

প্রবন্ধ
ফরেক্স এবং বাইনারি ট্রেডিং এর শরয়ী বিধানঃ ১ম পর্ব
১১ জুন, ২০২৫
বর্তমান সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিটকয়েনের মতই আরো দুটি জনপ্রিয় লেনদেন হচ্ছে বাইনারি ট্রেডিং এবং ফরেক্স ট্রেডিং। অনলাইন ভিত্তিক এই লেনদেন অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত, যে কোন লেনদেন করার পূর্বে বা কোন কাজ করার পূর্বে তার ব্যাপারে শরয়ী অবস্থান এবং বিধান কেমন, সেটা জেনে নেয়া উচিত সবার পূর্বে। এই প্রবন্ধে ইনশাআল্লাহ আমরা বাইনারি ট্রেডিং এবং ফরেক্স ট্রেডিংয়ের বিস্তারিত বিধান আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। প্রথমেই বাইনারি ট্রেডিং নিয়ে আলোচনা করব। পরিচয়ঃ বাইনারি ট্রেডিং এটি মুলত একপ্রকার মার্কেট এ্যানালাইসিস। অর্থাৎ অনলাইনে বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ার তথা কারেন্সি কোম্পানি থাকে। কারেন্সি পেয়ারগুলো মুলত একটি ব্যাবসায়িক ইনভেস্ট বা এন্ট্রির মত। যেখানে কারেন্সিতে মানুষ এন্ট্রি নেয়। আরো সহজে বলি। অনলাইনে যেই বেট বা জুয়া সাইট আছে, সেখানে নির্দিষ্ট জিনিস বা বিষয়ের উপর মানুষ বাজি ধরে, বাজি ধরার আগে সে ঐ সাইটের পূর্ব-পর মোটামুটি যাচাই করে নেয় যে বাজি ধরাটা কেমন হতে পারে, কিভাবে কত দামে বাজি ধরবে। কারেন্সি পেয়ার (Currency Pair) হলো ফরেক্স (Foreign Exchange) মার্কেটে দুটি মুদ্রার তুলনামূলক মান। এটি বোঝায়, একটি মুদ্রার দাম অন্য মুদ্রার সঙ্গে কতটা। ধরুন, EUR/USD = 1.10, EUR (ইউরো)ঃ এটি হলো বেস কারেন্সি। এর অর্থ, আপনি মূলত "ইউরো" কিনছেন বা বিক্রি করছেন। USD (মার্কিন ডলার)ঃ এটি হলো কোট কারেন্সি। এর মানে, ১ ইউরো কেনার জন্য ১.১০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। আপনি যদি মনে করেন ইউরো শক্তিশালী হবে বা তার দাম বাড়বে, তাহলে আপনি EUR/USD বাই করবেন। আপনি যদি মনে করেন ইউরো দুর্বল হবে বা তার দাম কমবে, তাহলে আপনি EUR/USD সেল করবেন। একটি কারেন্সি পেয়ার দুইটি মুদ্রার সমন্বয়ে তৈরি হয়। প্রথম মুদ্রাটি বেস কারেন্সি। দ্বিতীয় মুদ্রাটি কোট কারেন্সি। কারেন্সি পেয়ার মানে কি অনেকেই জানে না। আপনি বিদেশ ভ্রমণে যাবেন এবং ডলার কিনতে চান। যদি ১ USD = ১০০ BDT হয়, এর অর্থ হলো ১ মার্কিন ডলার কেনার জন্য ১০০ বাংলাদেশি টাকা প্রয়োজন এটিই একটি কারেন্সি পেয়ার। তো বাইনারি ট্রেডিংয়ে যেকোনো কারেন্সি পেয়ারে এন্ট্রি নেয়ার সময় একজন ট্রেডার ওই কারেন্সি পেয়ারটির বর্তমান অবস্থান, পূর্বের অবস্থান ভালো করে যাচাই-বাছাই করে তারপর এন্ট্রি গ্রহন করে থাকেন। এই যাচাই-বাছাই করাকে ট্রেড এর ভাষায় বলা হয় “ট্রেডিং এনালাইসিস” । অর্থাৎ, কারেন্সি পেয়ারটির প্রাইস কোনদিকে যাবে সেটি আপনি নিজে ভালো করে বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত হিসাবে এন্ট্রি নিচ্ছেন BUY কিংবা SELL এবং সেই সাথে আপনি এটাও ধারনা করে নিচ্ছেন এই কারেন্সি পেয়ারটির সম্ভাব্য মুভমেন্ট কোনদিকে হতে পারে। ট্রেডিং তথা কোন বস্তুর অনুমান ভিত্তিক দর নির্ধারণ করার জন্য এখানে নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হয়। ঐসময়ের মধ্যেই আপনাকে আপনার কারেন্সি পেয়ারের প্রাইস অনুমান করে ট্রেড করতে হবে। বাইনারি ট্রেডের মুলমন্ত্র হচ্ছে মার্কেট প্রাইসের ফাস্ট মুভমেন্ট। এখানে ট্রেডাররা বেশিরভাগ 30 সেকেন্ড থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ 5 মিনিট পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে তারা তাদের মার্কেট প্রাইস একশনের আনুমানিক গতিবিধি লক্ষ্য করে ট্রেড কোট করে থাকেন। ওই সময়ের মধ্যে অনুমান সঠিক হলে প্রফিট এবং ভুল হলে লস হয়ে থাকে। যার মানে হচ্ছে, আপনি যদি 2 মিনিটের জন্য কোনও ট্রেড দিয়ে থাকেন তাহলে ঠিক 2 মিনিট পরই সেটা ক্লোজ হয়ে যাবে। আপনার প্রফিট হোক কিংবা আপনার লসই হোক। উদাহরণস্বরুপ কোন ব্যক্তি কোন স্বর্ণের ব্যাপারে বাজি ধরবে। এখন সেই ব্যক্তি কোনও সোনা সম্পর্কে ট্রেড করার জন্য পূর্বাভাস বা তার অনুমান পেশ করেন যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার দাম কত হবে। এই পূর্বাভাস দেওয়ার অধিকার বা টিকিট একটি নির্দিষ্ট অর্থ (যেমন ৪৪ ডলার) দিয়ে কিনতে হয়। যদি তার পূর্বাভাস সেই নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক হয়, তবে তাকে নির্ধারিত বাইনারি পুরস্কার (যেমন ১০০ ডলার) দেওয়া হবে, যার মধ্যে তার টিকিটের খরচ (যেমন ৪৪ ডলার) কেটে বাকী ৫৬ ডলার তার লাভ হবে। আর যদি তার পূর্বাভাস ভুল হয়, তবে টিকিটের মূল্য (যেমন ৪৪ ডলার) হারিয়ে যাবে। অর্থাৎ বাইনারি ট্রেডার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি ট্রেডের জন্য কোট করে থাকেন, যদি তার প্রাইসের অনুমান সঠিক না হয় তাহলে ঠিক ওই পরিমাণ অর্থই আপনার লস হবে। এই ছিলো বাইনারি ট্রেডিংয়ের পরিচয় প্রকৃতি। পরবর্তী পর্বে শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে এটার বৈধতা কতটুকু পরবর্তী পর্বে সেটা নিয়ে আলোচনা করব আমরা ইনশাআল্লাহ।
বিস্তারিত পড়ুনদৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল (৬ পর্ব একত্রে)
১১ জুন, ২০২৫
দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ ( পর্ব-১) রাতে অনেকেই দ্রুত ঘুমিয়ে যায় অনেকে দেরিতে ঘুমাই। যখনই ঘুমাতে যাই, ঘুমানোর পূর্বে কয়েকটি আমল করতে পারি। সুরা ইখলাস সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস পাঠ করে শরীরে ফুঁক দেয়া। দুই হাত দিয়ে যতদুর সম্ভব শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়া। আয়াতুল কুরসি পাঠ করা সুরা বাক্বারা এর শেষ দুই আয়াত পাঠ করা। আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, "রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।" (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭) রাসুল (সা.) বলেন, "তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।" (বুখারি, হাদিস : ২৩১১) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। কোনো ব্যক্তি ঘুমানোর আগে এ দুই আয়াত পড়লে তা তাদের গোটা রাতের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, "যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট।" (বুখারি, হাদিস : ৫০৪০) আল্লাহ পাক তৌফিক দান করুন। আমিন। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ (পর্ব-২) প্রতি চন্দ্র মাসে ধারাবাহিক ৩ টি রোজা রাখতে হয়। এর ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে উক্ত রোজাগুলিকে আইয়ামে বীজের রোজা বলে। আইয়ামে বীজ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ। ধারাবাহিক এই ৩ দিন রোযা রাখা সুন্নত। সুনানে নাসাঈ শরিফের মধ্যে হাদিস এসেছেঃ عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: صِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صِيَامُ الدَّهْرِ، وَأَيَّامُ الْبِيضِ صَبِيحَةَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ. হযরত জারীর ইব্ন আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিতঃ "প্রত্যেক মাসের তিন দিন সওম (রোযা) পালন করা সারা জীবন সওম (রোযা) পালন করার সমতুল্য।" আর আইয়্যামুল বীজ- তেরো, চৌদ্দ এবং পনের তারিখ। সহিহ বুখারি শরিফের মধ্যে এসেছেঃ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ : قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَلَمْ أُنَبَّأْ أَنَّكَ تَقُومُ اللَّيْلَ وَتَصُومُ ؟ " فَقُلْتُ : نَعَمْ. فَقَالَ : " فَإِنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ هَجَمَتِ الْعَيْنُ، وَنَفِهَتِ النَّفْسُ، صُمْ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، فَذَلِكَ صَوْمُ الدَّهْرِ، أَوْ كَصَوْمِ الدَّهْرِ ". قُلْتُ : إِنِّي أَجِدُ بِي - قَالَ مِسْعَرٌ : يَعْنِي قُوَّةً - قَالَ : " فَصُمْ صَوْمَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَكَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، وَلَا يَفِرُّ إِذَا لَاقَى ". " অর্থাৎ প্রতি মাসে ৩ টি করে রোজা রাখা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।" আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ (পর্ব-৩) জান্নাতী কে হবে!! এমন একটি দোআ এবং ইস্তেগফার আছে যদি কোন ব্যক্তি সেই ইসতেগফার বা দোআ দিনের বেলা মন থেকে বলে আর ঐ দিন সন্ধ্যার আগে মারা যায়, সে জান্নাতীদের শামিল হবে। তেমনি যে তা রাতের বেলায় মন থেকে বলে আর ভোর হওয়ার আগেই মারা যায় সে জান্নাতীদের শামিল হবে। ইস্তেগফারটি নিন্মরুপঃ اللّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ. উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি ওয়ানা আবদুকা, ওয়ানা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া'দিকা মাসতাতা'তু, আউযুবিকা মিন শাররি মা সনা'তা আবুউ লাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ লাকা বিযানবিই, ফাগফিরলি, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনুউবা ইল্লা আনতা! ( সহীহ বুখারী : ৬৩০৬ ) আল্লাহ ইস্তেগফার মুখস্ত করে প্রতিদিন আমলের তৌফিক দান করুন। আমিন। (বিঃদ্রঃ আরবি এই ইস্তেগফার উচ্চারণ কখনোই বাংলায় সম্ভব নয়। বাংলায় যেটা লিখেছি সেটা উচ্চারণ বিকৃতি। কেউ ব্যাকারণ নীতিমালা না জানলে শুদ্ধভাবে পাঠ করতে পারবে না। উক্ত ইস্তেগফার এর সঠিক উচ্চারণ শুনতে চাইলে নিকটস্থ কোনো হাফেজ বা আলেমের শরণাপন্ন হোন) দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ (পর্ব-৪) দুরুদ পাঠের ফজিলতঃ আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন- من صلى علي صلاة صلى الله عليه بها عشراً "যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন।"-সহীহ মুসলিম ১/১৬৬; জামে তিরমিযী ১/১০১ অন্য হাদীসে আছে, হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- من صلى علي صلاة واحدة صلى الله عليه عشر صلوات، وحطت عنه عشر خطيئات، ورفعت له عشر درجات. "যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে।"-সুনানে নাসায়ী ১/১৪৫। দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় আমলঃ (পর্ব-৪) হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنّةِ إِلّا أَنْ يَمُوتَ. "প্রতি ফরয নামাযের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।" (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ী, হাদীস ১০০) ফজরের নামাযের পর সূযোর্দয় পর্যন্ত মসজিদে বসে যিকির করতে থাকা, এরপর দুই রাকাত নামায পড়া। আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ مَنْ صَلّى صَلَاةَ الْغَدَاةِ فِي جَمَاعَةٍ، ثُمَّ جَلَسَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ، انْقَلَبَ بِأَجْرِ حَجّةٍ وَعُمْرَةٍ. قال المنذري في الترغيب (৬৭২) والهيثمي في المجمع (১৬৮৯৭): إسناده جيد. "যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামায আদায় করল, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করল, এরপর দুই রাকাত নামায আদায় করল, সে ব্যক্তি হজ্ব ও ওমরার সওয়াব নিয়ে ফিরল।" (মুজামে কাবীর, তবারানী, হাদীস ৭৭৪১) দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ (পর্ব-৬) রাতে ঘুমানোর পূর্বে অজু করে ঘুমানো এবং ডান কাত হয়ে ঘুমানো। সহিহ বুখারি শরীফে এব্যাপারে নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছেঃ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের উযূর মতো উযূ করে নেবে। তারপর ডান কাত হয়ে ঘুমাবে।" ( বুখারি :২৪৭ ) মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ "ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহু আমাকে বলেছেন; তুমি অবশ্যই অজু অবস্থায় শয়ন করবে। কারণ মানুষ যে অবস্থায় মারা যাবে; সে অবস্থায় তাকে উঠানো হবে কেয়ামতে" ( মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ১৯৮৮৪ )
বিস্তারিত পড়ুনসেক্যুলার দলসমূহ সমর্থনের হুকুম
১১ জুন, ২০২৫
একটি আদর্শ গৃহীত না বর্জিত সেটা নির্ধারণ হবে তার মূলনীতির উপর ভিত্তি করে। যদি কোন আদর্শে বিদআহ থাকে তাহলে সেই আদর্শ বর্জিত এবং এর ধারকবাহক বা নীতিনির্ধারকদের বলা হয় বিদআতী। তবে এই আদর্শ সংশ্লিষ্ট সকলেই বিদআতী নয়। যদিও দলগতভাবে তাদেরকে বিদআতী বলা হবে। তবে ব্যক্তি বিশেষ সকলের হুকুম একই হবে না। একইভাবে কোন আদর্শে কুফরের সংমিশ্রন থাকলে উক্ত আদর্শ আবশ্য পরিত্যাজ্য। চাই কুফরের পরিমান কম হোক বা বেশী। অনেকে মনে করেন কোন আদর্শে ১/২ বিষয় কুফর থাকলে সমস্যা নেই। তাদের উক্ত মনোভাব মোটেই সঠিক নয়। এটি একটি প্রসিদ্ধ ভ্রান্তি। কারণ ঈমান-কুফর কখনো একই সাথে থাকে না, থাকতে পারে না। ঈমানের পূর্ব শর্ত হচ্ছে কুফর মুক্ত হওয়া। সুতরাং যতক্ষণ ১টি হলেও কুফর থাকবে ততক্ষণ তা মৌলিকভাবে কুফরী আদর্শ হিসেবেই পরিগনিত হবে। এটিই বিশুদ্ধ কথা। এই আদর্শের মূল ধারকবাহক ও নীতিনির্ধারকরা সুনিশ্চিতভাবে কাফের। তবে না বুঝে দুনিয়াবী স্বার্থে এত লিপ্ত প্রত্যেকের উপর কুফর-রিদ্দাহর হুকুম দেয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, তারা সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে আছে এবং তাদেরকে দলগতভাবে মুরতাদ বলা উচিত। সেকুলারিজমের মূল হচ্ছে ধর্মমুক্ত পৃথিবী। ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্মের কোন গণ্ডি থাকবে না। এইজন্য 'সেকুলারিজম'কে বলা হয় 'ধর্মহীনতা' বা 'আললা-দ্বীনীয়্যাহ'। বাংলাদেশে যে সমস্ত দল নিজদের সুশীল প্রমাণ করতে সেকুলার বলে তারা শিরকে আকবারে লিপ্ত। মুফতী তাকী উসমানী হাফি. তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিমে 'ইমারাহ' তথা 'নেতৃত্ব' এর অধ্যায়ের শুরুতেই 'সেকুলারিজম'কে শিরকে আকবার বলে প্রমাণ করেছেন। বিএনপি হলো দলগত মুরতাদ। তারা দলগতভাবে সবাই কুফরে লিপ্ত। আর তাদের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা সুনির্দিষ্টভাবেই মুরতাদ। একজন সেক্যুলার জন্মগত মুশরিকের চাইতেও জঘন্য কাফির। তাই জেনেবুঝে কোন মুসলিমের জন্য বিএনপিকে সমর্থন করা, তাদের সাথে একাত্মতা পোষন করা, তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়া ও তাদের দালালী করা জায়িয নেই। বরং ক্ষেত্র বিশেষে তার ঈমানও চলে যাওয়ার আশংকা প্রবল যদি বিএনপির চিন্তা-ফিকিরের সঙ্গে জেনেবুঝে একাত্মতা পোষণ করে। মুলঃ শাইখ হাসসান সাবিত যুবাইর হাফিঃ শরয়ী সম্পাদনাঃ বান্দা Hm Sulayman
বিস্তারিত পড়ুনজমি বন্ধক রেখে তা ভোগ করা যাবে কিনা
১১ জুন, ২০২৫
২০১৮ সালে একবার তাবলীগ সফরে গিয়েছিলাম। গ্রামের নাম মনে আসছে না। সেখানে অনেক লোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিলো বেশ আন্তরিকভাবেই। দ্বীন শিখতে চাইত তারা। সবকিছু খোজ নেয়ার পর তাদের জীবিকা কিভাবে নির্বাহ হয় সেটা জানার চেস্টা করলাম। সবাই বলতে গেলে কৃষি কাজ করে। পরে একজন ভাই বললেন আমরা তো সবাই কৃষি কাজ করি, জমি বর্গা নেই আর বন্ধকী জমি রেখে চলি। আমি বললাম বন্ধকী জমি তো রিস্ক, শরীয়তের অনেক বিধি-নিষেধ আছে সে ব্যাপারে। তখন তিনি বললেন হযরতঃ আমরা কট রাখি! বললাম কট কি জিনিস? তখন তিনি বললেনঃ জমি বন্ধক রাখার যে পদ্ধতি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে সেটা হলো বন্ধকদাতা বন্ধক গ্রহীতার নিকট থেকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে আর বন্ধকগ্রহীতা জমি ভোগ করতে থাকে। যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন জমি হস্তান্তর করে। এটাকে কোথাও কোথাও কট রাখাও বলা হয়। এছাড়াও তিনি আরো একটি পদ্ধতির কথা বললেন যেঃ আরেকটি পদ্ধতিতে আমাদের এখানে জমি বন্ধক রাখা হয় ৷ এটিও উপরের মতোই। তবে পার্থক্য হল, এক্ষেত্রে যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন বছর হিসাব করে বন্ধকগ্রহীতা কিছু টাকা কম নেয়। যেমন-কেউ এক কাঠা জমি বন্ধক নিল দশ হাজার টাকায় এবং সে দু বছর এ জমি ভোগ করে। দু বছর পর টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় পাঁচশ টাকা করে এক হাজার টাকা কম নেয়। কেউ কেউ মাসে মাসে ১০০ টাকা করে ভাড়া প্রদান করে! অথবা কেউ কেউ জামানত হিসেবে ৩/৪ লাখ টাকাও রাখে, জমিদাতাকে বাৎসরিক ভাড়াও প্রদান করে, তবে পরবর্তীতে ঐ জামানতের টাকা ফিরিয়ে নেয় আবার! আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। বস্তুত এই জাতীয় লেনদেনই চলছে সমাজে। এক্ষেত্রে মুল মাসআলা হলোঃ ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার। প্রথম পদ্ধতিটি নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ ছুতা। কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র মূল্যে ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া জামানত হিসেবে যে অর্থ ভাড়াদাতার নিকট জমা রাখা হয় তা বন্ধক হিসেবে থাকে। আর বন্ধকী বস্তু ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। এখন জমিদাতা ঐ টাকা ব্যবহার করলে তা সুদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সুতরাং দুটি কারবারই নাজায়েয। অবশ্য বৈধভাবে করার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে শুরু থেকেই বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজ চুক্তি করবে। এক্ষেত্রে জমির মালিক জমি ভাড়া দিবে। তার যত টাকা প্রয়োজন সেজন্য যত বছর ভাড়া দিতে হয় একত্রে তত বছরের জন্য ভাড়া দিবে। যেমন-এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ৮ হাজার টাকা। মালিকের ৩২ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাহলে সে ৪ বছরের জন্য জমি ভাড়া দিবে। এক্ষেত্রে অগ্রিম ৩২ হাজার টাকা নিয়ে নিবে। এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় ভাড়া থেকে সামান্য কম বেশিও হতে পারে। এরপর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ দাতা জমি ফেরত দিবে, কিন্তু প্রদেয় টাকা ফেরত পাবে না। অবশ্য সময়ের আগে ফেরত দিলে যে কয়দিন ভাড়ায় ছিল সে পরিমাণ ভাড়া কর্তন করে অবশিষ্ট টাকা ভাড়াটিয়া ফেরত পাবে। শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫, ২১/১০৮; কিতাবুল আসল ৩/১৬৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ৪৬৮ উনাকে বিস্তারিত বিষয়টি বুঝালে অনেক আফসোস করেন। পরে মজলিসে বিস্তারিত আলোচনা করি। গ্রামবাসী সবাই বলেন যে আমরা সামনে থেকে বাদ দিব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তৌফিক দিন আমাদেরকেও।
বিস্তারিত পড়ুনমাসবুকের নামাজ সংক্রান্ত কয়েকটি জরুরী মাসআলা
১১ জুন, ২০২৫
প্রথম বিষয়ঃ অনেকে মসজিদে যেয়ে রুকু অবস্থায় ইমামকে পায়। এমতবস্থায় প্রায় সবাই তাকবির বলে হাত বেধে দাড়ায় তারপর রুকুতে শরিক হয় যার ফলে রুকু মিস করে অনেক সময়। অনেকে আবার রুকুতে যেতে যেতে তাকবির বলে রুকুতে শরিক হয়। দুটি পদ্ধতিই ভুল। ইমামকে রুকুতে পেলে ফরজ কাজ হলো তাকবিরে তাহরিমা বলা। এটা ফরজ। এটা দিয়ে নামাজে শরিক হবে। অর্থাৎ প্রথমে সোজা দাড়াবে। দাড়ানো অবস্থায় হাত তুলে তাকবির বলবে। তবে হাত বাধবে না। বরং হাত তুলে আল্লাহু আকবার বলে হাত ছেড়ে দিবে। আবার তাকবির বলে রুকুতে যাবে। রুকুতে যাওয়ার জন্য এই তাকবির বলা সুন্নাত। না বলতে পারলেও সমস্যা নাই। কিন্তু সোজা হয়ে প্রথমে তাকবিরে তাহরিমা বলা ফরজ। রুকুতে যেতে যেতে রুকুর তাকবির বলে নামাজে শরিক হলে নামাজ হবে না। পুনরায় পড়তে হবে। যদি অন্তত ইমামকে রুকুতে আধা সেকেন্ড ও পায় তাহলেও ঐ রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। অর্থাৎ সে রুকুতে যাওয়ার আধা সেকেন্ড পর ইমাম রুকু থেকে উঠলেও রাকাত পেয়েছে গন্য হবে। মূল শর্ত হলো ইমামকে রুকুতে পাওয়া অন্তত অল্প সময়ের জন্য হলেও। সামান্য সময় পেলেও সে ঐ রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। অনেকে বলে তিন তাসবিহ সময় পরিমাণ পেতে হবে। কথাটি সঠিক নয়। কিছু সময় পরিমাণ পেলেই হবে। দ্বিতীয় বিষয়ঃ যারা মাসবুক তারা ইমাম সালাম ফিরানো শেষ করার আগেই উঠে দাড়ায়, ১ সালাম শেষ হতেই দাড়িয়ে যায়। এটি ভুল পদ্ধতি। উভয় সালাম ফিরানো শেষ হবার পরেই মাসবুক উঠে দাড়িয়ে বাকি নামাজ শেষ করবে। তৃতীয় বিষয়ঃ মাসবুক ব্যক্তি অনেক সময় ভুলে ইমামের সঙ্গে সালাম ফিরিয়ে ফেলে। যদি ইমামের সঙ্গে সঙ্গে অথবা ইমামের আগে সালাম ফিরায় তাহলে নামাজে সমস্যা হবে না এবং শেষে সাহু দিতে হবে না। কিন্তু যদি ইমামের পরে সালাম ফিরায় তাহলে অবশ্যই শেষে সাহু সিজদা দিতে হবে। এটা আমরা কেউই করি না বলতে গেলে। আর যদি মাসবুক মনে করে ইমামের সঙ্গে সালাম ফিরানো নিয়ম তাহলে তার নামাজ নস্ট হয়ে যাবে। পুনরায় পড়া ওয়াজিব। তারমানে ইমামের এক সালাম ফেরানো শেষ, তারপর মুক্তাদি সালাম ফেরাচ্ছে এটা হলে সাহু সিজদা দিতে হবে। আর যদি ইমামের সাথে সাথেই দেরি না করে সালাম ফিরায় তাহলে সাহু দিতে হবে না। মাসবুক ভুলে ইমামের পরে উভয়দিকে বা একদিকে সালাম ফিরালেই সাহু সিজদা দিবে। চতুর্থ বিষয়ঃ অনেক সময় মসজিদে যেয়ে ইমামকে সিজদারত অবস্থায় পেলে দাড়িয়ে থাকি যে কখন সিজদা থেকে উঠবে তখন শরিক হব! এটি ভুল কাজ। বরং উচিত হলো ইমামকে যে অবস্থায় পেয়েছে সেভাবেই নামাজে শরিক হওয়া। যদিও সিজদারত অবস্থায় পেলে ঐ রাকাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে না। কোন রাকাত ধর্তব্য হতে হলে কমপক্ষে ঐ রাকাতের রুকু পেতে হবে। উক্ত বিষয়গুলি খেয়াল রাখি।
বিস্তারিত পড়ুনকাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করার বিধান
১১ জুন, ২০২৫
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করতে হলে সেই মোজায় তিনটি শর্ত পূরণ হতে হবে। এমন মোজার ওপর মাসেহ করলে অজু আদায় হবে। শর্তগুলো হলোঃ মোজাগুলো এত ঘন বা মোটা হতে হবে যে, এর ওপর পানি ঢাললেও তা ভেদ করে পায়ে পৌঁছাতে পারবে না। মোজাগুলো এমন মজবুত হতে হবে যে, জুতা ছাড়াই সেগুলো পরে তিন মাইল পর্যন্ত হাঁটা সম্ভব হয়। মোজাগুলো এমন হতে হবে যে, কোনো কিছু দিয়ে বেঁধে না রাখলেও তার পুরুত্ব ও শক্ত হওয়ার কারণে নিজে থেকেই পায়ে টিকে থাকতে পারে। তবে এটি শুধু কাপড়ের টান বা আঁটসাঁট থাকার কারণে টিকে থাকবে না। তাই যদি কোনো কাপড়ের মোজায় এসব শর্ত পাওয়া না যায়, যেমনঃ এমন মোজা, যার ভেতর দিয়ে পানি পায়ে পৌঁছে যায়। অথবা এমন মোজা, যা পরে জুতা ছাড়া তিন মাইল হাঁটা সম্ভব নয়। অথবা এমন মোজা, যা শক্তি বা পুরুত্বের অভাবে নিজে থেকে পায়ে টিকে থাকতে পারে না এবং বাঁধার মাধ্যমে পায়ে রাখতে হয়, তাহলে সেই মোজার ওপর মাসেহ করা বৈধ নয়। এ কারণে প্রচলিত সুতির বা উলের তৈরি মোজা, যেগুলোতে এই শর্তগুলো অনুপস্থিত এবং যেগুলোর ওপর বা নিচে চামড়া লাগানো থাকে না, সেগুলোর ওপর মাসেহ করা বৈধ নয়।
বিস্তারিত পড়ুনকুরবানীর গোশত তিনভাগে বন্টনের হুকুম
১১ জুন, ২০২৫
কিছুদিন বাদে কুরবানী। কুরবানির দিন আসলে প্রায় প্রতিটি এলাকায় একটি বদ প্রথা দেখা যায়। মানুষের বাড়ি বাড়ি থেকে গোস্ত সংগ্রহ করে অথবা মসজিদ থেকে মাইকে মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে প্রত্যেক মানুষের গোশতের তিন ভাগের একভাগ মসজিদে জমা করা হয়। কোন কোন জায়গায় দেখা যায় যে কোন ব্যক্তি যদি তার অংশের গোশত থেকে মসজিদে না দিতে চায় তাহলে অনেক সময় তাকে নিন্দাবাদ জানানো হয় ,তাকে তিরস্কার করা হয় এবং অনেক সময় কোন কোন ব্যক্তিকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে সামাজিকতা এবং চক্ষু লজ্জার কারণে মানুষ মসজিদে গোশত দিয়ে আসতে বাধ্য হয়। অতঃপর মসজিদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ সে গোশত ফকির মিসকিনদের মধ্যে এমনকি অনেক কোরবানি দাতার মধ্যেও বিতরণ করে থাকে। সবার আগে আমাদেরকে একটা জিনিস বুঝতে হবেঃ কোরবানি করা আলাদা একটি বিধান আর কোরবানির গোশত দান করা ভিন্ন হুকুম। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানির গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করা এটি মুস্তাহাব। অর্থাৎ সামর্থ্যবান ব্যক্তি তার গোশতকে তিন ভাগ করবে। এক অংশ গরিব-মিসকিন ও অসহায়দেরকে দান করা, এক অংশ গরীব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া। আর এক অংশ নিজের জন্য রাখা। এটি হল মুস্তাহাব আমল অর্থাৎ যদি এরকম তিন ভাগে ভাগ করতে পারে তাহলে ভালো এবং সে অনেক সওয়াবের অধিকারী হবে আর যদি না করে তাহলে কোন প্রকার গুনাহ হবে না এবং শরীয়তের পক্ষ থেকে তাকে নিন্দা ও জানানো হবে না। বরং, কোন ব্যক্তি যদি তার পরিবারের সদস্য বেশি হওয়ার কারণে তার কুরবানীর অংশের পুরো গোস্তটাই পরিবারের জন্য রেখে দেয় তাহলেও কোন প্রকার নূন্যতম সমস্যা নাই। এটি সম্পূর্ণ মুস্তাহাব একটি আমল এ ব্যাপারে কোন মানুষকে জোরাজুরি করা, চাপ প্রয়োগ করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ। কোন মানুষের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে গ্রহণ করা শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম। আর এভাবে মসজিদে গোস্ত একত্রিত করে জমা করে সকলকে বিতরণ করা এটিও শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম পদ্ধতি নয়। বরং কোরবানি দাতা নিজে সাধ্যমত পছন্দমত যাকে ইচ্ছা তাকে দান করবে এটি তার ইচ্ছাধীন। অতএব এই নাজায়েজ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসা আমাদের সকলের জন্য আবশ্যক। বিষয়টি মাসিক আল কাউসার থেকেও বিস্তারিত দেখতে পারেন। সেখানের ফতোয়ায় বলা হয়েছেঃ কোরবানি করা এবং কোরবানির মাংস দান করা ভিন্ন দুটি আমল। সওয়াবের নিয়তে পশু জবাইয়ের দ্বারা কোরবানির ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। আর কোরবানির মাংস বিতরণের ব্যাপারে ইসলামে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তা বিতরণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং দান করলে সওয়াব পাওয়া যাবে। কুরবানী করা এবং কুরবানীর গোশত দান করা ভিন্ন ভিন্ন দুটি আমল। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইখলাসের সাথে পশু জবাই করার দ্বারাই কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। আর কুরবানীকারীর জন্য তার কুরবানীর গোশতের ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হল, সে নিজ পরিবার-পরিজনকে নিয়ে খাবে এবং পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, যারা কুরবানীর সামর্থ্য রাখে না তাদেরও দান করবে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (কুরবানীর গোশত) তোমরা খাও, জমা করে রাখো এবং (গরীব-অসহায়দেরও) দান করো।Ñহাদীসঃ ১৯৭১ অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা খাবে এবং অন্যদেরও খাওয়াবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ১৯৭৩ তবে দানের ব্যাপারে কুরবানীকারীর উপর শরীয়ত কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করেনি; বরং প্রত্যেককে তার অবস্থা অনুপাতে দান করতে বলা হয়েছে। অবশ্য সামর্থ্যবানদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তম হল, মোটামুটি তিন ভাগ করে এক অংশ গরিব-মিসকিন ও অসহায়দেরকে দান করা, এক অংশ গরীব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া। আর এক অংশ নিজের জন্য রাখা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কুরবানীর গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিতেন। আরেক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং এক ভাগ ভিক্ষুক ও অসহায়দের দান করতেন। Ñআল মুগনী ১৩/৩৭৯ উল্লেখ্য, এ বণ্টন উত্তম জরুরি বা আবশ্যক নয়। তেমনি একেবারে ওজন করে তিন ভাগ করাও আবশ্যক নয়। বরং কুরবানীকারীর জন্য এতে তারতম্য করার অবকাশ আছে। আরো উল্লেখ্য যে, এটি যেহেতু একটি মুস্তাহাব আমল তাই সামর্থ্যবানদের এর উপর আমল করা উচিত। আর কারো পরিবারের সদস্য বেশি হলে কিংবা নিজেদের প্রয়োজন বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের প্রয়োজন পরিমাণ গোশত রাখতে পারবে, এটা তাদের জন্য অনুত্তম হবে না। যিলকদ ১৪৩৬ || সেপ্টেম্বর ২০১৫ কুরবানীর গোশত বণ্টনের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকায় প্রচলিত একটি সমাজপ্রথা। সাধারণ দৃষ্টিতে এটি একটি ভালো উদ্যোগ মনে হতে পারে; কিন্তু কোনো সামাজিক প্রথা বা রীতি পালন করার জন্য তা শরীয়তের দৃষ্টিতে শুদ্ধ ও আমলযোগ্য কি না— তাও নিশ্চিত হতে হয়। ভালো নিয়ত থাকলেও শরীয়ত সমর্থন করে না অথবা ইসলামের নীতির সাথে মানানসই নয় এমন কোনো কাজ করা বা এমন কোনো রীতি অনুসরণ করার সুযোগ নেই। প্রশ্নোক্ত সমাজপ্রথাটিতে উদ্দেশ্য ভালো হলেও যে পদ্ধতিতে তা করা হয় এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে মৌলিক কিছু আপত্তি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, সামাজিক এ প্রথার কারণে সকলেই তার কুরবানীর এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজের লোকদের হাতে দিতে বাধ্য থাকে। এবং এর বিলি-বণ্টন ও গ্রহীতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু সমাজপতিদেরই হাত থাকে। গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা শরীয়তসম্মত নয়। কেননা শরীয়তে কুরবানী ও গোশত বণ্টন একান্তই কুরবানীদাতার নিজস্ব কাজ। ঈদের দিন সম্মিলিতভাবে জামাতে নামায আদায় করতে বলা হলেও কুরবানীর জন্য কত মূল্যের পশু কিনবে, সে পশু কোথায় জবাই করবে, গোশত কীভাবে বণ্টন করবে—এ বিষয়গুলো কুরবানীদাতার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শরীয়তে কুরবানীর কিছু গোশত সদকা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃখীদের কুরবানীর গোশত দিতে তাকিদও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কুরবানীদাতার উপর অপরিহার্য করা হয়নি। বরং কুরবানীদাতা কী পরিমাণ গোশত নিজে রাখবে, কী পরিমাণ সদকা করবে এবং কাকে কাকে বিলি করবে আর কী পরিমাণ আগামীর জন্য সংরক্ষণ করবে— এগুলো কুরবানীদাতার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার এবং ব্যক্তিগতভাবে করার কাজ। এটিকে সামাজিক নিয়মে নিয়ে আসা ঠিক নয়। তাই শরীয়তের মাসআলা জানা না থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গোশত বণ্টনের প্রশ্নোক্ত যে পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে, তা পরিহারযোগ্য। নিম্নে সংক্ষেপে প্রশ্নোক্ত প্রথাটির কিছু ক্ষতির দিক উল্লেখ করা হল— ১. অনেক কুরবানীদাতার পরিবারের সদস্য-সংখ্যা বেশি হওয়ায় অথবা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে নিজ পরিবারের জন্য বেশি গোশত রাখার প্রয়োজন হয়; ফলে সে পরিবারের জন্য বেশি গোশত রাখতে চায়। আবার অনেকে তার কোনো দরিদ্র আত্মীয়কে কুরবানীর গোশত দিতে চায়। কিন্তু সামাজিক এই বাধ্যবাধকতার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সামাজিক রীতি অনুযায়ী কুরবানীর এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজে দিতে বাধ্য হয়। অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— إِنَّهُ لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ. কোনো মুসলমানের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল নয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৬৯৫) ২. প্রশ্নোক্ত প্রথায় গোশতদাতা তার দানের অংশটি কাকে দেবে সে স্বাধীনতা হারায়। হয়তো সে তার নিকটাত্মীয় অথবা পরিচিত কাউকে একটু বেশি পরিমাণে দিত, কিন্তু এক্ষেত্রে তার জন্য এমনটি করার সুযোগ থাকে না। ৩. অনেক মানুষ এমন আছেন, যারা প্রত্যেকের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে চান না। আর শরীয়তও কাউকে সকলের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি। কিন্তু সামাজিক এই রীতির কারণে গোশত গ্রহণকারী প্রত্যেকেই অন্য সকলের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বলাবাহুল্য এ ধরনের ঐচ্ছিক বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা মোটেই উচিত নয়। ৪. এ ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপের আরেকটি ক্ষতিকর দিক হল, সমাজের কিছু মানুষ এমন থাকে, যাদের আয় রোজগার হারাম পন্থায় হয়। সেক্ষেত্রে জেনে বুঝে তাদের কুরবানীর গোশত সমাজের সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়। অথচ হারাম উপার্জনের মাধ্যমে কুরবানীকৃত পশুর গোশত খাওয়া জায়েয নয়। মোটকথা, শরীয়তের শিক্ষা মোতাবেক প্রত্যেককে তার কুরবানীর অংশ দান করার বিষয়ে স্বাধীন রাখতে হবে। প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে বা অন্য কোনোভাবে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যাবে না। কুরবানীদাতা নিজ দায়িত্ব ও বিবেচনা মতো যাকে যে পরিমাণ হাদিয়া করতে চায় করবে এবং গরীব-মিসকীনকে যে পরিমাণ সদকা করতে চায় করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকে শত শত বছর যাবৎ এ পদ্ধতিই চলমান আছে। এই পদ্ধতিই অবলম্বন করা জরুরি। শরীয়ত যা চালু করতে বলেনি এমন কোনো প্রথা চালু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭২; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮
বিস্তারিত পড়ুনসরকারি চাকরির বিধানঃ ৪র্থ ও শেষ পর্ব
২২ মে, ২০২৫
সাধারণ চাকুরিঃ খাদ্য মন্ত্রনালয়, বস্ত্র, পাট, ইত্যাদি তথা মন্ত্রনালয়ের যেসব পদগুলো সংবিধান - আইন প্রনয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় অনুরুপভাবে ডাক্তারি, শিক্ষকতা, ট্রাফিক পুলিশ, ঔষধ কোম্পানির চাকুরি, হসপিটালে ইত্যাদি। আমাদের সর্বশেষ আলোচ্য বিষয় হলো সাধারণ সরকারি চাকুরি। অর্থাৎ যেই চাকুরিগুলা পূর্বে অতিবাহিত হওয়া ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত নয় তথা রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন, কুফর প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা, খুন লুটপাটের সঙ্গে যেগুলা সম্পৃক্ত নয়ঃ এমন সরকারি চাকুরি নিয়েই মূলত আলোচনা হবে। আমরা আগেই বলেছি যেঃ সরকারি চাকরিসমূহ তিন ভাগে বিভক্তঃ ১. এমন চাকরি যেখানে সরকারের কুফরি কাজে অংশগ্রহণ বা সহযোগিতা করতে হয়। এ ধরনের চাকরি করা কুফরি, যা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। ২. এমন চাকরি যেখানে কুফরি কাজ না করা লাগলেও হারাম কাজে অংশগ্রহণ বা সহযোগিতা করতে হয়, এমন চাকরি করা হারাম। ৩. এমন চাকরি যেখানে কুফরি এবং হারাম কোনো কাজই করতে হয় না বরং কাজটি মৌলিকভাবে জায়েয। তাগুত সরকারের অধীনে এমন চাকরি থেকেও যথাসম্ভব বিরত থাকাই উত্তম; যদিও চাকরির কারণে কোনো নাজায়েয কাজ করতে না হয়। এসমস্ত সরকারি চাকুরিতে যোগদান করতে শরীয়তে মৌলিকভাবে বাধা নাই। এই চাকুরিগুলো সত্তাগতভাবে জায়েজ। ডাক্তারি করা, ঔষধ বিক্রি করা, ইমামতি করা; এসব কাজই ভালো কাজ সত্তাগত বিবেচনায়। কেউ যদি অসদুপায় অবলম্বন না করে হালালভাবে কাজগুলো করে তাহলে সেটা জায়েজ। তবে এই কাজগুলো অনৈসলামিক রাষ্ট্রে অথবা তাগুত সরকারের অধীনে না করে পারা গেলে সেটাই উত্তম। যথা সম্ভব সরকারের সম্পৃক্ততা থেকে বিরত থাকা উত্তম। তাছাড়া এসব সরকারি কাজের বেতনের বেশিরভাগই দেয়া হয় প্রজাদের থেকে জুলুম করে আদায় করা ট্যাক্স থেকে। আল্লামা আইনি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ বর্তমান যমানায় ট্যাক্স হল, জালেমরা যা নগর-বন্দরে আগমনকারী ব্যবসায়ী এবং বাজারে ক্রয়-বিক্রয়কারীদের থেকে উত্তোলন করে। ইসলামপূর্ব সময়ে এই ট্যাক্সের প্রচলন ছিল। ইসলাম তা বাতিল করে দেয় এবং শরয়ী বিধান অনুযায়ী যাকাত, উশর ও খারাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন জালেম শাসকরা ক্ষমতা দখল করে, তারা পুনরায় এ জুলুম শুরু করে। তারপর থেকেই জালেম ও ফাসেক মন্ত্রীরা এ ট্যাক্সের পরিমাণ নির্ধারণ করতে থাকে, তা বাড়াতে থাকে এবং তার অনেক শাখা প্রশাখা বের করতে থাকে। এমনকি পরিশেষে তারা ছোট-বড় সব কিছুতেই ট্যাক্স আরোপ করে। আর এর মাধ্যমে তারা নবীজির এ বাণীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, ‘যে আমাদের দ্বীনের মাঝে নতুন কোনো বিষয় উদ্ভাবন করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (1) আমাদের শরীয়তে ট্যাক্স হারাম সম্পূর্ণ। ট্যাক্স গ্রহণ করে তাই জালেমের সহযোগী হওয়া যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ لا يدخُل الجنةَ صاحبُ مَكْسٍ”. رواه أبو داود (2937) “ট্যাক্স গ্রহণকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” -সুনানে আবু দাউদ :2937) এইজন্য এসমস্ত সরকারিভাবে চাকুরি থেকে বেঁচে থাকা উত্তম। তাগুতের অধীনে জায়েয কাজেও চাকরী না করা উত্তম, যদিও তাতে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক না থাকে। তাতে তাগুত বর্জন ও তাগুতের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ পূর্ণাঙ্গ হয়। আর যদি তা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাসহ হয়, বা অনিবার্যভাবে তা তাদের বন্ধুত্বের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে তা সম্পূর্ণই নাজায়েয। (2) বাহ্যদৃষ্টিতে এই ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে তো কোনো সমস্যা চোখে পড়ে না। কিন্তু গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, এর দ্বারাও তাগুতি শাসনব্যবস্থার একধরনের সহযোগিতা হয়। হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি রহ.-এর চিন্তাধারার সবচে নির্ভরযোগ্য ভাষ্যকার মাওলানা আবদুল বারি নদবি রহ. বলেনঃ তবে চাকরির ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে এতটুকু সতর্কতার নির্দেশনা রয়েছে যে, যদি জীবনযাপনের অন্য কোনো সুযোগ না থাকে, তাহলে (অপারগ হয়ে) শিক্ষা এবং এজাতীয় অন্যান্য ক্ষেত্র; যেগুলোতে আদালত ও এজাতীয় অন্যান্য দায়িত্বের পদগুলোর মতো স্পষ্টভাবে শরিয়াহর বিধিবিধানের বিরুদ্ধাচারণ করতে হয় না; বেছে নিয়ে এগুলোতে চাকরি করো। (3) এইজন্য শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. কাফির শাসকের অধীনে কাপড় সেলাই করা অথবা পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে দেওয়ার ব্যাপারে বলেন, এগুলো যদিও বাহ্যিকভাবে বৈধ; কিন্তু গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে প্রতিভাত হয়, এগুলো কোনোটাই হারাম থেকে মুক্ত নয়। অর্থাৎ এগুলো ধীরে ধীরে মানুষকে জুলুম, অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। এ প্রসঙ্গে তিনি তার ফাতওয়ার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, কারণগুলোও বিশ্লেষণসহকারে তুলে ধরেছেন। (4) যেখানে একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য হলো তাগুতকে উৎখাত করা, সেখানে তাদের মদদ করা তো কোনো মুসলমানের কাজ হতে পারে না। মুসলমানদের মাথার ওপর জোরপূর্বক চেপে থাকা এসকল তাগুত নব্য ক্রুসেডার কুফফার গোষ্ঠীর তাবেদার পুতুল ছাড়া কিছু নয়। ঈমানের পরে মুসলিম উম্মাহর ওপর এসকল আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করার চাইতে বড় কোনো আবশ্যকীয় বিষয় নেই। (5) তবে মুলকথা হলোঃ এইসমস্ত পদে চাকুরি করে তার পারিশ্রমিক বা বেতন বৈধ আছে। তবে শর্ত হলো কোন হারাম কাজে সহযোগিতা বা অন্যায় কাজে সমর্থন জানানো যাবে না। অন্যায়ভাবে উপার্জন করা যাবে না। বেপর্দায় থাকা যাবে না। যদি কেউ জুলুম করে, ফাঁকি দেয় কাজে, অতিরিক্ত দাম রাখে, বেপর্দায় থাকে, ফ্রি মিক্সিংয়ে চলে; তাহলে এইভাবে তাদের জন্য বেতন হালাল হলেও তাদের গুনাহের উপর অটল থেকে কাজ করা অবৈধ। (6) যেমনটা বলেছেন মাওলানা আবদুল হাই ফিরিঙ্গি মহল্লি রহ. বৈধ চাকরি ও অবৈধ চাকরির পরিচয় প্রসঙ্গে লেখেনঃ جس نوکری میں اجراۓ احکام غیر شرعیہ کی اور اجراۓ احکام ظلم وغیرہ کی نہ ہو وہ درست ہے اور جن میں یہ امور ہوں وہ حرام ہے۔ যে চাকরিতে শরিয়াহবহির্ভূত বিধিবিধান বাস্তবায়ন এবং জুলুম ও এজাতীয় অন্যান্য বিষয়ের বিধিবিধান প্রয়োগ করতে হয়, তা নাজায়িয। আর যে চাকরিতে এই সমস্যাগুলো থাকবে না, তা জায়িয। (7) রেফারেন্সঃ (1) المكس في هذا الزمان: ما يأخذه الظلمة والأعوان من التجار الواردين في البلاد ومن الباعة والشراة في الأسواق بأشياء مقررة عليهم على طريق الظلم والعدوان، وكان هذا قبل الإِسلام في الجاهلية، ثم لما جاء الشرع أبطل هذا وأمرهم أن يؤدوا الزكوات والعشور والخراج على الأوضاع الشرعية، ثم لما استولت الظلمة من الملوك والخونة من الحكام أعادوا هذا الظلم، ثم لم يزل الوزراء الظلمة الفسقة يحددون ذلك ويزيدون عليه ويفرعون تفريعات حتى وضعوه في كل شيء جليل وحقير، ودخلوا تحت قوله – عليه السلام -: “من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فليس منا”. (نخب الأفكار 8/ 113) (2) لَّا یَتَّخِذِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡكَـٰفِرِینَ أَوۡلِیَاۤءَ مِن دُونِ ٱلۡمُؤۡمِنِینَۖ وَمَن یَفۡعَلۡ ذَ ٰلِكَ فَلَیۡسَ مِنَ ٱللَّهِ فِی شَیۡءٍ إِلَّاۤ أَن تَتَّقُوا۟ مِنۡهُمۡ تُقَىٰةࣰۗ وَیُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفۡسَهُۥۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلۡمَصِیرُ ( سورة ال عمران: ٢٨) (3) البتہ نوکریوں میں کم از کم اتنی احتیاط کی ھدایت ہے کہ اگر کوئئ اور صورت معاش کا نھیں تو تعلیمات وغیرہ کی ویسی نوکریاں کرو جن میں عدالتی عہدوں وغیرہ کی طرح شریعت کے احکام کی صراحتًا مخالفت نہ کرنا پڑے. ( মাসিক মাআরিফ, জানুয়ারি, ১৯৪৭) (4) ফতোয়া আজিযি: ৪১৬ পৃষ্ঠা (5) عن ابي بكر قال: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ " ( صحيح البخاري: 49) قال القاضي عياض رحمه الله : هذا الحديث أصل في صفة التغيير ، فحق المغير أن يغيره بكل وجه أمكنه زواله به قولا كان أو فعلا ؛ فيكسر آلات الباطل ، ويريق المسكر بنفسه ، أو يأمر من يفعله ، وينزع الغصوب ويردها إلى أصحابها بنفسه ، أو بأمره إذا أمكنه ويرفق في التغيير جهده بالجاهل وبذي العزة الظالم المخوف شره ؛ إذ ذلك أدعى إلى قبول قوله . كما يستحب أن يكون متولي ذلك من أهل الصلاح والفضل لهذا المعنى . ويغلظ على المتمادي في غيه ، والمسرف في بطالته ؛ إذا أمن أن يؤثر إغلاظه منكرا أشد مما غيره لكون جانبه محميا عن سطوة الظالم . فإن غلب على ظنه أن تغييره بيده يسبب منكرا أشد منه من قتله أو قتل غيره بسبب كف يده ، واقتصر على القول باللسان والوعظ والتخويف . فإن خاف أن يسبب قوله مثل ذلك غير بقلبه ، وكان في سعة ، وهذا هو المراد بالحديث إن شاء الله تعالى (فتح الباري: ١٢/٢) (6) وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الإثْمِ وَالْعُدْوَانِ ) يأمر تعالى عباده المؤمنين بالمعاونة على فعل الخيرات ، وهو البر ، وترك المنكرات ، وهو التقوى ، وينهاهم عن التناصر على الباطل ، والتعاون على المآثم ، والمحارم . "( تفسير ابن كثير :2 / 12-13) (7) وفي فتوى اهل سمرقند: اذا استاجر رجلا ينحت له طنبورا او بربطا ففعل يطيب له الاجر الا انه ياثم في الاعانة على المعصية وانما وجب له الاجر في هذه المسائل.( المحيط البرهاني: 446/11, البحر الرائق: 36/8) وعن محمد: رجل استاجر رجلا لصور له صورا او تماثيل الرجال في بيت او فسطاط فاني اكره ذلك واجعل له الاجر : (هندية: كتاب الاجارة: 450/4،قديم ، الفتاوي التاتارخانية: 130/15) আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন। সমাপ্ত।
বিস্তারিত পড়ুনসরকারি চাকরির বিধানঃ ৩য় পর্ব
১৫ মে, ২০২৫
পার্লামেন্ট সদস্য, বিচারপতি পদে চাকুরি করাঃ গত পর্বে আমরা ডিফেন্স ফোর্স নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। মনে রাখা দরকারঃ আমাদের আলোচনার কিছু মূলনীতি আছে। গতপর্বেও মূলনীতি আলোচনা করেছি। বোঝার সুবিধার্থে আবারো এখানে বলছি। মূলত সরকারি চাকুরির তিনটি পর্যায় হতে পারে। (১) তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। (২) তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়ন নয়, তবে কাজগুলো মৌলিকভাবে হারাম এমন কাজ করা। এটা হারাম কবিরা গোনাহ। তবে কুফুরি নয় (৩) মৌলিকভাবে কাজ হারাম নয়, তবে গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, এর দ্বারাও তাগুতি শাসনব্যবস্থার একধরনের সহযোগিতা হয়। এটা স্পষ্ট হারাম নয়, তবে কখনো কখনো প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তা নাজায়েজ বা মাকরুহ বা বৈধ হতে পারে। এখন এই তিন প্রকারকে সামনে রেখেই মুলত আমরা আলোচনা পেশ করব ইনশাআল্লাহ। এবার আসুন, পার্লামেন্ট সদস্যদের ব্যাপারে কথা। পার্লামেন্টের সদস্যগনের মুল কাজ হলো সংবিধান রক্ষা করা, সংবিধানে নীতিমালা প্রণয়ন করা। সংবিধান প্রণয়ন বা তা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করা কিংবা আইনকানুন, বিধিবিধান ও নীতিমালা রচনা করা, রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং তা কার্যকরকরণে ভূমিকা রাখা। কোনো শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূলই হলো তার আইনকানুন ও বিধিবিধান। ইসলামি শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূল হলো, আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের অধিকার একমাত্র আল্লাহ তাআলার। পক্ষান্তরে তাগুতি শাসনব্যবস্থার ভিত্তিমূলই হলো, এই অধিকার মানবমস্তিষ্কের জন্য সাব্যস্ত করা এবং এক ও অদ্বিতীয় উপাস্য আল্লাহ তাআলা থেকে নিরোধ করা। ইসলাম ও গণতন্ত্রের মৌলিক দ্বন্দ্ব হলো, ইসলাম শেখায়, ইলাহ হলেন একমাত্র আল্লাহ। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অপরদিকে গণতন্ত্র শেখায়, ইলাহ হলো একমাত্র জনগণ। ‘লা ইলাহা ইল্লান্নাস’ (নাঊযুবিল্লাহ)। সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতি শাসনব্যবস্থার অধীনে আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের চাকরি করবে, সে স্পষ্ট কুফরিতে লিপ্ত। কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা তার কুফর প্রমাণিত। (1) পার্লামেন্টে হাকিমিয়্যাত তথা আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের অধিকার আল্লাহ তাআলাকে দেওয়া হয় না। আইনের উৎস কুরআন ও সুন্নাহকে মানা হয় না। দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধিসমূহ ইসলাম থেকে গ্রহণ করা হয় না। কোনো বিধি যদি বাহ্যিকভাবে ইসলামের সঙ্গে মিলেও যায়, তা নিরেট কাকতালীয় ব্যাপার ছাড়া কিছু হয় না। বৈধ-অবৈধ, সিদ্ধ-নিষিদ্ধ আখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর শরিয়ত বিবেচনা করা হয় না। জীবনের সবক্ষেত্রে ক্ষমতাধরদের ফায়সালাই চূড়ান্ত ফায়সালা হিসেবে বিবেচিত হয়; এমনকি এর অন্যথা করা হলে তা ইসলামসম্মত হলেও তাদের বিচারে আইনত দণ্ডনীয় হিসেবে গণ্য হয়। এমনকি মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যাপারে (পারসোনাল ল') যদি ইসলামের ওপর আমল করার স্বাধীনতা থাকে, তাও মুসলমানরা আল্লাহপ্রদত্ত অধিকার হিসেবে পায় না; বরং তাগুতি শাসনব্যবস্থা অনুগ্রহস্বরূপ তাদেরকে এর সুযোগ দিয়েছে বলেই তারা এই অধিকার লাভ করে। এককথায়, তাগুতি শাসনব্যবস্থায় সংবিধান, মন্ত্রণালয়, সংসদ, আদালত সবকিছুই রচিত ও পরিচালিত হয় মানবরচিত বিধান অনুসারে; শরিয়াহ নির্দেশিত নীতি অনুসারে নয়। (2) আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ বলেনঃ আকাইদ ও আহকামের বিদ্রূপ কিংবা অস্বীকার তো এজন্যই কুফর যে, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য বর্জন এবং তাঁদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ। সুতরাং গোটা ইসলামকে অস্বীকার বা বিদ্রূপ করা আর ইসলামের কোনো একটি বিষয়কে অস্বীকার বা বিদ্রূপ করা একই কথা! উভয় ক্ষেত্রেই একথা বাস্তব যে, ঐ ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং ঔদ্ধত্য ও বিরুদ্ধতা প্রকাশ করেছে। ইবলীস তো কাফির মরদূদ হয়েছিল একটি হুকুমের উপর আপত্তি করেই। বিষয়টি এমনিতেও স্পষ্ট। এরপরও আল্লাহ তাআলা কুরআন হাকীমে একাধিক জায়গায় তা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) এইজন্য পার্লামেন্টে যারা শরীয়াহ বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে, যারা কুরআনের বিপক্ষে সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে বিধান জারি করে, জেনে বুঝে শরীয়াহ আইনের চাইতে কুফুরি আইনকে উত্তম মনে করে অথবা যদি মনে করে যেঃ শরীয়াহ অনুযায়ী বিচার করা অপরিহার্য নয় এবং ইচ্ছা স্বাধীনতা আছে, অথচ সে নিশ্চিত জানে যে এটি আল্লাহর বিধান; তাহলে এমন ব্যক্তিরা সুস্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছে। এটি কুফরে আকবার তথা বড় কুফুরি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ… فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ… فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ. ‘যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা করে না, তারাই কাফির, তারাই জালিম, তারাই ফাসিক (সুরা মায়িদাহ: ৪৭) আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা না-করার ক্ষতিই যদি এত ভয়াবহ হয়, তাহলে সেই বিধানের বিপরীত বিধান প্রণয়ন করা ও তা জারি করা কত ভয়াবহ হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ কারণেই সেসব ব্যক্তিবর্গকেও তাগুত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যাদের কাছে অন্যরা মানবরিচত বিধান অনুসারে বিচার প্রার্থনা করে। (3) যেমন আল্লাহ বলেনঃ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়। (সুরা নিসা: ৬০) তাগুত শব্দটি যদিও ব্যাপক; কিন্তু এখানে পূর্বাপর কথা থেকে স্পষ্ট যে, এর দ্বারা শয়তান বা নফস উদ্দেশ্য নয়, পাথরের মূর্তি বা জ্যোতিষিও উদ্দেশ্য নয়। কারণ, তাদের কাছে বিচার প্রার্থনা করা হয় না। এর দ্বারা সেসব মানুষ উদ্দেশ্য, যারা আল্লাহর ফায়সালা ব্যতিরেকে ভিন্ন ফায়সালা প্রদান করে। এজাতীয় ফায়সালাকে কুরআনে জাহিলিয়্যাতের ফায়সালা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন রাব্বে কারিম বলেনঃ أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ তারা কি জাহিলিয়্যাতের ফায়সালা কামনা করে? অথচ বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম ফায়সালাকারী আর কে হতে পারে!( সুরা মায়িদাহ: ৫০ ) এটাই হলো সরকারি চাকুরির যে তিনটি পর্যায় হতে পারে, তার প্রথম পর্যায় তথা তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। (4) নোটঃ (১) উপরোক্ত পদে যেই টিম কাজ করে, সেই টিম বা দল দলগতভাবে মুরতাদ। মানুষকে কাফির বলার প্রকার দুইটি (১) তাকফিরে আমঃ ব্যাপকভাবে তাকফির করা বা কাফির বলা। জড়িত প্রত্যেককে কাফির বলা দলগতভাবে, সুনির্দিষ্ট কাউকে নয়। (২) তাকফিরে মুআইয়ানঃ ব্যক্তিবিশেষ নির্দিষ্টভাবে কাউকে কাফির বা মুরতাদ বলা। এটি খুবই সেন্সিটিভ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ কাউকে কাফির সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হলে নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত ঈলম থাকা আবশ্যক, নতুবা কোনভাবেই একজন সাধারণ মানুষের জন্য কোন ব্যক্তিকে হুটহাট করে কাফির ফতোয়া দেয়া কবিরা গোনাহ, বরং আরো ভয়াবহ। পার্লামেন্ট সদস্যদেরকে দলগতভাবে মুরতাদ বলা হয় দেশে বিধি-বিধান শরয়ী বিধানের বিপরীতে প্রণয়নের কারণে। এরমানে এটা নয় যেঃ এখানে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিই কাফির হয়ে গিয়েছে। দলগতভাবে মুরতাদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ এই দলটি কুফুরি কাজ করেছে, সবাই জড়িত ছিলো। যেমনঃ কোথাও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে ঘটনাস্থলের সবাইকে প্রাথমিক আসামী বলে মামলা করা হয়, দলগতভাবে সবাই আসামী, কিন্তু সেখানে নিরাপরাধ মানুষ অনেকেই আছে। যার কারণে এবার মুল আসামী সাব্যস্ত করতে যেয়ে যাচাই বাছাই শুরু করা হয়। তাকফিরে আম বা দলগত তাকফির বা কাফের এটাকে বলে। তাই ব্যাপকভাবে মুরতাদ বলা হচ্ছে দলগত বিবেচনায়। কিন্তু কখনো কখনো সেই দলে কোন নিরুপায় মুমিন, বা বাধ্যগত মুমিন থাকতে পারে, যে বাধ্য হয়েছে, অথবা যে মনেপ্রাণে কুফুরি বিধান প্রণয়নে বিশ্বাসী নয়। তাহলে এমন ব্যক্তি কাফির হবে না, মুরতাদ হবে না। এই পয়েন্ট বোঝা খুবই জরুরী। পার্লামেন্টের কোন সদস্যকে দেখলেই সাথে সাথে তাকে মুরতাদ বা কাফির বলাটা সুস্পষ্ট ভুল হবে। কারণ এটি তখন তাকফিরে মুআইয়ান তথা ব্যক্তিবিশেষ তাকফির হবে। এটার জন্য ঐ ব্যক্তির গ্রহণযোগ্য ওজর, তার সার্বিক অবস্থা যাচাই করা জরুরি। তবে এমন ব্যক্তি যে কবিরা গোনাহে জড়িত তাতে কোন সন্দেহ নেই। নোট-২ঃ তবে পার্লামেন্ট বা বিচার বিভাগের সদস্যদের যারা কুরআন হাদিসের সুস্পষ্ট অকাট্য কোন বিধি বিধানকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করবে, যা কোন শরয়ী বিধানের উপর ঘৃণাভরে আপত্তি তুলবে, কটাক্ষ করবে, যেই বিধানগুলি শরীয়তের মৌলিক স্বঃতশিদ্ধ বিষয়ঃ এমন বিষয়ে আবার তাদের কোন ওজর আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না, যাচাই করা হবে না । তারা মুরতাদ বলেই গন্য হবে। (২) অনুরুপভাবে যারা সুপ্রিম কোর্ট অথবা জর্জ কোর্ট তথা সর্বোচ্চ বিচারপতির আসনে থাকে, যারা নিজ পদবলে ক্ষমতাবলে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে কুফরি বিধানের উপর স্বেচ্ছায় রায় প্রদান করে, যারা শরীয়তের প্রতি বিদ্বেষ রেখে শাতিমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে রায় প্রদান করে এবং নির্দোষ ভাইদেরকে ফাঁসির রায় প্রদান করে; যারা কুরআনের বিপক্ষে সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে বিধান জারি করে জেনেবুঝে; শরীয়াহ আইনের চাইতে কুফুরি আইনকে উত্তম মনে করে অথবা যদি মনে করে যেঃ শরীয়াহ অনুযায়ি বিচার করা অপরিহার্য নয় এবং ইচ্ছা স্বাধীনতা আছে, অথচ সে নিশ্চিত জানে যে এটি আল্লাহর বিধান; তাহলে এমন ব্যক্তিরা সুস্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছে। এটি কুফরে আকবার তথা বড় কুফুরি। এমন প্রত্যেক ব্যক্তি তাগুত এবং মুরতাদ। এরা দলগতভাবে মুরতাদ। এদের প্রত্যেকের অবস্থা সর্বোচ্চ যাচাই ব্যতীত তাদেরকে মুসলিম বলা হবে না। (5) কোন বিচারক যদি অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে শরীয়ত বিরোধী রায় প্রদান করে, এবং সে শরীয়তের বাধ্যবাধকতাকে অপরিহার্য বলেই মেনে নিয়ে বাধ্য হয়ে অথবা প্রবৃত্তির অনুসারণে এমন রায় প্রদান করেঃ যা শরীয়াহর সঙ্গে সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিক এবং যে এমন কাজ করে থাকেঃ তাহলে তার এই কাজও কুফর, তবে এটি কুফরে আসগার তথা বড় কুফরের চাইতে একটু কম। কবীরা গোনাহ হবে, তবে কাফির হবে না। (6) তার এই চাকুরি জায়েজ নয়। এবং তার অধিকাংশ কাজ এমন হলে তার বেতন হালাল হবে না। কারণ গোনাহ, কুফুরি কাজ করে বিনিময় গ্রহণ জায়েজ নাই। (7) ভালোভাবে বুঝে নিন, শরীয়তের বিধি বিধানকে হক ও অবশ্যপালনীয় বলে স্বীকার করার পর পালনে ত্রুটি হলে তা গোনাহ, কুফর নয়। কারণ এই ব্যক্তি নিজেকে অপরাধী মনে করে। পক্ষান্তরে বিধানের উপর বিরুদ্ধপ্রশ্ন বা প্রতিবাদের অর্থ সরাসরি আনুগত্য-ত্যাগ, যা সাধারণ অপরাধ নয়, বিদ্রোহ। এটা মানুষকে দুনিয়ার বিধানে ‘মোবাহুদ দম’ (হত্যাযোগ্য) আর আখিরাতের বিধানে চিরজাহান্নামী সাব্যস্ত করে। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) তবে যারা এমনি গ্রাম্য পর্যায়ের আদলতের বিচারক বা সাধারণ কোর্টের বিচারক, যেখানে কোন জাতীয় আইন পাশ হয় না, যেখানে স্পষ্ট শরীয়াহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন পাশ হয় না, তবে মাঝেমধ্যেই মিথ্যা মামলার রায়, অন্যায়ের পক্ষে ফায়সালা দেয়া ইত্যাদি কাজে যেসব বিচারক লিপ্ত থাকে; তাদের জন্য এমন চাকুরি নাজায়েজ। আর যদি কেউ এমন কাজ ধারাবাহিকভাবে করতে থাকে, ঘুষ খেয়ে কাজ করে, হোক সে উকিল বা বিচারপতিঃ তাহলে তার চাকুরি অবৈধ এবং বেতনও বৈধ নয়। এটা হলো দ্বিতীয় পর্যায়ে তথা যা সত্তাগতভাবে হারাম। আর যদি কোন ব্যক্তি সৎ নিয়তে নিম্ন পর্যায়ের বিচারপতি/উকিল ইত্যাদি পদে যোগ দেয়, যার নিয়ত হলো মানুষকে হেল্প করা, অথবা যার কাছে এই মুহুর্তে জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিন্ন কোন পন্থা বাকি নাইঃ (কারণ উচ্চপদে বিচারপতি হলে তার পক্ষে কখনো বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কুরআন সুন্নাহর অনুযায়ী রায় প্রদান করা সম্ভব নয়, তাই যেটা স্পষ্ট অসম্ভব, যেখানের সিস্টেমেই কুরআন সুন্নাহ নাইঃ সেখানে চাকুরিতে যোগদান করা যাবে না।) তাহলে এমন ব্যক্তি যদি এই পদে যোগ দেয় তাহলে সেটা তার জন্য জায়েজ হতে পারে। (9) এসব পদে থাকতে গেলে মিথ্যা বা স্বজনপ্রীতি করতেই হয়। সেরকম কিছু পাওয়া গেলে তা হারাম হবে। তবে বেতন হালাল হবে। কিন্তু এসব চাকুরি কখনো মাকরুহ থেকে খালি নয়। (10) এটা হলো তৃতীয় পর্যায়েরঃ যা কখনো কখনো নাজায়েজ হয়, কখনো কখনো মাকরুহ হয়। সর্বোপরি এটিও প্রকারান্তরে তাগুতের দল ভারী করার একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ। (1) وقال ابن كثير رحمه الله : " فمن ترك الشرع المحكم المنزل على محمد بن عبد الله خاتم الأنبياء ، وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر ، فكيف بمن تحاكم إلى الياسا وقدمها عليه ؟! من فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين " انتهى من "البداية والنهاية" (13/139) قال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله : " والإنسان متى حلل الحرام المجمع عليه ، أو حرم الحلال المجمع عليه ، أو بدل الشرع المجمع عليه ، كان كافرا مرتدا باتفاق الفقهاء " انتهى من "مجموع الفتاوى" (3/267). (2) یعنی جو لوگ اللہ کے نازل کیے ہوئے احکام کو واجب نہیں سمجھتے، اور ان پر فیصلہ نہیں دیتے بلکہ ان کے خلاف فیصلہ کرتے ہے،او کافر و منکر جن کی سزا دایمی جہنم ہے ( معارف القران: 161/3) ﴿وَمَن لَمْ يَحْكم بِما أنْـزَلَ اللهُ﴾ مُسْتَهِينًا بِهِ ﴿فَأُولَئِكَ هُمُ الكافِرُونَ﴾ قالَ ابْنُ عَبّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُما: مَن لَمْ يَحْكم جاحِدًا فَهو كافِرٌ، وإنْ لَمْ يَكُنْ جاحِدًا فَهو فاسِقٌ ظالِمٌ، وقالَ ابْنُ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: هو عامٌّ في اليَهُودِ وغَيْرِهِمْ. ( تفسير النسفي: 449/1) قال القرطبي: قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿أَرْباباً مِنْ دُونِ اللَّهِ﴾ قَالَ أَهْلُ الْمَعَانِي: جَعَلُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ كالأرباب حيث أطاعوهم في كل شي، وَمِنْهُ قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿قالَ انْفُخُوا حَتَّى إِذا جَعَلَهُ ناراً﴾(٢) [الكهف: ٩٦] أَيْ كَالنَّارِ. (3) قال السعدي في تفسيره: يشهد تعالى عباده من حالة المنافقين ويتعجب: {الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ} مؤمنون بما جاء به الرسول وبما قبله، ومع هذا {يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ} وهو كل من حكم بغير شرع الله فهو طاغوت. والحال أنهم {قد أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ} فكيف يجتمع هذا والإيمان؟ فإن الإيمان يقتضي الانقياد لشرع الله وتحكيمه في كل أمر من الأمور، فمَنْ زعم أنه مؤمن واختار حكم الطاغوت على حكم الله، فهو كاذب في ذلك. وهذا من إضلال الشيطان إياهم، ولهذا قال: {وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلالا بَعِيدًا} عن الحق (تفسير السعدي: 108) (4) قال ابن القيم في مدارج السالكين: والصحيح أن الحكم بغير ما أنزل الله يتناول الكفرين، الأصغر والأكبر بحسب حال الحاكم فإنه إن اعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله في هذه الواقعة، وعدل عنه عصيانا، مع اعترافه بأنه مستحق للعقوبة، فهذا كفر أصغر، وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) قالَ عِكْرِمَةُ: قَوْلُهُ ﴿ومَن لَمْ يَحْكم بِما أنْزَلَ اللَّهُ﴾ إنَّما يَتَناوَلُ مَن أنْكَرَ بِقَلْبِهِ وجَحَدَ بِلِسانِهِ، أمّا مَن عَرَفَ بِقَلْبِهِ كَوْنَهُ حُكْمَ اللَّهِ وأقَرَّ بِلِسانِهِ كَوْنَهُ حُكْمَ اللَّهِ، إلّا أنَّهُ أتى بِما يُضادُّهُ فَهو حاكِمٌ بِما أنْزَلَ اللَّهُ تَعالى، ولَكِنَّهُ تارِكٌ لَهُ، فَلا يَلْزَمُ دُخُولُهُ تَحْتَ هَذِهِ الآيَةِ، وهَذا هو الجَوابُ الصَّحِيحُ واللَّهُ أعْلَمُ ( تفسير الرازي: 445/5) (5) وفي هذه الآية دلالة على أن من رد شيئا من أوامر الله تعالى أو أوامر رسوله صلى الله عليه وسلم فهو خارج من الإسلام سواء رده من جهة الشك فيه أو من جهة ترك القبول والامتناع من التسليم ، وذلك يوجب صحة ما ذهب إليه الصحابة في حكمهم بارتداد من امتنع من أداء الزكاة وقتلهم وسبي ذراريهم ؛ لأن الله تعالى حكم بأن من لم يسلم للنبي صلى الله عليه وسلم قضاءه وحكمه فليس من أهل الإيمان (احكام القرآن للجصاص: 181/3) ﴿فَأُولَئِكَ هُمُ الكافِرُونَ﴾ لِاسْتِهانَتِهِمْ بِهِ وتَمَرُّدِهِمْ بِأنْ حَكَمُوا بِغَيْرِهِ، ولِذَلِكَ وصَفَهم بِقَوْلِهِ الكافِرُونَ والظّالِمُونَ والفاسِقُونَ، فَكُفْرُهم لِإنْكارِهِ، وظُلْمُهم بِالحُكْمِ عَلى خِلافِهِ، وفِسْقُهم بِالخُرُوجِ عَنْهُ ( تفسير البيضاوي: ١٢٨/٢) ولما كان الأمر كذلك فإن كلام السلف ومنهم ابن القيم كلام لا غبار عليه، فإذا حكم الحاكم برشوة أو لقرابة، أو شفاعة أو ما أشبه ذلك فلا شك أن ذلك كفر دون كفر..وأما ما جد في حياة المسلمين - ولأول مرة في تاريخهم - وهو تنحية شريعة الله عن الحكم ورميها بالرجعية والتخلف وأنها لم تعد تواكب التقدم الحضاري، والعصر المتطور فهذه ردة جديدة في حياة المسلمين. إذ الأمر لم يقتصر على تلك الدعاوى التافهة، بل تعداه إلى إقصائها فعلاً عن واقع الحياة واستبدال الذي هو أدنى بها، فحل محلها القانون الفرنسي أو الإنجليزي أو الأمريكي أو الاشتراكية الإلحادية وما أشبه ذلك من تلك النظم الجاهلية الكافرة.(الولاء والبراء لسعيد القحطان: ص٦٨) (6)قال ابن القيم في مدارج السالكين: والصحيح أن الحكم بغير ما أنزل الله يتناول الكفرين، الأصغر والأكبر بحسب حال الحاكم فإنه إن اعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله في هذه الواقعة، وعدل عنه عصيانا، مع اعترافه بأنه مستحق للعقوبة، فهذا كفر أصغر، وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) (7)"(لا تصح الإجارة لعسب التيس) وهو نزوه على الإناث (و) لا (لأجل المعاصي مثل الغناء والنوح والملاهي). وفي الرد:مطلب في الاستئجار على المعاصي (قوله مثل الغناء) بالكسر والمد الصوت، وأما المقصور فهو اليسار صحاح (قوله والنوح) البكاء على الميت وتعديد محاسنه (قوله والملاهي) كالمزامير والطبل، وإذا كان الطبل لغير اللهو فلا بأس به كطبل الغزاة والعرس لما في الأجناس ... وفي المنتقى: امرأة نائحة أو صاحبة طبل أو زمر اكتسبت مالا ردته على أربابه إن علموا وإلا تتصدق به، وإن من غير شرط فهو لها: قال الإمام الأستاذ لا يطيب، والمعروف كالمشروط اهـ. قلت: وهذا مما يتعين الأخذ به في زماننا لعلمهم أنهم لا يذهبون إلا بأجر ألبتة." (فتاوي شامي: كتاب الاجارة، مطلب في الاستئجار علي المعاصي، ج:6، ص:55، ط:سعيد) (8)وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ) المائدة/2) مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ) أخرجه مسلم في صحيحه (4831). وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الإثْمِ وَالْعُدْوَانِ ) يأمر تعالى عباده المؤمنين بالمعاونة على فعل الخيرات ، وهو البر ، وترك المنكرات ، وهو التقوى ، وينهاهم عن التناصر على الباطل ، والتعاون على المآثم ، والمحارم . "( تفسير ابن كثير :2 / 12-13) (9) فَمَنِ ٱضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغࣲ وَلَا عَادࣲ فَلَاۤ إِثۡمَ عَلَیۡهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورࣱ رَّحِیمٌ ( سورة البقرة:173) عن عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : " إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى..( صحيح البخاري: 1) وفي فتوى اهل سمرقند: اذا استاجر رجلا ينحت له طنبورا او بربطا ففعل يطيب له الاجر الا انه ياثم في الاعانة على المعصية وانما وجب له الاجر في هذه المسائل.( المحيط البرهاني: 446/11, البحر الرائق: 36/8) (10)وعن محمد: رجل استاجر رجلا لصور له صورا او تماثيل الرجال في بيت او فسطاط فاني اكره ذلك واجعل له الاجر : (هندية: كتاب الاجارة: 450/4،قديم ، الفتاوي التاتارخانية: 130/15)
বিস্তারিত পড়ুনসরকারি চাকরির বিধানঃ ২য় পর্ব
১১ মে, ২০২৫
সেনাবাহিনী, র্যাব, সীমান্তরক্ষী, বিডিআর, নৌবাহিনী, পুলিশ সহজ কথায় সামরিক বাহিনী তথা ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরির বিধান নিয়ে লম্বা আলোচনা আছে। বর্তমান সময়ের বিবেচনায় মৌলিকভাবে ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরি করা জায়েজ নয় বলেই মনে হয়। কুরআন সুন্নাহর দলিলের আলোকে এটাই প্রতীয়মান হয়। অবশ্য ঢালাওভাবে হারাম বা কুফর বিষয়টি এমন নয়। বরং জটিল এই মাসআলার ক্ষেত্রে টু দ্যা পয়েন্ট অথবা পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বিস্তৃত মাসআলা কিতাবে পাওয়া যায় না। এরজন্য ডিফেন্স ফোর্সের প্রতিটি ক্যাটাগরি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করে এর মাসআলা বের করতে হবে। যা বেশ দুরূহ ব্যাপার। আলহামদুলিল্লাহ, বিষয়টি নিয়ে সাধ্যমত বিস্তৃত অধ্যায়ন, ফিকির, গবেষণা এবং খোজ নেয়ার পরে মোটামোটি আকারে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছি। মৌলিকভাবে ডিফেন্স ফোর্স বা উল্লেখিত সামরিক বাহিনীগুলোর চাকুরির পজিশন অবস্থা ভেদে তিন প্রকার বিধান আরোপিত হবে। মূলত সরকারি চাকুরির তিনটি পর্যায় হতে পারেঃ তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এটা স্পষ্ট কুফর। তাগুতি বিধি-বিধান বাস্তবায়ন নয়, তবে কাজগুলো মৌলিকভাবে হারাম এমন কাজ করা। এটা হারাম কবিরা গোনাহ। তবে কুফুরি নয়। মৌলিকভাবে কাজ হারাম নয়, তবে গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, এর দ্বারাও তাগুতি শাসনব্যবস্থার একধরনের সহযোগিতা হয়। এটা স্পষ্ট হারাম নয়, তবে কখনো কখনো প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তা নাজায়েজ বা মাকরুহ বা বৈধ হতে পারে। এখন এই তিন প্রকারকে সামনে রেখেই মুলত আমরা আলোচনা পেশ করব ইনশাআল্লাহ। (১) কেউ যদি তাগুতি এই সৈন্যবাহিনীতে এই নিয়তে যোগ দেয় যেঃ সে প্রচলিত সাংবিধানিক সমস্ত বিধি-নিষেধ প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হবে, কুফর প্রতিষ্ঠা, অথবা কাফিরদের সহযোগিতা করা, অথবা প্রয়োজনে নিরাপরাধ মুমিনের রক্ত ঝরানোর ক্ষেত্রে পিছপা হবে না অথবা আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট বিধি-নিষেধ লঙ্ঘণ করতে পিছপা হবে না, চাকুরি বাচানোর জন্য জেনে বুঝে এমন নিয়তে যারা যোগদান করবে, অথবা যারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে, লেখালেখি করে, মাঠে ময়দানে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে গনতন্ত্র এবং সেক্যুলারিজম রক্ষার জন্য এসব তাওহিদের ঝাণ্ডাবাহী লোকদের বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় গুলি চালায়; তারা মুরতাদ বলে গন্য হবে। তারা দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যাবে। (1) অনুরুপভাবে যারা জাতিসংঘের হয়ে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে বা মুসলিম জনগনের বিরুদ্ধে কুফফার রাষ্ট্রের পক্ষে অস্ত্রধারণ করে, এবং এই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার কারণে গর্ববোধ করেঃ এরাও মুরতাদ বলে বিবেচিত হবে, দ্বীন থেকে বের হয়ে গিয়েছে বলে গণ্য হবে। মুসলমানের বিপক্ষে কাফিরদের পক্ষ হয়ে লড়াই করা আক্রমণ করা স্পষ্ট কুফুরি। (2) যারা গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ রক্ষার জন্য নির্বিচারে মুসলিম ভাইদেরকে দ্বীনের প্রতি আক্রোশ হয়ে আটক করে, অথবা মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মজা পায়ঃ এমন প্রত্যেক ব্যক্তি মুরতাদ বলে গণ্য হবে। (3) বিশেষত যারা কর্নেল, মেজর, ডিআইজি, সেনাপ্রধাণ, কমান্ডার এবং এই প্রধান ব্যক্তিত্বতের অত্যান্ত নিকবর্তী সেনাপ্রধানরা এজাতীয় কাজের কমান্ড করে থাকে। এরা চিন্তা চেতনায় সম্পূর্ণ শরীয়াহ বিরোধী হয়ে থাকে বেশিরভাগ। মোটকথা যারা উপরোক্ত চিন্তা-চেতনা লালন করে এবং শরীয়াহ বিরোধী হয়ে থাকেঃ এই মাসআলা তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে। আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ বলেনঃ ঈমান তখনই অস্তিত্ব লাভ করে যখন ইসলামের সকল অকাট্য বিধান ও বিশ্বাস মন থেকে কবুল করা হয়। পক্ষান্তরে এসবের কোনো একটিকেও অস্বীকার করার দ্বারা ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) উল্লেখিত পরিস্থিতিতে এইপ্রকার ডিফেন্স ফোর্সের বিধান হলোঃ এরা দলগত মুরতাদ বলে গন্য হবে। অর্থাৎ, পুরো জামাতের উপর মুরতাদের হুকুম আরোপিত হবে। হ্যা, ব্যক্তিগতভাবে কেউ আবশ্যিকভাবে বাধ্য থাকতে পারে বা শরয়ী গ্রহণযোগ্য কোন ওজর /কারণ থাকতে পারে। সেটা যাচাই করে তারপর সেই ব্যক্তির উপর বিধান আসবে। উপরোক্ত পদে যেই টিম কাজ করে, সেই টিম বা দল দলগতভাবে মুরতাদ। মানুষকে কাফির বলার প্রকার দুইটি (১) তাকফিরে আমঃ ব্যাপকভাবে তাকফির করা বা কাফির বলা। জড়িত প্রত্যেককে কাফির বলা দলগতভাবে, সুনিদৃষ্ট কাউকে নয়। (২) তাকফিরে মুআইয়ানঃ ব্যক্তিবিশেষ নিদৃষ্টভাবে কাউকে কাফির বা মুরতাদ বলা। এটি খুবই সেন্সিটিভ এবং অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ কাউকে কাফির সুনিদৃষ্টভাবে বলতে হলে নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত ঈলম থাকা আবশ্যক, নতুবা কোনভাবেই একজন সাধারণ মানুষের জন্য কোন ব্যক্তিকে হুটহাট করে কাফির ফতোয়া দেয়া কবিরা গোনাহ, বরং আরো ভয়াবহ। কিন্তু তার সেই কাজ যে কমপক্ষে কবীরা গোনাহ হবেঃ এব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। (4) এবং এই পর্যায়ে কাজ করা কারোর জন্যই জায়েজ নাই এবং তার বেতন হালাল হবে না। প্রসঙ্গত এখানে আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ এর একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ যারা শরীয়তের শুধু ‘শান্তির বিধান গ্রহণ করেন আর জিহাদের বিধানকে সন্ত্রাস বা উগ্রবাদিতা বলেন; উপদেশের কথাগুলো গ্রহণ করেন আর হদ-তাযীর ও কিসাসের বিধান বর্জনীয় মনে করেন; ইবাদতের বিষয়গুলো গ্রহণ করেন, আর লেনদেন ও হালাল-হারামের বিধান মানতে অসম্মত থাকেন; ব্যক্তিগত জীবনের বিধিবিধান গ্রহণ করেন, কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র-পরিচালনার বিধি-বিধান (প্রশাসন, নির্বাহী ও বিচার-বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট) সম্পর্কে বিরূপ থাকেন; অথবা ইবাদত ও লেনদেনের বিধান মানেন, কিন্তু বেশ-ভূষা, আনন্দ-বিষাদ, পর্ব-উৎসব ও জীবন যাপনের আদব কায়েদার ইসলামী নির্দেশ ও নির্দেশনার প্রতি বিরূপ থাকেন বা মানাকে জরুরি মনে করেন না এরা সবাই ইসলামের কিছু অংশের অস্বীকার বা কিছু অংশের উপর বিরুদ্ধপ্রশ্নের কারণে নিজের ঈমান হারিয়ে বসেছেন। ( মাসিক আল কাউসারঃ মার্চ, ২০১৩ সাল ) (২) যারা ডিফেন্স ফোর্স তথা উল্লেখিত বাহিনীতে যোগদান এজন্য করে যেঃ এখানে গেলে প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে, সুদ ঘুষের টাকা পাবে, যদিও অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের জন্য জুলুম করা লাগতে পারে, তাদের সব খারাবি জেনেও যে অতিরিক্ত টাকা পয়সা অর্জনের জন্য যাবে, এবং কখনো কখনো বাধ্য হয়ে মুসলিমদের বিপক্ষে তাকে অস্ত্রধারণ করতে হয়; সে কবিরা গোনাহ করবে এবং তার এই চাকুরি অবৈধ বলে গন্য হবে এবং অন্যায়ভাবে যা গ্রহণ করবে তা হারাম উপার্জন বলে বিবেচিত হবে, (5) এবং যদি কোন মুসলিমকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে থাকে নিজের চাকুরি বাচানোর জন্য ( সে দ্বীন ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ রেখে হত্যা করেছে বিষয়টি এমন নয়) তাহলে এমন ব্যক্তির ব্যাপারে কেউ কেউ মুরতাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন। ( তবে সহীহ কথা হলোঃ এমন ব্যক্তি মুরতাদ হবে না (6) তবে তার এই কবীরা গোনাহের পরিণতি ভয়াবহ।) এমন সেক্টরে চাকুরি করা নাজায়েজ, তবে তার নায্য বেতন হালাল হবে। (7) (৩) যেই ব্যক্তি সেক্যুলার রাষ্ট্রে উপরোক্ত কোন উদ্দেশ্যে নয়, বরং দেশ এবং জনগনের সেবা করার মানসেই ডিফেন্স ফোর্সে চাকুরি নিতে চায় অথবা বাধ্য হয়েই সে চাকুরিতে জয়েন করছে অন্য উপায় না থাকার কারণে তাহলে এমন ব্যক্তি ভ্রষ্টতায় লিপ্ত আছে। সেক্ষেত্রে এমন ব্যক্তির জন্য সৈন্যবাহিনীতে চাকুরি করা মাকরুহ। হারামের কাছাকাছি, তবে ইনকাম হালাল হবে। অতিসত্তর তাকে দ্রুত এই চাকুরি ছেড়ে ভিন্ন আরেকটি চাকুরিকে শিফট হতে হবে। সন্দেহমুক্ত কোন চাকুরি তাকে খুজতে হবে। ( তবে যদি সে এমন পোস্টে চাকুরি করেঃ যেখানে সরকারি বড় বড় কাজের কোন সম্পৃক্ততা নাই, এবং জনগনের হক্ব নস্ট করারও আশঙ্কা নাই; বরং জনগনের সেবার জন্য নিম্ন পদস্থ কোন সেক্টর যেমনতঃ হাবিলদার, দারোয়ান, কনস্টেবল; তাহলে এমন ব্যক্তির চাকুরি করার সুযোগ আছে। (9) কিন্তু তার উচিত ভিন্ন কোন চাকুরিতে জয়েন করা। তাছাড়া ডিফেন্স ফোর্সের কিছু বিধি-নিষেধ ক্বানুন রয়েছে। যেমন এসব ফোর্সের বেশিরভাগ জায়গায় দাড়ি কেটে ফেলতে বলা হয়। দাড়ি না কাটলে প্রমোশন হয় না। কোথাও দাড়িকাটা বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে, বেপর্দা ফ্রি মিক্সিং তো আছেই। (10) জাতীয়তাবাদী পতাকাকে সম্মান জানাতে হয়। ইত্যাদি এসব কিছু যদি বাধ্যতামুলক হয়ে থাকে; তাহলে চাকুরির জন্য এইসব কাজ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। (11) দ্রুত এমন চাকুরি ছাড়া জরুরী। তবে শর্তসাপেক্ষে বেতন হালাল হবে, যা ২ এবং ৩ নাম্বার পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে। (1) عن عبد الله بن مسعود قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( لا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إله إلا الله ، وأني رسول الله إلا بإحدى ثلاث : النفس بالنفس ، والثيب الزاني ، والتارك لدينه المفارق للجماعة. روى البخاري: 6484 ومسلم 1676 وإن اعتقد أنه غير واجب، وأنه مخير فيه، مع تيقنه أنه حكم الله، فهذا كفر أكبر، وإن جهله وأخطأه، فهذا مخطئ، له حكم المخطئين (مدارج السالكين: ٢٥٩/١) قال ابنُ جريرٍ: (يقولُ: ومن يتَّخِذْهم منكم بِطانةً من دونِ المؤمنينَ، ويؤثِرِ المقامَ معهم على الهِجرةِ إلى رَسولِ اللهِ ودارِ الإسلامِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ يقولُ: فالذين يَفعَلون ذلك منكم هم الذين خالفوا أمرَ اللهِ، فوَضَعوا الوَلايةَ في غيرِ مَوضِعِها، وعَصَوا اللهَ في أمْرِه. وقيل: إنَّ ذلك نزل نهيًا من اللهِ المؤمنينَ عن موالاةِ أقرِبائِهم الذين لم يُهاجِروا من أرضِ الشِّركِ إلى دارِ الإسلامِ: تفسير الطبري: 383/11) وقال السَّعديُّ: (وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنكُمْ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ؛ لأنَّهم تجَرَّؤوا على معاصي اللهِ، واتَّخَذوا أعداءَ اللهِ أولياءَ، وأصلُ الولايةِ: المحبَّةُ والنُّصرةُ، وذلك أنَّ اتخاذَهم أولياءَ موجِبٌ لتقديمِ طاعتِهم على طاعةِ اللهِ، ومحَبَّتَهم على محبَّةِ اللهِ ورَسولِه) (2) فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِئَتَيْنِ وَاللَّهُ أَرْكَسَهُم بِمَا كَسَبُوا أَتُرِيدُونَ أَن تَهْدُوا مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاء فَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ أَوْلِيَاء حَتَّىَ يُهَاجِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ… [النساء: 88-89] . قال السَّعديُّ: (المرادُ بالمُنافِقين المذكورينَ في هذه الآياتِ: المُنافِقون المظهِرون إسلامَهم، ولم يهاجِروا مع كُفْرِهم، وكان قد وقع بين الصَّحابةِ رِضوانُ اللهِ عليهم فيهم اشتباهٌ، فبعضُهم تحرَّج عن قتالِهم، وقَطَع موالاتَهم بسبَبِ ما أظهَروه من الإيمانِ، وبعضُهم عَلِم أحوالَهم بقرائِنِ أفعالِهم، فحَكَم بكُفْرِهم، فأخبرهم اللهُ تعالى أنَّه لا ينبغي لكم أن تشتَبِهوا فيهم ولا تشُكُّوا، بل أمْرُهم واضِحٌ غيرُ مُشكِلٍ، إنَّهم مُنافِقون قد تكرَّر كُفْرُهم، وودُّوا مع ذلك كُفْرَكم، وأن تكونوا مِثْلَهم، فإذا تحقَّقْتُم ذلك منهم فَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ أَوْلِيَاءَ، وهذا يستلزِمُ عَدَمَ محبَّتِهم؛ لأنَّ الوَلايةَ فرعُ المحبَّةِ.( تفسير السعدي: ص192) (3) قَولُ الله تعالى: وَمَن يَتَوَلَّهُمْ مِنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ [المائدة: 51] . قال ابنُ جريرٍ: (من تولَّاهم ونصَرَهم على المؤمنين فهو من أهلِ دينِهم ومِلَّتِهم؛ فإنَّه لا يتولَّى متولٍّ أحدًا إلَّا وهو به وبدينِه وما هو عليه راضٍ، وإذا رَضِيَه ورَضِيَ دينَه فقد عادى ما خالفه وسَخِطَه، وصار حُكمُه حُكمَه ( تفسير ابن جرير: 508/8) (4) عن علي رضي الله عنه: لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ (بخاري: 4340، مسلم: 1840) قال الطبري – رحمه الله - :عن ابن عباس قال : فأخبر الله سبحانه أنه من كفر من بعد إيمانه : فعليه غضب من الله وله عذاب عظيم ، فأما من أكره فتكلم به لسانه وخالفه قلبه بالإيمان لينجو بذلك من عدوّه : فلا حرج عليه ؛ لأن الله سبحانه إنما يأخذ العباد بما عقدت عليه قلوبهم . " تفسير الطبري " ( 17 / 305 ) (5) والاستئجار على المعاصي باطل فإن بعقد الإجارة يستحق تسليم المعقود عليه شرعا ولا يجوز أن يستحق على المرء فعل به يكون عاصيا شرعا." (المبسوط: کتاب الإجارات، باب الإجارۃ الفاسدۃ، ج:16، ص38، ط:دار المعرفة) (6)أَخَذَ الْمُشْرِكُونَ عَمَّارَ بْنَ يَاسِرٍ فَلَمْ يَتْرُكُوهُ حَتَّى سَبَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- وَذَكَرَ آلِهَتَهُمْ بِخَيْرٍ ، ثُمَّ تَرَكُوهُ . فَلَمَّا أَتَى رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ : مَا وَرَاءَكَ؟ . قَالَ : شَرٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؛ مَا تُرِكْتُ حَتَّى نِلْتُ مِنْكَ ، وَذَكَرْتُ آلِهَتَهُمْ بِخَيْرٍ ؟! قَالَ : كَيْفَ تَجِدُ قَلْبَكَ ؟ . قَالَ : مُطْمَئِنًا بِالإِيمَانِ . قَالَ : إِنْ عَادُوا فَعُدْ . ٍرواه الحاكم في " المستدرك " ( 2 / 389 ) قال ابن حزم رحمه الله : " اتَّفقُوا على أَن الْمُكْره على الْكفْر وَقَلبه مطمئن بالايمان انه لَا يلْزمه شَيْء من الْكفْر عِنْد الله تَعَالَى .. " انتهى . "مراتب الإجماع" (61) . وينظر : "الإقناع في مسائل الأجماع" لابن القطان (2/272) (7) الأجرة انما تكون في مقابلة العمل( شامي: كتاب النكاح: 307/4،زكريا) او خياطا امره ان يتخذ له ثوبا على زي الفساق يكره له ان يفعله لانه سبب التشبه بالمجوس والفسقة ( شامي: كتاب الحظر والاباحة:562/9،ط.زكريا) وعن محمد: رجل استاجر رجلا لصور له صورا او تماثيل الرجال في بيت او فسطاط فاني اكره ذلك واجعل له الاجر : (هندية: كتاب الاجارة: 450/4،قديم ، الفتاوي التاتارخانية: 130/15) لو اجره دابة لينقل عليها الخمر او اجره نفسه ليرعى له الخنازير يطيب له الاجر وعنده وعندهما يكره( شامي: كتاب الحظر والاباحة: 562/9) ( فَمَنِ ٱضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغࣲ وَلَا عَادࣲ فَلَاۤ إِثۡمَ عَلَیۡهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورࣱ رَّحِیمٌ ( سورة البقرة:173) قال أبو بكرٍ الجَصَّاصُ: (هذا أصلٌ في جوازِ إظهارِ كَلِمةِ الكُفرِ في حالِ الإكراهِ ( احكام القرآن: 192/3) (9) عن عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : " إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى..( صحيح البخاري: 1) وان استاجره لينحت له طنبورا او بربطا ففعل طاب له الاجر الا انه ياثم به.( هندية: 450/4،زكريا) وفي فتوى اهل سمرقند: اذا استاجر رجلا ينحت له طنبورا او بربطا ففعل يطيب له الاجر الا انه ياثم في الاعانة على المعصية وانما وجب له الاجر في هذه المسائل.( المحيط البرهاني: 446/11, البحر الرائق: 36/8) (10) عن علي رضي الله عنه: لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ (بخاري: 4340، مسلم: 1840) (11)قُلۡ أَطِیعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا یُحِبُّ ٱلۡكَـٰفِرِینَ ( سورة ال عمران: 32)
বিস্তারিত পড়ুনসরকারি চাকরির বিধানঃ ১ম পর্ব
১১ মে, ২০২৫
আমাদের কাছে প্রায়ই একটি প্রশ্ন এসে থাকে যেঃ সরকারি চাকরির বিধান কি? অর্থাৎ সরকারি যেকোনো পদে চাকরি করা যেমন ওকালতি করা, ব্যারিস্টার হওয়া, পুলিশ বিভাগের চাকরি করা, সামরিক বিভাগের চাকরি করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষকদের চাকরি করা। মোটকথা কোন ব্যক্তি যদি সরকারি যেকোনো পদে চাকরি করে তাহলে ওই চাকরি করা তার জন্য জায়েজ হবে নাকি জায়েজ হবে না! এবং তার বেতন হালাল নাকি হারাম? আল্লাহ চাইলে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এই আর্টিকেল পড়ার আগে আমরা একটা মূলনীতি মাথায় রাখি যে, আমাদের আলোচ্য বিষয় হল এমন রাষ্ট্রের সরকারি পদে চাকরি করা নিয়েঃ যে রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্র নয় তথা রাষ্ট্রপ্রধান বাস্তবিক পক্ষে মুসলমান নয় এবং সেই দেশ ইসলামী আইন অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে না। সেই দেশের সরকারি চাকরি নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা আলোচনা করব নতুবা ইসলামের রাষ্ট্রে সরকারি পদে চাকরি করতে কোন বাধা নেই। ভূমিকাঃ এজন্য সবার আগে আমাদেরকে জানতে হবে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামের রাষ্ট্র কোনটি এবং কুফরি রাষ্ট্র কোনটি! মুলত কোন দেশ দারুল ইসলাম নাকি দারুল হারব তথা দারুল কুফর হওয়া বা না হওয়ার মৌলিক প্রধান মাপকাঠি হলোঃ ঐ দেশ বা ভূখণ্ডে বাস্তবায়িত প্রচলিত আইন এবং সংবিধান। তাই কোন দেশ যদি ইসলামী নীতিমালা এবং শরয়ী আইন অনুযায়ী চলে, তাহলে সেটি দারুল ইসলাম তথা ইসলামি রাষ্ট্র বলে গণ্য হবে। যদিও সেখানের অধিবাসী মুসলিম হোক বা কাফির হোক, অথবা অধিকাংশ মুমিন অল্প ভিন্নধর্মী অথবা অধিকাংশ অমুসলিম অল্পকিছু মুসলিম। জনসংখ্যার কমবেশি এটা কোন প্রভাব ফেলবে না। সেটি ইসলামি রাষ্ট্র বলেই গণ্য হবে। আর যদি কুফুরি আইন এবং সংবিধানে দেশ পরিচালিত হয়, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো যদি কুফুরি নীতিমালার আলোকে গৃহীত হয় তাহলে সেটি দারুল হারব তথা দারুল কুফর; কাফের রাষ্ট্র! যদিও সেখানের অধিবাসী মুসলিম হোক বা কাফির হোক, অথবা অধিকাংশ মুমিন অল্প ভিন্নধর্মী হোক, এসবে কোন প্রভাব ফেলবে না। এটিই হানাফি মাজহাবসহ বাকি ইমামদের ফতোয়া। যদিও ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ আরো অতিরিক্ত দুটি শর্ত করেছেন। কিন্তু ফতোয়া সাহেবাইনের উপর। ইমাম জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ حُكْمُ الدَّارِ إِنَّمَا يَتَعَلَّقُ بِالظُّهُوْرِ وَالْغَلَبَةِ، وَإِجْرَاءِ حُكْمِ الدِّيْنِ بِهَا، وَالدَّلِيْلُ عَلَى صِحَّةِ ذَلِكَ: أَنَّا مَتَى غَلَبْنَا عَلَى دَارِ الْحَرْبِ، وَأَجْرَيْنَا أَحْكَامَنَا فِيْهَا: صَارَتْ دَارَ الْإِسْلَامِ، سَوَاءٌ كَانَتْ مُتَاخِمَةً لِدَارِ الْإِسْلَامِ أَوْ لَمْ تَكُنْ، فَكَذَلِكَ الْبَلَدُ مِنْ دَارْ الْإِسْلَامْ، إِذَا غَلَبَ عَلَيْهِ أَهْلُ الْكُفْرِ، وَجَرَى فِيْهِ حُكْمُهُمْ: وَوَجَبَ أَنْ يَكُوْنَ مِنْ دَارِ الْحَرْبِ. وَلَا مَعْنَى لِاِعْتِبَارِ بَقَاءِ ذِمِّيٍّ أَوْ مُسْلِمٍ آَمِنًا عَلَى نَفْسِهِ؛ لِأَنَّ الْمُسْلِمَ قَدْ يَأْمَنُ فِيْ دَارِ الْحَرْبِ، وَلَا يَسْلِبُهُ ذَلِكَ حُكْمَ دَارِ الْحَرْبِ، وَلَا يُوْجِبُ أَنْ يَكُوْنَ مِنْ دَارِ الْإِسْلَامِ. ‘ কোন দেশের হুকুম বা বিধান এটি বিজয়, কর্তৃত্ব ও কোনো ধর্মের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সাথে সম্পর্কিত। এ দাবির পক্ষে দলিল হলো, আমরা যখন “দারুল হারব” এর ওপর বিজয়ী হই এবং তথায় আমাদের শাসনব্যবস্থা চালু করি, তখন সেটা “দারুল ইসলাম” হয়ে যায়; চাই সে রাষ্ট্রটি কোনো “দারুল ইসলাম” এর সংলগ্ন হোক বা না হোক। তাহলে অনুরূপ “দারুল ইসলাম”-এর কোনো শহরের ওপর যখন কাফিররা বিজয়ী হবে এবং তথায় তাদের কুফরি শাসনব্যবস্থা চালু হবে, তাহলে সেটা অবশ্যই “দারুল হারব”-এ পরিণত হয়ে যাবে। মুসলিম ও জিম্মিদের পূর্বের নিরাপত্তাচুক্তিতে তাদের নিরাপদ থাকাকে বিবেচনা করার কোনোই যৌক্তিকতা নেই। কেননা, মুসলমানও তো কখনও কখনও “দারুল হারব”-এ নিরাপদ থাকে; অথচ এর কারণে এটা রাষ্ট্রকে “দারুল হারব” হওয়া থেকে বের করে দেয় না এবং “দারুল ইসলাম”-এ রূপান্তরিত হয়ে যাওয়াকে আবশ্যক করে না।’ (শারহু মুখতাসারিত তাহাবি : ৭/২১৬-২১৭, প্রকাশনী : দারুল বাশাইরিল ইসলামিয়্যা, বৈরুত) ২. ইমাম সারাখসি রহ. স্বীয় ‘মাবসুত’-এ সাহিবাইনের-এর পক্ষ থেকে দলিল দিয়ে বলেনঃ الْبُقْعَة إنَّمَا تُنْسَبُ إلَيْنَا أَوْ إلَيْهِمْ بِاعْتِبَارِ الْقُوَّةِ وَالْغَلَبَةِ، فَكُلُّ مَوْضِعٍ ظَهَرَ فِيهِ حُكْمُ الشِّرْكِ فَالْقُوَّةُ فِي ذَلِكَ الْمَوْضِعِ لِلْمُشْرِكِينَ فَكَانَتْ دَارَ حَرْبٍ، وَكُلُّ مَوْضِعٍ كَانَ الظَّاهِرُ فِيهِ حُكْمُ الْإِسْلَامِ فَالْقُوَّةُ فِيهِ لِلْمُسْلِمِينَ. ‘স্থান আমাদের (মুসলমানদের) সাথে বা তাদের (কাফিরদের) সাথে সম্পৃক্ত হয় শক্তি ও বিজয়ের ভিত্তিতে। অতএব, যে জায়গায় শিরকের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত থাকবে, বুঝতে হবে সেখানে মুশরিকদের শক্তি বিজয়ী; বিধায় সেটা হবে “দারুল হারব”। আর যে জায়গায় ইসলামের সংবিধান বিজয়ী থাকবে, বুঝতে হবে সেখানে মুসলমানদের শক্তি বিজয়ী।’ (আল-মাবসুত, সারাখসি : ১০/১১৪, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরুত) অনেকের সন্দেহ হতে পারে যে, তাহলে অনেক দেশে দেখা যায় অর্থাৎ অনেক রাষ্ট্রে দেখা যায়, যেই রাষ্ট্রের সংবিধান কুফুরী নীতিমালা ( যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র) অনুযায়ী পরিচালিত হয় সেখানে মুসলমানরা ঈদের নামাজ জুমার নামাজ সহ তারা তাদের দৈনন্দিন আমলী জিন্দেগী পালন করতে পারে; তাহলে সেটা কিভাবে কাফের রাষ্ট্র হতে পারে সেটা তো ইসলামের রাষ্ট্র হওয়ার কথা। একথা বুঝতে হবে যে ব্যক্তিগত সামান্য কিছু ইবাদত পালন করার সুযোগ পাওয়ার দ্বারাই কোন দেশ দারুল ইসলাম হয়ে যায় না। ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যায় না। বরং দেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধান এবং নিয়ম-নীতি সম্পূর্ণ ইসলামী হওয়াটা আবশ্যক। হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহি রাহিমাহুল্লাহ তিনি বলেনঃ ইসলামী রাষ্ট্র এবং কুফুরি রাষ্ট্রের মাসআলা যখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এখন নিজেই হিন্দুস্তানের ব্যাপারে চিন্তা করে দেখুন! এখানে খ্রিস্টান কাফেরদের আইন-কানুন কিভাবে শক্তি ও কর্তৃত্বের সঙ্গে জারি আছে! একজন সাধারন ডেপুটি কমিশনারও যদি আদেশ করে যে মসজিদে জামাত করোনা, তাহলে ধনী গরিব কেউই আদায় করে দেখাতে সক্ষম নয়। আর এই যে জুমা, দুই ঈদ ও কিছু ফিকহি মাসআলা অনুযায়ী আমল চলছে তা শুধুমাত্র তাদের আইনের কারণে। তারা প্রজাদের জন্য ফরমান জারি করেছে যে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্ম অনুযায়ী চলবে, সরকার তাতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। (তালিফাতে রশিদিয়া: পৃষ্ঠাঃ ৬৬৭ ) এজন্য সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহিমাহুল্লাহ তিনি বলেন যেঃ হিন্দুস্তান দারুল হারব এবং তা ততদিন পর্যন্ত দারুল হারব হিসেবে পরিগণিত হবে, যতদিন তাতে কুফুরের কর্তৃত্ব বিদ্যমান থাকবে। আর দারুল হারবের যত ধরনের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং যত শর্তের কথা বলা হয়ঃ সবগুলোই এই হিন্দুস্থানে বিদ্যমান। ( মাকতুবাতে শাইখুল ইসলামঃ ২/১১৫) এইজন্য শুধু ৭০% অথবা ৯০% মুসলিম দেখলেই এটা ভেবে বসার অবকাশ নেই যে সেটি ইসলামী রাষ্ট্র! রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করলেও দেশ যদি কুফুরি সংবিধান অনুযায়ী চলে তাহলে মাজহাবের ইমামগনের মতে সেটি দারুল হারব বলেই বিবেচিত হবে। আর আমাদের আলোচ্য মাসআলাও দারুল হারবকে কেন্দ্র করে। কেননা স্বাভাবিকভাবেই দারুল ইসলামে সরকারি চাকুরি করা জায়েজ। কারণ ইসলামি রাষ্ট্রে সরকারি পদ কোন অবৈধ কাজের জন্য নয়। নোটঃ বারবার পড়ুন। আয়ত্ব করুন। মাসআলা বুঝার জন্য এটি খুবই জরুরী।
বিস্তারিত পড়ুননবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সত্যিই ৬ জন স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন!
১১ মে, ২০২৫
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সত্যিই ৬ জন স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন! আসুন বিষয়টি নিয়ে আমরা একটু আলোচনা করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বীকৃত স্ত্রীদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আম্মাজান হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে তালাক্ব দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামকে প্রেরণ করেন যেন নবীজি আম্মাজান হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে ফিরিয়ে নেন। ওহীর বার্তা শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মাজানকে ফিরিয়ে নেন। (১) নবীজির স্বীকৃত স্ত্রীর মোট সংখ্যা ১১ জন। (২) উনি ছাড়া নবীজি উম্মাহাতুল মু'মিনিন তথা স্বীকৃত স্ত্রীদের মধ্য হতে আর অন্য কোন স্ত্রীকে তালাক দেননি। তাছাড়া হযরত হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে তালাক দিয়েছেন বিশেষ কারণে। এমনি এমনিই তালাক দেননি। বিশেষ কারণ ছিলো। তালাক জিনিসটি অত্যন্ত ঘৃণীত। খোদ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যেঃ أَبْغَضُ الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلَاقُ ".অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নিকট জায়েজ বা হালাল কাজের মধ্য হতে সবচাইতে নিকৃষ্টতম হালাল কাজ হচ্ছে তালাক দেয়া। (৩) তাই নবীজির তালাক দেয়া আর আমাদের তালাক দেয়ার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। বাকি নবীজির জন্য অনেক মহিলা নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, কোন কোন মহিলার ব্যাপারে নবীজি নিজেও বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, এবং বিবাহ সংঘটিতও হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে মিলিত হননি এবং বিশেষ কারণবশত তাদেরকে তালাক প্রদান করে তাদের মোহর আদায় করে বিদায় দিয়েছেন। এই প্রকার মহিলাদের সংখ্যার বর্ণনার ব্যাপারে একাধিক বর্ণনা এসেছে। সব বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন আসমা বিনতে নোমান, ফাতেমা বিনতে যাহহাক, উমায়্যা বিনতে শারাহিল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্না প্রমুখ মহিলাগন প্রসিদ্ধ। (৪) এরকম মহিলার বর্ণনা কোন কোন বর্ণনায় ৩০ জন মহিলার কথাও এসেছে! অবশ্য ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ উক্ত সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন আল্লামা দিময়াতি রাহিমাহুল্লাহ এর উদ্ধৃতি বর্ণনা করে। তবে ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ এমন তালাকপ্রাপ্তা মহিলার সংখ্যা বর্ণনা করে বলেছেন যেঃ প্রসিদ্ধ এরকম ৪ জন অথবা ৫ জন মহিলার কথা জানা যায়, যাদেরকে রাসুল বিবাহ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়া ব্যতিরেকেই তাদেরকে তালাক দিয়েছেন। (৫) আল্লামা ইবনে আবদুল বার রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ যেসমস্ত মহিলাকে নবীজি বিবাহ করেছেন অথচ মিলিত হননি, অথবা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, এসবের সংখ্যার ব্যাপারে প্রচুর মতপার্থক্য আছে। অনুরুপভাবে তাদের তালাক দেয়ার কারণের ব্যাপারেও প্রচুর পরিমান ইখতিলাফ আছে। সুতরাং উক্ত নারীদের কারোর ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে কোন কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। (৬) ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এই যেসমস্ত কথা আমি উক্ত নারীদের ব্যাপারে বর্ণনা করলাম, তা শুধুমাত্র আমি আমার বিস্ময় প্রকাশের জন্য করেছি, সংখ্যাগুলো সঠিক প্রমাণের জন্য নয়। ( অর্থাৎ এমন নারীদের ব্যাপারে এত অধিক বর্ণনা আছে, যে আমি বিস্ময় প্রকাশের জন্য সংখ্যাগুলো বর্ণনা করেছি।) (৭) ইমাম সালেহি রাহিমাহুল্লাহ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ" এর মধ্যে এই ইখতিলাফ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। (৮) উল্লেখ্য যেঃ এই সমস্ত মহিলাগন উম্মুল মুমিনিনের অন্তর্ভুক্ত তথা স্বীকৃত স্ত্রীর অন্তর্ভুক্ত নন। উম্মুল মু'মিনিন বলা হয় যাদের সঙ্গে বিবাহ সংঘটিত হয়েছে, এবং তাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন; যদিও কাউকে তালাক দিয়ে থাকেন। ইমাম মাওয়ারদি রাহিমাহুল্লাহ এবং আল্লামা কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ এটাই বলেছেন। (৯) এখন মুল আলোচনায় আসিঃ নবীজি নিজের স্বীকৃত স্ত্রীদের মধ্য থেকে শুধু হযরত হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে তালাক দিয়েছেন। সেটাও নবীজি একটি শরয়ী কারণে তালাক দিয়েছেন। একটি গোপনীয়তা প্রকাশের কারণে। (১০) নবীজি অন্য কোন স্ত্রীকে তালাক দেননি তথা উম্মাহাতুল মু'মিনিনের মধ্য হতে। যাদেরকে তালাক দিয়েছেন, তারা উম্মাহাতুল মু'মিনিন নন। নবীজির মূল স্ত্রীর মধ্যে তাদেরকে গননা করা হয় না। (১১) এখন কোন ব্যক্তি যদি একাধিক বিবাহ করে, আর তালাক দেয়, সেটা যে কারণেই হোক না কেন; তাহলে তার তালাক প্রদানের দলীলের বৈধতা বা যৌক্তিতা হিসেবে নবিজির তালাক প্রদানের কথা এভাবে সামনে আনতে হবে? তালাক দেয়াটা কি গর্বের বিষয়? এটি কি ফলাও করে মিডিয়ায় প্রচারের মত বিষয়? স্বয়ং আল্লাহর কাছে এটি সবচাইতে অপছন্দের জিনিস। সেটাকে গর্বের সঙ্গে প্রচার করার যৌক্তিকতা কোথায়? নবীজি নিজেও তালাকের ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। সেখানে নিজের তালাকের জাস্টিফাই করতে ভুল তথ্য দিয়ে নবীজির তালাক সামনে আনাটা গাইরতহীন ব্যক্তির পরিচয়। নিজের এহেন কাজ ভ্যালিড করার জন্য নবীজির যে কোন কাজকে নিজের কাজের দলিল বানাতে হবে? নবিজীর শানে কথা বলতে কতটা সতর্ক হওয়া উচিত? তার শানে যেন গোস্তাখী না হয় কতটা সতর্ক হওয়া দরকার সেটা কি কোন ভাই বুঝবেন না? তালাক শব্দটি এমনিতেই ঘৃণীত, অপছন্দনীয়। সেখানে নিজের কাজের ডিফেন্স করতে যেয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে একথা বলে দেয়া যেঃ নবীজিও ৬ টি তালাক দিয়েছেন, এমন কথা নিঃসন্দেহে বেয়াদবি। স্ত্রীদের মধ্য হতে শুধু হযরত হাফসা রাদ্বিআল্লাহু আনহাকে তালাক দিয়েছেন, যিনি স্বীকৃত মুল স্ত্রী। যার সঙ্গে ঘর সংসার করেছেন। আর বাকি যেসব মহিলার বর্ণনা সে ব্যাপারে প্রথম কথা হলোঃ সেসমস্ত বর্ননাগুলো ইখতিলাফে ভরপুর। চুপ থাকতে বলা হয়েছে। সুনিশ্চিত কোন কথা বলা নিষেধ। তাহলে কি কোন ব্যক্তির এই অধিকার আছে যে বলবে আমি ৭ জনকে তালাক দিয়েছি, আমার নবীও ৬ জনকে তালাক দিয়েছেন! দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছেঃ এমন মহিলাদের সঙ্গে তিনি কোনরুপ ঘর সংসারই করেননি। রাত যাপন করেননি, মিলিত হননি। তারা তো মুল স্ত্রীর অধিকারই অর্জন করেননি, তাহলে ঢালাওভাবে তাদেরকেও রাসুলের স্ত্রী গন্য করে ৬ তালাক সংখ্যা নির্ধারণ করাটা কি ইনসাফ? আর এই তালাকপ্রাপ্তা বা তালাক দেয়ার সংখ্যা কোন কিতাবেই চূড়ান্তভাবে বর্ণিত নেই। তাহলে সেই সংখ্যাকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজের কাজের সাফাই গাওয়ার জন্য রেফারেন্স হিসেবে পেশ করা এটা কতটুকু সমীচিন? নিঃসন্দেহে এমন কথা আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। এটা কোনরুপ ব্যাখ্যা বিশ্লেষন ছাড়াই বর্ণনা করাটা বেয়াদবি। আল্লাহ আমাদের বাড়াবাড়ি এবং বিকৃতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন। রেফারেন্সঃ (১) মুসতাদরাকে হাকেম: ৬৭৫৩ عَنْ قَيْسِ بْنِ زَيْدٍ: " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَلَّقَ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ، فَدَخَلَ عَلَيْهَا خَالَاهَا ، فَبَكَتْ وَقَالَتْ: وَاللَّهِ مَا طَلَّقَنِي عَنْ شِبَعٍ، وَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: ( قَالَ لِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ: رَاجِعْ حَفْصَةَ، فَإِنَّهَا صَوَّامَةٌ قَوَّامَةٌ، وَإِنَّهَا زَوْجَتُكَ فِي الْجَنَّةِ (২) মুসলিম শরিফ: ১৪৬২ عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: ( كَانَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعُ نِسْوَةٍ، فَكَانَ إِذَا قَسَمَ بَيْنَهُنَّ، لَا يَنْتَهِي إِلَى الْمَرْأَةِ الْأُولَى إِلَّا فِي تِسْعٍ ... ) আল মুকাদ্দিমাতুল মুমাহহিদাত: ৩/৩৫৮: فهؤلاء أزواجه اللواتي لم يُختلف فيهن، فحصل العلم بنقل التواتر بهن، وهن إحدى عشرة امرأة، منهن ست من قريش: خديجة، وسودة، وعائشة، وحفصة، وأم سلمة، وأم حبيبة . وأربع من العرب: زينب بنت خزيمة، وزينب بنت جحش، وجويرية، وميمونة؛ وواحدة من بني إسرائيل: وهي صفية. توفي منهن اثنتان في حياته: خديجة أول نسائه، وزينب بنت خزيمة. وتوفي صلّى اللّه عليه وسلّم عن التسع الباقيات " انتهى. (৩) আবু দাউদ: ২১৭৮ عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " أَبْغَضُ الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلَاقُ ". (৪) বুখারি: ৫২৫৪, ৫২৫৫, ৫২৫৬, وعَنْ عَبَّاسِ بْنِ سَهْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، وَأَبِي أُسَيْدٍ، قَالاَ: ( تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُمَيْمَةَ بِنْتَ شَرَاحِيلَ، فَلَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَيْهِ بَسَطَ يَدَهُ إِلَيْهَا، فَكَأَنَّهَا كَرِهَتْ ذَلِكَ ، فَأَمَرَ أَبَا أُسَيْدٍ أَنْ يُجَهِّزَهَا وَيَكْسُوَهَا ثَوْبَيْنِ رَازِقِيَّيْنِ فعَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: ( أَنَّ ابْنَةَ الجَوْنِ، لَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَنَا مِنْهَا، قَالَتْ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ، فَقَالَ لَهَا: لَقَدْ عُذْتِ بِعَظِيمٍ، الحَقِي بِأَهْلِكِ ) رواه البخاري وعَنْ أَبِي أُسَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: ( خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْطَلَقْنَا إِلَى حَائِطٍ يُقَالُ: لَهُ الشَّوْطُ، حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى حَائِطَيْنِ، فَجَلَسْنَا بَيْنَهُمَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اجْلِسُوا هَا هُنَا! وَدَخَلَ، وَقَدْ أُتِيَ بِالْجَوْنِيَّةِ، فَأُنْزِلَتْ فِي بَيْتٍ فِي نَخْلٍ فِي بَيْتِ أُمَيْمَةَ بِنْتِ النُّعْمَانِ بْنِ شَرَاحِيلَ، وَمَعَهَا دَايَتُهَا حَاضِنَةٌ لَهَا، فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: هَبِي نَفْسَكِ لِي، قَالَتْ: وَهَلْ تَهَبُ المَلِكَةُ نَفْسَهَا لِلسُّوقَةِ؟ قَالَ: فَأَهْوَى بِيَدِهِ يَضَعُ يَدَهُ عَلَيْهَا لِتَسْكُنَ، فَقَالَتْ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ، فَقَالَ: قَدْ عُذْتِ بِمَعَاذٍ، ثُمَّ خَرَجَ عَلَيْنَا فَقَالَ: يَا أَبَا أُسَيْدٍ! اكْسُهَا رَازِقِيَّتَيْنِ، وَأَلْحِقْهَا بِأَهْلِهَا ) رواه البخاري (৫) যাদুল মাআদ: ১/১১০ فهؤلاء نساؤه المعروفات اللاتي دخل بهن، وأما من خطبها ولم يتزوجها، ومن وهبت نفسها له ولم يتزوجها، فنحو أربع أو خمس .وقال بعضهم: هن ثلاثون امرأة، وأهل العلم بسيرته وأحواله صلى الله عليه وسلم لا يعرفون هذا، بل ينكرونه " انتهى، من "زاد المعاد" (1 / 110) (৬) আল ইস্তিআব: ১/৪৬ وقال ابن عبد البر رحمه الله تعالى: " وأما اللواتي اختلف فيهن ممن ابتنى بها وفارقها ، أو عقد عليها ولم يدخل بها، أو خطبها ولم يتم له العقد منها، فقد اختلف فيهن، وفي أسباب فراقهن اختلافًا كثيرًا ، يوجب التوقف عن القطع بالصحة في واحدة منهن " انتهى، من "الاستيعاب" (1 / 46) (৭) সিয়ারু আলামিন নুবালা: ২/৪৯৫ قال الذهبي رحمه الله تعالى بعد أن ذكر جملة من هذه الروايات: " هذا ونحوه إنما أوردته للتعجب لا للتقرير " انتهى، من "سير أعلام النبلاء" (سيرة2 / 495) (৮) সুবুলুল হুদা: ১১/২২১ باب الرابع عشر في ذكر من عقد عليها ولم يدخل بها صلى الله عليه وسلم.. علي خلاف في بعضهن، هل هي ممّن عقد عليها أم لا؟ والكلام في ذلك طويل الذّيل، والخلاف فيه منتشر، حتى قال في زاد المعاد بعد أن ذكر النسوة اللاتي دخل بهن: وأما من خطبها ولم يتزوّج بها فنحو أربع أو خمس. قال الحافظ الدّمياطي: هن ثلاثون امرأة، وأهل السير وأحواله لا يعرفون هذا بل ينكرونه، والمعروف عندهم أنه بعث إلى الجونيّة ليتزوّجها، فدخل عليها ليخطبها، فاستعاذت منه، فأعاذها ولم يتزوّجها، وكذلك الكلابيّة، وكذلك من رأى بكشحها بياضا، فلم يدخل بها، والّتي وهبت نفسها له فزوّجها غيره على سور من القرآن، هذا هو المحفوظ، وإذا علم ذلك فأذكر ما وقفت عليه منهنّ. (৯) কুরতুবি: ১৭/২১১ فَأَمَّا زَوْجَاتُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اللَّاتِي فَارَقَهُنَّ فِي حَيَاتِهِ مِثْلُ الْكَلْبِيَّةِ وَغَيْرِهَا، فَهَلْ كَانَ يَحِلُّ لِغَيْرِهِ نِكَاحُهُنَّ؟ فِيهِ خِلَافٌ. وَالصَّحِيحُ جَوَازُ ذَلِكَ، لِمَا رُوِيَ أَنَّ الْكَلْبِيَّةَ الَّتِي فَارَقَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَت بغيره وَلَمْ يُنْكِرْ ذَلِكَ أَحَدٌ، فَدَلَّ عَلَى أَنَّهُ إجماع" انتهى بتصرف يسير، م "تفسير القرطبي" (17/211) . ইবনে কাসির: ৬/৩৮০ قال ابن كثير: " وقوله: ( وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ ) أي: في الحرمة والاحترام، والإكرام والتوقير والإعظام، ولكن لا تجوز الخلوة بهن، ولا ينتشر التحريم إلى بناتهن وأخواتهن بالإجماع " انتهى، من " تفسير ابن كثير" (6 / 380 - 381). (১০) কুরতুবি: ১৮/১৪৮ وذكر القرطبي في تفسيره عن الكلبي قال: سبب نزول هذه الآية غضب رسول الله صلى الله عليه وسلم على حفصة لما أسر إليها حديثا فأظهرته لعائشة، فطلقها تطليقة، فنزلت الآية وهي قوله تعالى: يا أيها النبي إذا طلقتم النساء فطلقوهن لعدتهن. (১১) কুরতুবি: ১৭/২১১ فَأَمَّا زَوْجَاتُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اللَّاتِي فَارَقَهُنَّ فِي حَيَاتِهِ مِثْلُ الْكَلْبِيَّةِ وَغَيْرِهَا، فَهَلْ كَانَ يَحِلُّ لِغَيْرِهِ نِكَاحُهُنَّ؟ فِيهِ خِلَافٌ. وَالصَّحِيحُ جَوَازُ ذَلِكَ، لِمَا رُوِيَ أَنَّ الْكَلْبِيَّةَ الَّتِي فَارَقَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَت بغيره وَلَمْ يُنْكِرْ ذَلِكَ أَحَدٌ، فَدَلَّ عَلَى أَنَّهُ إجماع" انتهى بتصرف يسير، م "تفسير القرطبي" (17/211)
বিস্তারিত পড়ুনশবে বরাতের তাৎপর্য, ফজীলত ও আমল
৯ মে, ২০২৫
শবে বারাআত বা লাইলাতুল বারাআতকে হাদীস শরীফে “লাইলাইতুন নিসফি মিন শা‘বান” নামে উল্লেখ করা হয়েছে। আর উক্ত রাতের ফজীলতের দিকে খেয়াল করে উলামায়ে উম্মত এ রাতকে “লাইলাতুল বারাআত” নামকরণ করেছেন। এর অর্থঃ লাইলাতুল বারাআতি মিনাজ জুনূব অর্থাৎ গুনাহ থেকে মুক্তির রাত। যেমনিভাবে “তারাবীহ নামায” নামের কোন উল্লেখ হাদীস শরীফে নেই, হাদীস শরীফে উক্ত নামাযকে “কিয়ামুল লাইল ফী রামাজান” বলা হয়েছে এবং উক্ত নামায সকল মুসলমানের জন্য পালনীয়, তেমনিভাবে শবে বারাআত নাম উল্লেখ না থাকলেও লাইলাতুন নিসফি মিন শা‘বান নামে উক্ত রাতের ফজীলত ও আমলের কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হওয়ায় তা মুসলমানদের জন্য পালনীয় হবে। লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআতের ফজীলত ও আমলের বিষয় সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তেমনি এ ব্যাপারে বর্ণিত সকল হাদীসের সমষ্টি এ রাতের বিশেষ ফজীলতের বিষয়কে প্রমাণিত করে। তাই একে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। শবে বারাআত সম্পর্কে নিম্নে সহীহ হাদীস উল্লেখ করা হলোঃ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ رضي الله عنه ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻰ صلي الله عليه وسلم ﻗﺎﻝ ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ-শা‘বানের রাতে (শা‘বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত শবে বারাআতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬৬৫/ সুনানে বাইহাকী--শু‘আবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৮৩৩/ মু‘জামে তাবরানী, কাবীর, হাদীস নং ৩৫৪৩) উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান (রহ.) তার ‘কিতাবুস সহীহ’ গ্রন্থে (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামে প্রসিদ্ধ এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। হাদীসটির সনদ সহীহ বলেই তিনি একে তাঁর কিতাবুস সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ বা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার। তাই ইমাম মুনযিরী, আল্লামা ইবনে রজব, আল্লামা নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে গ্রহণীয় ও আমলযোগ্য বলেছেন। (বিস্তারিত দেখুন : আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ২য় খণ্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠা/ মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ, ৮ম খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা/ শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা, ১০ম খণ্ড, ৫৬১ পৃষ্ঠা) শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এ হাদীসকে সহীহ বলে গণ্য করে তার “সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা” গ্রন্থের ৩য় খণ্ড-১৩৫ পৃষ্ঠায় এ হাদীসকে স্থান দিয়েছেন এবং এর সমর্থনে আরো ৮টি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন-- ﻭﺟﻤﻠﺔ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺑﻤﺠﻤﻮﻉ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻄﺮﻕ ﺻﺤﻴﺢ ﺑﻼﺭﻳﺐ ﻭﺍﻟﺼﺤﺔ ﺗﺜﺒﺖ ﺑﺄﻗﻞ ﻣﻨﻬﺎ ﻋﺪﺩﺍ ﻣﺎﺩﺍﻣﺖ ﺳﺎﻟﻤﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻀﻌﻒ ﺍﻟﺸﺪﻳﺪ ﻛﻤﺎﻫﻮ ﺍﻟﺸﺄﻥ ﻓﻰ ﻫﺬﺍﺍﻟﺤﺪﻳﺚ “সারকথা হলো, এ হাদীসটি এ সকল রিওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে নিঃসন্দেহে সহীহ। আর কোন হাদীস সহীহ হওয়া তো এর চেয়ে কমসংখ্যক রিওয়ায়াতের সমষ্টিতেই হয়ে যায় যখন তা প্রচণ্ড দুর্বলতা থেকে মুক্ত থাকে--যেমন অবস্থা এ হাদীসের ক্ষেত্রে।” (সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা, ৩য় খণ্ড, ১৩৮ পৃষ্ঠা) অধিকন্তু আলবানী সাহেব সেখানে ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করে শক্ত প্রতিবাদ করেছেন, যারা কোন ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বারাআতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই। (সিলসিলাতুল আহাদসিস সাহীহা, ৩য় খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা) বলা বাহুল্য, শবে বারাআতের ব্যাপারে যদি শুধু এ হাদীসটিই থাকতো এবং অন্য কোন হাদীস না থাকতো, তবুও এ হাদীস দ্বারাই শবে বারাআত প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। কারণ, এটা নির্ভরযোগ্য সহীহ হাদীস। তারপরও আমরা দেখতে পাই, এ রাতের ফজীলত সম্পর্কে আরো বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্য থেকে আলবানী সাহেব ৮টি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো জয়ীফ হলেও প্রচণ্ড ধরনের জয়ীফ নয়। তাই এগুলোর সপক্ষে উল্লিখিত হাদীস বিদ্যমান থাকায় এগুলো প্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। উল্লিখিত সহীহ হাদীস দ্বারা শবে বারাআতের ফজীলত ও আমল উভয়ই প্রমাণিত হয়। কেননা, যখন এ হাদীসে শবে বারা্আতে বান্দাদেরকে ক্ষমা করার ঘোষণা দেয়া হলো, সুতরাং সেই ক্ষমা লাভের জন্য অবশ্যই তাদের এর উপযুক্ত আমল করা কর্তব্য। শবে বরাতের আমলঃ এ রাতের আমল সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা সম্বলিত নির্ভরযোগ্য হাদীসও রয়েছে। যেমন, এ সম্পর্কে একটি নির্ভরযোগ্য হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো-- عن عائشة بنت أبي بكر قالت قام رسول الله صلي الله عليه وسلم من الليل يصلي فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض فلما رأيت ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت فلما رفع إلي رأسه من السجود وفرغ من صلاته قال يا عائشة أظننت أن النبي قد خاس بك؟ قلت لا والله يا رسول الله ولكنني ظننت أنك قبضت لطول سجودك فقال أتدرين أي ليلة هذه؟ قلت الله ورسوله أعلم قال هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم হযরত আয়িশা বিনতে আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)নামাযে দাঁড়ালেন। তখন তিনি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ধারণা করলাম--তাঁর প্রাণবিয়োগ হয়েছে। যখন আমি তা ভাবলাম, তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাতে তা নড়ে ওঠলো। তখন আমি ফিরে এলাম। এরপর যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম--না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনার প্রাণবিয়োগ হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান--এটা কোন্ রাত? আমি বললাম--আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন-- “এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত শবে বারাআত)। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ-শাবানের রাতে স্বীয় বান্দাদের প্রতি নিবেশন করেন। অতঃপর তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদেরকে ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদেরকে অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে তাদের বদকর্মের কারণে ফিরিয়ে দেন।” (বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৮২ পৃষ্ঠা) এ হাদীসটিও নির্ভরযোগ্য। ইমাম বাইহাকী (রহ.) এ হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেন-- ﻫﺬﺍ ﻣﺮﺳﻞ ﺟﻴﺪ “এই হাদীসটি উত্তম সনদের মুরসাল হাদীস।” (বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা) এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো, শবে বারাআতে নফল নামায পড়া এবং তাকে এভাবে দীর্ঘ করা, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে--এটা মাসনূন আমল। আবার সুনানে ইবনে মাজাহর এক হাদীসে রাতে নফল নামায পড়া ও নফল ইবাদত করার সাথে পরদিন রোযা রাখার নির্দেশনাও বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কিত একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো-- عن علي بن أبي طالب ﺭﺿﻰ الله ﻋﻨﻪ قال قال رسول الله ذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا، فيقول ألا من مستغفر فأغفر له، ألا مسترزق فأرزقه، ألا مبتلى فأعافيه، ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--“মধ্য-শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। কেউ আছে কি আপদগ্রস্ত? তাকে আমি নিষ্কৃতি দান করব।আছে কি এমুক, আছে কি ওমুক--এভাবে আল্লাহ তা‘আলা আহবান সুবহে সাদিক পর্যন্ত ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪) এ হাদীসটি জয়ীফ। তবে এর সমর্থনে উপরে বর্ণিত সহীহ হাদীস থাকায় এটা গ্রহণযোগ্য। তা ছাড়া আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যহ রাতে প্রথম আসমানে এসে বান্দাদেরকে ঐরূপে আহবান করার ব্যাপারে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা এ হাদীসের বর্ণনাকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়াও শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং ১লা শা‘বান থেকে ২৭ই শা‘বান পযন্ত সবগুলো দিনই রোযা রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ফজীলতময়। শুধু কেবল রামাজানের ২/১ দিন আগে রোযা রেখে রামাজানকে এগিয়ে না এনে বিরতি দিয়ে রামাজানের রোযা সুন্দরভাবে রাখার জন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। তবে যাদের প্রতিমাসে এদিন রোযা রাখার অভ্যাস তাদের কথা ভিন্ন। শবে বরাতের পরের দিন শাবান মাসের ১৫ তারিখ। এ দিন অনেকে রোযা রেখে থাকেন। এ সম্পর্কে একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজনঃ প্রতি চান্দ্র মাসে তিন দিন রোযা রাখা সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন, সাহাবীগণকেও মাসে তিন দিন রোযা রাখতে বলতেন। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬০; ৭৬৩) সে হিসেবে মাসে তিন দিন রোযা রাখা সুন্নাত। এই তিন দিন মাসের শুরুতেও হতে পারে, মাঝেও হতে পারে, আবার শেষেও হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু হাদীসে স্পষ্ট আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বিশেষভাবে মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ (যাকে আইয়ামে বীয বলা হয়) রোযা রাখতে বলেছেন। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৪৯; ফাতহুল বারী, ১৯৮১ নং হাদীসের আলোচনা) এই হাদীসগুলোর ওপর ভিত্তি করে হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, যে তিন দিনের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, সেই তিন দিন রোযা রাখাই সর্বোত্তম। (দ্র. ফাতহুল বারী, ১৯৮১ নং হাদীসের আলোচনা) সে হিসেবে প্রতি মাসের আইয়ামে বীযে রোযা রাখা সুন্নত। শাবান মাসও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই শাবান মাসের আইয়ামে বীযে (১৩, ১৪, ১৫) রোযা রাখাও সুন্নত। ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ১৫ তারিখ রোযা রাখাও সুন্নত। বাকি থাকল একটি বর্ণনায় বিশেষভাবে ও পৃথকভাবে ১৫ শাবান রোযা রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সুনানে ইবনে মাজাহ, বর্ণনা ১৩৮৪) কিন্তু বর্ণনাটি শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল। শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল হওয়ার কারণে কেবল এই বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে ১৫ শাবানের রোযাকে পৃথকভাবে সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব মনে করা সঠিক নয় বলে মতামত দিয়েছেন মুহাক্কিক আলেমগণ। তবে, যেমনটি পূর্বে বলা হল, ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত―এ হিসেবে এই দিনের রোযাকে (১৩ ও ১৪ তারিখের রোযাসহ) নিঃসন্দেহে সুন্নত মনে করা যাবে। মোটকথা, সর্বাবস্থায় শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোযা রাখা যাবে। পূর্বের দুই দিন তথা ১৩ ও ১৪ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে তিন দিন রোযা রাখা যেমন যাবে, তেমনি পৃথকভাবে কেবল ১৫ তারিখও রোযা রাখা যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তিন দিন রাখাই উত্তম। এমনিভাবে ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের একটি দিন হিসেবে ১৫ তারিখের রোযাকে সুন্নতও মনে করা যাবে। কিন্তু পৃথকভাবে শাবান মাসের ১৫ তারিখ বিশেষ একটি দিন, সে হিসেবে পৃথকভাবে এ দিনে রোযা রাখা সুন্নত―এমন ধারণা রাখা যাবে না। এ প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে, শবে বরাত-পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনেরো তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসূলের বিশাল ভাণ্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, ‘শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ’। সনদ ও বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতেই অনুচিত। তবে হাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, ‘রমযানের দু-একদিন পূর্বে রোযা রেখো না।’ যাতে রমযানের জন্য পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃর্স্ফূভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, শাবানের এই ১৫ তারিখ তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভুক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি এই দুই বিষয়কে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভুক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে সওয়াব পাবে। তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও ইয়াওমে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যেকোনো দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে, ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোযা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোনো দিনের পৃথক কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।’ ―ইসলাহী খুতুবাত ৪/২৬৭-২৬৮ শবে বারাআতের বিশেষ আমল হিসেবে এ রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগী করা তথা নফল নামায পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাসবীহ-তাহলীল পড়া, দরূদ শরীফ পড়া ও ইস্তিগফার করা প্রভৃতি আমল মুস্তাহাব। আর পরদিন অথবা আগের দুইদিন সহ মোট তিনদিন রোযা রাখা এর সংশ্লিষ্ট উত্তম আমল। এ রাতে নফল নামায যার যতটুকু ইচ্ছা আদায় করতে পারে। এজন্য কোন সীমা নির্ধারিত নেই। আবার এ রাতের নামাযের জন্য কোন সূরাহও নির্দিষ্ট নেই যে, এই রাক‘আতে এই সূরাহ এতবার পড়তে হবে। তেমনি এ রাতের গোসলেরও কোন হুকুম নেই বা এমন কোন ফজীলত নেই যে, যত পানির ফোটা পড়বে, ততগুনাহ মাফ হবে। এ সবই গর্হিত বানোয়াট কথা। তেমনি এ রাত উদযাপনে বাড়াবাড়ি করা, হালুয়া-রুটি বিতরণ, মোমবাতি জ্বালানোর রুসম পালন ও পটকা ফুটানো গর্হিত কাজ। এ রাতের নফল আমলসমূহ বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরজ নামাযতো পুরুষদের অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার, তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়া বাঞ্ছনীয়। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফে নেই। তাই শবে বারাআত উপলক্ষে মসজিদে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন বা সমারোহ বাঞ্ছনীয় নয়। তেমনি দলবদ্ধ হয়ে এ রাতে কবরস্তান যিয়ারতেরও নিয়ম নেই। তবে একাকি কেউ কবর যিয়ারত করতে গেলে যেতে পারে এবং তা শুধু এ রাতের জন্য খাস নয়, যখন খুশী তখনই যেতে পারে। আর রাত জেগে যাতে ফজরের নামায কাজা না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং রাতে ইবাদত-বন্দেগী করতে করতে ঘুমের জরুরত অনুভূত হলে, তাও পূরণ করা বাঞ্ছনীয়। আল্লামা লাখনৌবী রাহ. ‘আল আছারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মওজুআ’ (পৃ. ৮০-৮৫)তে পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘শবে বরাতে রাত্রি জেগে ইবাদত করা এবং যেকোনো নফল আমল যাতে আগ্রহ বোধ হয় তা আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ রাতে মানুষ যত রাকাআত ইচ্ছা নামায পড়তে পারে, তবে এ ধারণা ভুল যে, এ রাতের বিশেষ নামায রয়েছে এবং তার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যেসব বর্ণনায় এ ধরনের কথা পাওয়া যায় সেগুলো ‘মওযু।’ তবে এ রাত একটি ফযীলতপূর্ণ রজনী এবং এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী করা মুস্তাহাব-এ বিষয়টি সহীহ হাদীস থেকেও প্রমাণিত। মোটকথা, এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা যেমন ভুল তদ্রূপ মনগড়া কথাবার্তায় বিশ্বাসী হওয়াও ভুল।’ এভাবে হাদীসে বর্ণিত সহীহ তরীকায় শবে বারাআতে আমল করা মুস্তাহাব। এদিকে লক্ষ্য করেই অনেক আইম্মায়ে মুহাদ্দিসীন তাদের কিতাবে শবে বারাআত নিয়ে ভিন্ন বাব কায়েম করেছেন এবং মুহাক্কিক মাশায়িখে উম্মত শবে বারাআত-এর ফজীলত ও আমলের ওপর পৃথকভাবে গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাই এ রাতের বিশেষত্ব ও ফজীলতকে অস্বীকার করা হাদীস সম্পর্কে জাহালাতের শামিল। [হাওয়ালা : ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, ২য় খণ্ড, ৬৩১-৬৪১ পৃষ্ঠা/ মারাকিল ফালাহ, ২১৯ পৃষ্ঠা প্রভৃতি] আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমলের তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিস্তারিত পড়ুনবিড়ি-সিগারেট, মদ ও তামাকজাত দ্রব্য খাওয়া ও ব্যবসায়ের বিধান
৯ মে, ২০২৫
মদ, বিড়ি, সিগারেট, ফেন্সিডিল, ইয়াবাঃ এইগুলা খাওয়া এবং বিক্রি করার বিধান কি এটি আমাদের বিস্তারিত সুন্দরভাবে জানা থাকা দরকার। এ কথা মনে রাখতে হবেঃ কুরআন এবং হাদিসে যে বস্তু নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ এসেছে সেটা অকাট্যভাবে হারাম, আর যে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা আসে নাই; তবে ইঙ্গিত পাওয়া যায় সেটা নাজায়েজ। কিছু মূলনীতিকে সামনে রেখে এবং কিছু ইঙ্গিতমুলক আয়াত হাদিসকে সামনে রেখেই মূলত নাজায়েজ বা মাকরুহে তাহরীমি সাব্যস্ত হয়। আরো একটু খুলে বললেঃ কোন কোন হাদিসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও সনদের দূর্বলতা অথবা হাদিসের মুল মাক্বসাদ, বর্ণনাভঙ্গি দ্বারা নাজায়েজ নির্ণীত হয়। এখানে আরো লম্বা শাস্ত্রীয় আলাপ আছে, যা আহলে ঈলমগন ভালো বুঝবেন। অর্থাৎ অকাট্য হারামের চাইতে এক স্তর নিচে। তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই কবিরা গুনাহ হবে। হারাম তথা যেটি অকাট্যভাবে হারাম এবং নাজায়েজ এর মধ্যে পার্থক্য হলঃ অকাট্যভাবে প্রমাণিত হারাম বিষয়কে অস্বীকার করলে ব্যক্তি কাফের হয়ে যায়, আর নাজায়েজকে অস্বীকার করলে কাফের হয় না। এবার এ কথা বুঝে নিনঃ উপরে যে সমস্ত বস্তুর কথা বলা হয়েছেঃ এর মধ্যে শুধুমাত্র মদ হারাম এবং নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন এবং হাদিসে অসংখ্য বিধি নিষেধ আরোপ হয়েছে। বিধায় মদ পান করা, মদ বিক্রি করা, মদ সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজ করা এবং এর বিনিময় গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। কোন প্রকার বৈধতার সুযোগ নাই। পক্ষান্তরে ইয়াবা, ফেনসিডিল, আফিম, সিগারেট এগুলোর ব্যাপারে কুরআন এবং হাদিসে সুস্পষ্ট অকাট্যভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। কারণঃ সিগারেট, ফেন্সিডিল, ইয়াবাঃ এগুলা সবই উৎপত্তি হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের অনেক পরে। তাই এগুলা কুরআন হাদিসে নিষেধ করার কোন সম্ভাবনা নাই। তবে যেহেতু মদের কিছু কিছু খারাবি এখানে পাওয়া যায়, তাই এগুলোকে সরাসরি হারাম না বলে নাজায়েজ বলা হয়। অর্থাৎ, এগুলোর খারাবি এবং ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় মদের চাইতে খুব একটা কম নয়। যার কারনে ফুক্বাহায়ে কিরাম শরীয়তের মূলনীতি অনুযায়ী এই বিষয়গুলো খাওয়াকে নাজায়েজ বলেছেন। অর্থাৎ অবশ্যই কবীরা গোনাহ হবে। তবে অকাট্যভাবে হারাম বলেননি, কেননা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। তাই এগুলা নাজায়েজ। বাকি কথা রইল যে এই সমস্ত বস্তুগুলো বিক্রি করা যাবে কিনা এবং এগুলোর সেক্টরে কাজ করা যাবে কিনা এবং কেউ কাজ করলে তার বিধান কি হবে। দেখুন! ইসলামি শরীয়াহর একটি মুলনীতি হলোঃ যেই বস্তু মুলগতভাবে হারাম নয়, সত্তাগত হিসেবে হালাল, এবং পাক, এবং তা দ্বারা বৈধভাবে উপকৃত হওয়া সম্ভবঃ এমন জিনিস বিক্রি করা জায়েজ। এমন জিনিস যেখানে বিক্রি করবে, সেখানে কাজের বিনিময়ে টাকা নেয়াও জায়েজ। তবে সেই বস্তু যদি কেউ অনৈতিক অবৈধ পন্থায় ব্যবহার করে, তাহলে তার সেই অবৈধ পন্থায় ব্যবহার নাজায়েজ। অর্থাৎ শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, যে সকল বস্তুর স্বাভাবিক ব্যবহার বৈধ, তথা যেসমস্ত বস্তুকে হালালভাবে ব্যবহার করা যায়, করার উপায় আছে, সেগুলোর ব্যবসা করাও বৈধ। আর যে সকল বস্তুর ব্যবহারই নিষিদ্ধ, সেগুলোর ব্যবসা করা হারাম, এবং সেখান থেকে অর্জিত আয়ও হারাম হয়। না জেনে উপার্জন করে ফেললে পরবর্তীতে সেই পরিমান টাকা তাকে সদক্বাহ করতে হবে। এবার আসুনঃ মদকে আল্লাহ তাআলা সত্তাগতভাবেই হারাম এবং নাপাক সাব্যস্ত করেছেন। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিসের মধ্যে মতকে সুস্পষ্টভাবে হারাম বলে ব্যক্ত করেছেন। বিধায় মদ বিক্রি করা মদের কারখানায় চাকরি করা মত বিক্রি করে উপার্জন করা সম্পন্ন হারাম অকাট্য হারাম। কারণ মদের অনেক ক্ষতি রয়েছে। মদের কারণে এমন মাতলামি সৃষ্টি হয় যে; মানুষ তার স্বাভাবিক জ্ঞানে থাকে না, সম্পূর্ণ উদ্ভ্রান্ত হয়ে যায়, অশ্লীলতা বেড়ে যায়। সমস্ত খারাবির কারণে এটিকে স্পষ্ট নিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সিগারেট এর তামাক, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাজাঃ এগুলোর দ্বারা সত্তাগতভাবে তথা এই বস্তুগুলো দিয়ে উপকৃত হওয়া সম্ভব। এবং এইগুলা অনেক ঔষধের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু এইগুলা দ্বারা বৈধভাবে উপকৃত হওয়ার একটি মাধ্যম রয়েছে, যদিও মানুষ অবৈধ ব্যাবহার তথা নেশা করেঃ সুতরাং বৈধ ব্যবহারের দিক থাকার কারণে এই দিকে লক্ষ্য করে এগুলার ব্যবসা করা হারামের চাইতে এক স্তর নিচে নাজায়েজ হবে। এসব ব্যবসা করার সুযোগ নাই। যদি কেউ না জেনে ভুলে করে ফেলে, তাহলে তার উপার্জিত টাকা সে ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু সামনে থেকে এমন কাজে জড়িত হবে না। কারণ এটি জগতের সবচাইতে নিকৃষ্ট উপার্জনের অন্যতম। এমন ব্যক্তিদের রাসুলের শাফায়াত ভাগ্যে জোটা কঠিন। এবং যদি বিক্রেতা জানেন যে ক্রেতা এটি নেশার জন্য ব্যবহার করবে, তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে আফিম /গাজা/ফেন্সিডিল বিক্রি করবে না । অন্য যে নেশাজাত দ্রব্যের ব্যবসা করা হয়, সেগুলো যদি শুধুমাত্র নেশার জন্য ব্যবহৃত হয়, তাহলে সে ব্যবসাও বৈধ হবে না। কিন্তু যদি সেগুলো ওষুধেও ব্যবহৃত হয়, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে আফিমের মতো একই বিধান প্রযোজ্য হবে। অনেকে বলতে চানঃ হুজুর! এগুলা তো মদের মত, নেশা হয়। যুক্তি দেখিয়ে বলেন যেঃ এগুলা বেশি খেলে নেশা হয়। দেখুনঃ নেশা বা মাতলামি দ্বারা কি উদ্দেশ্য সেটা বুঝতে হবে! মাতলামি মানে হলো ব্যক্তি তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে, সে জাগ্রত থাকার পরেও নিজের কোন প্রকার কন্ট্রোল তার মধ্যে থাকবে না, সম্পূর্ণ উন্মাদের ন্যায় হয়ে যাবে। আফিম, গাজা/ইয়াবা বেশি খেলে মাথা ঘোরায়, কিন্তু মাতাল হয় না। শুধু মাথা ঘুরানোর কারণে এটা মদের মতো হয়ে যাবে না। অনেকেরই প্রশ্নঃ তাহলে হুজুর! হাদিসে যে বলা হয়েছেঃ كل مسكر حرام অর্থাৎ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম। সেক্ষেত্রে সিগারেট, ফেন্সিডিল এগুলোও তো নেশাজাতীয় বস্তু, তাহলে এগুলা অকাট্য হারাম নয় কে বলেছে? কেন হারাম নয়! দেখুন! সিগারেট বা ফেন্সিডিল বা গাজা এগুলা কি নেশা সৃষ্টিকারী? মানুষ যখন কোনো উত্তেজকের আবেশে নিজের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন তাকে নেশাগ্রস্ত বলা হয়। শুধু মাথা ঘুরালেই মাতাল বলা হয় না। যেমন কোন ব্যক্তি যদি অনেক বেশি পরিমানে মধু খায়, চিনি খায়; নিশ্চিত তার মাথা ঘুরাবে। নিজেকে অনেক সময় কন্ট্রোল করতে পারে না। তাহলে এটাকে কি আপনি মাতলামি বলবেন? নিশ্চয়ই না। তাহলে বোঝা গেলো মূল মাতলামি হয় এমন বস্তু থেকে, যেটা ব্যক্তির সম্পূর্ণ অনুভূতি বিলোপ করতে সক্ষম। আর এটা শুধু মদের মধ্যেই পাওয়া যায়। তাই অকাট্য হারাম নয় এগুলা, তবে নাজায়েজ অবৈধ অবশ্যই। কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বিষয়গুলি আমাদের বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন। পানের সাথে প্রায় অধিকাংশ মানুষই জর্দা এবং তামাক খান। আর জর্দা সম্পর্কে প্রচলিত আছে এটি নেশা জাতীয় দ্রব্য যা খাওয়া হারাম। আবার কেউ বলে মাকরূহ, কেউ বলে মুবাহ। অনেক এলাকায় মনে করা হয় যে ইমাম পানের সাথে জর্দা খায় তার পিছনে ইকতিদা করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন। ফকিহগণের মতে, জর্দা -তামাক খাওয়া হারাম নয় এবং জর্দা খায় এমন ইমামের পিছনে ইকতিদা করাও বৈধ। হাদিসে যে বলা হয়েছেঃ فَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। এটার দ্বারা মাতলামি তথা নিয়ন্ত্রনহীনতা উদ্দেশ্য । কারণ তামাক-জর্দা খেলে মানুষ মাতাল হয় একথাটি সর্বৈব মিথ্যা। এতটুকু বলা যেতে পারে যে, অতিরিক্ত খেলে মাথা ঘুরাবে। বমি আসবে। যদি বেশি খাওয়ায় মাথা ঘুরানো, বমি আসা, বা মাতাল হওয়াকে নিষিদ্ধ ও হারাম হবার মানদণ্ড ধরা হয়, তাহলে বলতে হবে মধু খাওয়া হারাম। কারণ, খাটি মধু আপনি একসাথে এক দেড় কেজি খেয়ে দেখেন মাথা ঘুরবেই। বমি আসবেই। মাতাল হয়ে যাবেন। যতক্ষণ না তা মাদক হিসেবে সাব্যস্ত হয়, তথা এর মাধ্যমে মানুষ মাতাল হয়ে যাওয়া নিশ্চিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেটিকে মদের হুকুমে আরোপ করা অযৌক্তিক অসাড় মস্তিস্কের মন্তব্য ছাড়া কিছুই বলার সুযোগ নেই। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ব্যাপকভাবে শির্কা এবং নাবীজ পান করতেন। যা বেশি পরিমাণ খেলে বা বেশিদিন ভিজিয়ে রাখলে তা মাদকে পরিণত হতো। সুতরাং বুঝা গেল যে, যা মূলত মাদক হিসেবে স্বীকৃত নয়, তা নেশা পরিমাণ পান না করলে তা নিষিদ্ধ নয়। عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَأَمْسِكُوا مَا بَدَا لَكُمْ، وَنَهَيْتُكُمْ عَنِ النَّبِيذِ إِلَّا فِي سِقَاءٍ، فَاشْرَبُوا فِي الْأَسْقِيَةِ كُلِّهَا، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا» বুরায়দা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কবর যিয়ারত করা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম এখন তোমরা যিয়ারত কর। তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করতাম, এখন যত দিন সম্ভব সংরক্ষণ করে খেতে থাক এবং নাবীয (খেজুর ভিজানো পানি) পান করা হতে নিষেধ করতাম। (মশক ব্যতীত অন্যান্য পাত্রে) এখন সকল পাত্রে পান কর। কিন্তু নেশা হয় এমন অবস্থায় নয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৭৭। সুতরাং এব্যাপারে মুল কথা হলোঃ পানের সাথে জর্দা বা তামাক খাওয়া ডাক্তারি মতে অনেকের জন্য শারীরিক ক্ষতির কারণ। তাই যথাসম্ভব এ থেকে বিরত থাকা উচিত। আর কারো ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর প্রমাণিত হলে তার জন্য তা খাওয়া নাজায়েয হবে। গুল খাওয়া মাকরুহ, কারণ এর দ্বারা মুখে দুর্গন্ধ হয়। দলীল সমূহঃ (1) يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর তার মধ্যে মানুষের জন্য উপকারিতাও আছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারের চেয়ে বড়।’ (সূরা বাক্বারাহ :২১৯) (2) ﻭاﻟﺨﻤﺮ ﻣﺎ ﺧﺎﻣﺮ اﻟﻌﻘﻞ ‘মাদকদ্রব্য তাই যা জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৬১৯) (3) وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ‘তোমরা পূণ্য ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং গুনাহ ও সীমালঙ্ঘণের কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না।’ (সূরা মায়িদাহ : ২) (5) الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 460): "وفي الأشباه في قاعدة: الأصل الإباحة أو التوقف، ويظهر أثره فيما أشكل حاله كالحيوان المشكل أمره والنبات المجهول سمته اهـ قلت: فيفهم منه حكم النبات الذي شاع في زماننا المسمى بالتتن فتنبه. (قوله: ربما أضر بالبدن) الواقع أنه يختلف باختلاف المستعملين ط (قوله: الأصل الإباحة أو التوقف) المختار الأول عند الجمهور من الحنفية والشافعية كما صرح به المحقق ابن الهمام في تحرير الأصول (قوله: فيفهم منه حكم النبات) وهو الإباحة على المختار أو التوقف. وفيه إشارة إلى عدم تسليم إسكاره وتفتيره وإضراره، وإلا لم يصح إدخاله تحت القاعدة المذكورة ولذا أمر بالتنبه". فقط والله أعلم (6) কিফায়াতুল মুফতির মধ্যে আছেঃ ’’(سوال) میں نے ایک دکان فی الحال کھولی ہے جس میں متفرق اشیاء ہیں، ارادہ ہے کہ سگریٹ اور پینے کا تمباکو بھی رکھ لوں یہ ناجائز تو نہیں ہوگا ؟ ( جواب ۱۶۳) سگریٹ اور تمباکو کی تجارت جائز ہے او ر اس کا نفع استعمال میں لانا حلال ہے ۔محمد کفایت اللہ کان اللہ لہ‘‘۔ (ص:9 ج:148) فتاوی دارالعلوم دیوبند میں ہے: " سوال (۱۸۳) تمباکو،سگریٹ ،بیڑی فروخت جائز ہے یا ناجائز ؟ جواب :درست ہے ، لیکن مکروہ ہے۔"(ج:14، ص:364) (7) وبالجملة إن ثبت في هذا الدخان إضرار صرف خال عن المنافع فيجوز الإفتاء بتحريمه وإن لم يثبت انتفاعه فالأصل حله مع أن في الإفتاء بحله دفع الحرج عن المسلمين فإن أكثرهم مبتلون بتناوله مع أن تحليله أيسر من تحريمه وما خير رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بين أمرين إلا اختار أيسرهما.(العقود الدرية في تنقيح الفتاوى الحامدية،ج:2،ص:332) ( وَمَآاٰتٰکُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْہُ وَمَا نَھٰکُمْ عَنْہُ فَانْتَہُوْا وَاتَّقُوا اللہَ اِنَّ اللہَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ‘‘ (الحشر:۷) (9) قُلْ اِنْ کُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰہَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْکُمُ اللّٰہُ وَیَغْفِرْلَکُمْ ذُنُوْبَکُمْ وَاللّٰہُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ‘‘ (آل عمران : ۳۱ ) (10) إنَّ الحلالَ بيِّنٌ وإنَّ الحرامَ بيِّنٌ وبينهما أمورٌ مُشتبِهاتٌ لا يعلمهنَّ كثيرٌ من الناس فمنِ اتَّقى الشُّبُهاتِ استبرأ لدِينِه وعِرضِه ، ومن وقع في الشُّبهاتِ وقع في الحرامِ ، كالراعي يرعى حول الحِمى يوشكُ أن يرتعَ فيه ، ألا وإنَّ لكلِّ ملكٍ حمًى ، ألا وإنَّ حمى اللهِ محارمُه ، ألا وإنَّ في الجسدِ مُضغةً إذا صلُحتْ صلُح الجسدُ كلُّه وإذا فسدتْ فسد الجسدُ كلُّه ألا وهي القلبُ ( صحيح المسلم: ١٥٩٩)
বিস্তারিত পড়ুনলাইলাতুল ক্কদর এর বিস্তারিত আলোচনা (২৭তম রজনী)
১০ মে, ২০২৫
২৭তম রজনী নিয়ে কিছু কথাঃ ২৭ তম রজনী "লাইলাতুল ক্বদর" হিসেবে নিশ্চিত নয়, সুনির্দিষ্ট নয়। বরং হাদীসের ভাষ্যমতে ২১তম রজনী, ২৫তম রজনীর গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। বেজোড় রাত্রিগুলোর যে কোন রাতেই শবে ক্বদর হতে পারে। লাইলাতুল ক্বদর কোন রাত্রের জন্য নির্দিষ্ট নয়। প্রতিবছরই লাইলাতুল ক্বদর পরিবর্তন হয়। হ্যা, বেজোড় রাত্রিগুলোতে হওয়ার কথা এসেছে। তবে সেটা প্রতিবছর পরিবর্তন হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রাতে হয়। শবে ক্বদরের জন্য কোন নির্দিষ্ট পরিমান রাকাতের নামাজ, নির্দিষ্ট পদ্ধতির নামাজ, নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে পড়ার নামাজ, নির্দিষ্ট সময়ে পড়ার কোন প্রকার প্রামাণিকতা নাই। এ ব্যাপারে বাজারে যত বইয়ে আলোচনা পাওয়া যায়, তার সবই মনগড়া বানোয়াট বর্ণনা। শবে ক্বদরে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বে। ২ রাকাত করে যতবেশি পারে নফল নামাজ পড়বে। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করবে। বেশি বেশি ইস্তেগফার, তাওবাহ করবে। দান সদক্বাহ করবে বাদ মাগরিব থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। শবে ক্বদরের নামাজের আলাদা কোন নিয়ত নেই। নফল নামাজ পড়তেছি যাস্ট এতটুকু নিয়ত করেই দাড়াবে। কোন নির্দিষ্ট সূরা নেই, নির্দিষ্ট সংখ্যায় পড়ার কোন প্রামাণিকতা নেই। এদিন রাতে মসজিদে মসজিদে যেসব মোনাজাত, জিলাপি, দোআর আয়োজন করা হয়; তার সব পরিত্যাজ্য। বরং একাকী ইবাদাত করবে। মসজিদে এসেও ইবাদাত করার সুযোগ আছে। তবে মিলাদ জিলাপির আয়োজন বাদে। নামাজে রুকু সিজদা দীর্ঘ করবে।
বিস্তারিত পড়ুনঅনলাইনে ফ্রি পেইড কোর্স এবং ক্র্যাকড-পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার এর বিধান
১০ মে, ২০২৫
এখন টেলিগ্রাম এবং গুগলে প্রচুর ফ্রি আনপেইড কোর্স পাওয়া যায়, অনুরুপভাবে প্রচুর পরিমানে ক্র্যাকড বা প্রিমিয়াম সফটওয়্যার ফ্রি ফ্রি পাওয়া যায়। তদ্রুপ ফ্রি ফ্রি পিডিএফ ফাইল পাওয়া যায়। সবাই এগুলো কমবেশি ব্যাবহার করে। এগুলা ব্যবহারের কিছু ধরন আছে। (ক) কোর্সগুলো নিজে পড়ে। অন্যকে শেয়ার করে না। সফটওয়্যার নিজে ব্যবহার করে, অন্যকে দেয় না। পিডিএফ নিজে পড়ে, অন্যকে দেয় না। (খ) কোর্সগুলো নিজে পড়ে, অন্যকেও শেয়ার করে, সফটওয়্যার নিজে চালায়, অন্যকেও দেয়, পিডিএফ নিজে পড়ে, অন্যকেও দেয়, তবে এসবের কোনটা বিক্রি করে না। (গ) উপরোক্ত সব জিনিসগুলি বানিজ্যিকভাবে কেউ ব্যবহার করছে, বিক্রি করছে। বিধানগুলির উপর এবার আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ। প্রথম পয়েন্ট "ক" এর উপর কথাঃ (১) টেলিগ্রামের ফ্রি কোর্সগুলোর অনেকগুলো এমন আছে যা কোন প্রাইভেট ক্লাসের, যেগুলা বাহিরে আপলোড দেয়া টোটালি নিষেধ, শেয়ার করা, পাবলিশ করা নিষেধ, অনুরুপভাবে কিছু বইয়ের নতুন পিডিএফ থাকে, কিছু এ্যাপস আছে প্রিমিয়াম পেইড, যেগুলা প্রকাশের সাথে সাথেই পিডিএফ উন্মুক্ত করে দিলে, সাথে সেই সফটওয়্যার প্রিমিয়াম কপি পাবলিশ করে দিলে : মালিকরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এবং এসব প্রকাশে তাদের নিষেধাজ্ঞা থাকে সুস্পষ্ট : তাহলে এমন পিডিএফ বা এমন কোর্স বা এমন প্রিমিয়াম এ্যাপ ব্যক্তিগতভাবেও ব্যবহারের অনুমতি নাই। যদিও সে অন্য কারোর কাছে শেয়ার না করে, তথাপি নিজে নিজেও ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ নতুন নতুন কোর্স বা বইয়ের পিডিএফ বা প্রিমিয়াম এ্যাপসগুলো ফ্রি পাবলিশ করলে এর দ্বারা নিশ্চিতভাবেই মালিকদের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এবং ক্ষতি হবেও। তাই তাদের "সত্ত্বাধিকারী সংরক্ষিত" কথাটি এখানে শরয়ীভাবে খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই ব্যক্তিগতভাবেও এখানে ফ্রি ফ্রি উপকৃত হওয়ার সুযোগ নাই। ব্যাবহার করা জায়েজ হবে না। সুতরাং নতুন কোন কোর্স/এ্যাপস/