মারাত্মক অসুস্থতা ছাড়া নেওয়া নাজায়েজ। সালবিউটামল ও ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। ওষুধটি যদিও স্প্রে করার সময় গ্যাসের মতো দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা দেহবিশিষ্ট তরল ওষুধ। অতএব মুখের অভ্যন্তরে স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, মুখে স্প্রে করার পর না গিলে যদি থুতু দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারো যদি শ্বাসকষ্ট এমন মারাত্মক আকার ধারণ করে যে ইনহেলার নেওয়া ছাড়া ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করা দায় হয়ে পড়ে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এই সুযোগ রয়েছে যে তারা প্রয়োজনভেদে ইনহেলার ব্যবহার করবে ও পরবর্তী সময় রোজা কাজা করে নেবে। আর কাজা করা সম্ভব না হলে ফিদিয়া আদায় করবে। আর যদি ইনহেলারের বিকল্প কোনো ইনজেকশন থাকে, তাহলে তখন ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করবে। কেননা রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে না। রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। চোখে ড্রপ, ওষুধ, সুরমা, মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়। অনুরুপভাবে কানে ড্রপ নিলেও রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে নাকে ড্রপ নিলে তা সরাসরি পাকস্থালীতে প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে, যদি নাকে ড্রপ নিলে গলায় স্বাদ অনুভুত হয় তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
বিস্তারিত পড়ুনযেসমস্ত কারণে রোযা মাকরুহ হয়
৪ মার্চ, ২০২৫
যেসমস্ত কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না, তবে মাকরুহ হয়ঃ কোনো প্রয়োজন ও কারণ ছাড়া কোনো কিছু চিবানো, তরকারি বা কোনো খাবারের স্বাদ আস্বাদন করা মাকরুহ। তবে স্বামী বদমেজাজি হলে স্ত্রীর জন্য মাকরুহ ছাড়াই তরকারির স্বাদ টেস্ট করা জায়েজ। রোজা রেখে মুখের ভেতর থুথু জমা করে গিলে ফেলা মাকরুহ। টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে দাঁত মাজা মাকরুহ। আর পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজার সময় তা পেটে চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। মুখে গুল ব্যবহারে মাকরুহ হয় এবং থুতুর সঙ্গে গুল গলার ভেতর চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। রোজা রেখে কারো গিবত করলে বা পরনিন্দা করলে রোজা মাকরুহ হয়। রোজা রেখে ঝগড়া-বিবাদ করলে রোজা মাকরুহ হবে। যৌন উদ্দীপক কিছু দেখা বা শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতেও রোজা মাকরুহ হয় অনুরুপভাবে গান, সিনেমা দেখা ও তাতে মজে থাকলে রোজা মাকরুহ হয়। গোসল ফরজ থাকা অবস্থায় রমজানে সারা দিন শরীর নাপাক রাখলেও রোজা মাকরুহ হবে। পায়খানার রাস্তায় পানি দ্বারা এত বেশি ধৌত করা যে, ভেতরে পানি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, এটিও মাকরুহ। কামাসক্ত হওয়ার ভয় থাকলে স্ত্রীকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা বা অনুরূপ কোনো স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ করা মাকরুহ। কোনো কারণ ছাড়াই কিছু চিবানো মাকরুহ। বেশি ক্ষুধা বা পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করা মাকরুহ। উপরোক্ত কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় না, তবে মাকরুহ হয়।
বিস্তারিত পড়ুনরোজা ভঙ্গের কারণসমূহঃ যেসমস্ত কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না
২ মার্চ, ২০২৫
যেসমস্ত কারণে রোযা ভঙ্গ হয় নাঃ রোযা অবস্থায় ভুলে কোন কিছু পান করলে বা খেয়ে ফেললে। যতবেশি পরিমানে হোক। ভুলে স্ত্রী সহবাস করলে। রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোযা অবস্থায় চুল,দাড়ি,নখ ইত্যাদি কাটলে। মশা-মাছি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোজা ভাঙবে না অনিচ্ছাকৃত বমি হলে, এমনকি মুখ ভরে হলেও রোজা ভাঙবে না তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজেই ভেতরে চলে গেলেও রোজা ভাঙবে না দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে পেটের মধ্যে না গেলে রোজা ভাঙবে না অতিরিক্ত গরম বা পিপাসার কারণে যদি গোসলের মাধ্যমে শরীরকে ঠান্ডা করে তাহলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না কুলি করার পর পানির অবশিষ্ট আর্দ্রতা থুতুর সঙ্গে গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না রোজা অবস্থায় আতর বা ফুলের ঘ্রাণ নিলেও কোনো সমস্যা নেই। নিজের থুথু গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হবে না। শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না, বরং তা বৈধ। অনিচ্ছাকৃত মুখের মধ্যে ধুলাবালি ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না রোজা রেখে রোজার দিনে চোখে ওষুধ-সুরমা ইত্যাদি লাগালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। রাতে স্ত্রী সহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হলে সুবহে সাদিকের আগে গোসল করতে না পারলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কোনো ওজর ছাড়া (বিশেষত রোজা অবস্থায়) দীর্ঘ সময় অপবিত্র থাকা অনুচিত। এটি মাকরুহ। কামভাবের সঙ্গে কোনো মেয়ের দিকে তাকানোর ফলে কোনো ক্রিয়া-কর্ম ছাড়াই বীর্যপাত হলে রোজা ভাঙবে না। তবে রোজা অবস্থায় স্ত্রীর দিকেও এমন দৃষ্টি দেয়া অনুচিত। আর অপাত্রে কুদৃষ্টি দেয়া তো গোনাহ, যা রোজা অবস্থায় আরও ভয়াবহ। এতে ওই ব্যক্তি রোজার ফজিলত ও বরকত থেকে মাহরুম হয়ে যায়। রোজার দিনে রোজা অবস্থায় স্বপ্নে পানাহার করলে বা কারো স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না। তদ্রুপ শরীরের কোন জায়গা থেকে কেটে গেলে, ফোড়া থেকে রক্ত/পূজ বের হলে বা প্রসাবের সঙ্গে রক্ত বের হলে বা যে কোন তরল পদার্থ বের হলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কোনো খাদ্যদ্রব্য বুট বা ছোট ছোলার কম পরিমাণ যদি দাঁতের সঙ্গে লেগে থাকে ও গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না। যদি রোজাদারের গোসল করার সময় অথবা বৃষ্টিতে ভেজার সময় কানের মধ্যে অনিচ্ছায় পানি চলে যায়, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে রোজা নষ্ট হবে না। উপরোক্ত কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না, মাকরুহও হবে না।
বিস্তারিত পড়ুনরোজা ভঙ্গের কারণসমূহঃ শুধুমাত্র কাযা ওয়াজিব হয় যেসব কারণে
১ মার্চ, ২০২৫
যেসমস্ত কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং শুধুমাত্র রোযা কাযা করতে হয়ঃ স্ত্রী রাজি না থাকা অবস্থায় জোরপূর্বক যদি স্বামী সহবাস করে, তাহলে স্ত্রীর রোযা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু তার উপর শুধু পরবর্তীতে কাযা রাখা আবশ্যক হবে কাফফারা দিতে হবে না। কিন্তু স্বামীর উপর কাযা ও কাফফারা উভয়ই আবশ্যক হবে। ইচ্ছা করে মুখ ভরে বমি করা ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে। ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরো কিছু খেলে। বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর নেফাস তথা ঋতুস্রাব হলে। প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে। রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে। রাত অবশিষ্ট আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করলে। কুলি করার সময় স্বরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছায় গলার ভেতর পানি প্রবেশ করলে। বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে। জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে। অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে। হস্তমৈথুন করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে, কাযা করতে হবে। কাফফারা আসবে না। তবে কঠোর শক্ত গোনাহ এটি। উপরোল্লেখিত কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং শুধুমাত্র প্রতিটি রোযার বিপরীতে একটি করে রোযা কাযা করতে হবে।
বিস্তারিত পড়ুনরোজা ভঙ্গের কারণসমূহঃ কাযা এবং কাফফারা ওয়াজিব হয় যেসব কারণে
১ মার্চ, ২০২৫
কোন ব্যক্তি রমযানে রোযা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে। অনুরুপভাবে রোযা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। উল্লেখ্য যে : পানাহার বলতে এমন জিনিস ভক্ষণ করা, যা দ্বারা পেটের ক্ষুধা নিবারণ হয়, তাই মাটি-ইট ইত্যাদি খেলে রোজা ভঙ্গ হবে, তবে কাফফারা আসবে না। অথবা ব্যক্তি কোন চাহিদা পূরণ বা নেশার কারণে যা কিছু খেয়ে থাকে। তাই বিড়ি-সিগারেট-হুক্কা খেলেও রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাফফারা আসবে। সমকামিতায় লিপ্ত হলে কাযা-কাফফারা দুটিই ওয়াজিব হবে। সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও আযান শোনা যায়নি বা এখনো ভালোভাবে আলো ছড়ায়নি এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে খানাপিনা করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হলে কাযা-কাফফারা দু’টোই ওয়াজিব হবে। স্ত্রীর মুখের থুথু গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে, এবং কাযা-কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হবে। ঔষধ খেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা - কাফফারা দুটিও ওয়াজিব হবে। উপরোক্ত কারণে কাযা-কাফফারা দুটিই ওয়াজিব হয়।
বিস্তারিত পড়ুনসাম্প্রতিক প্রবন্ধ
Hm Sulayman - ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
Hm Sulayman - ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Hm Sulayman - ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Hm Sulayman - ১৬ এপ্রিল, ২০২৫
Hm Sulayman - ১৬ এপ্রিল, ২০২৫
© ২০২৫ শরয়ী সমাধান - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত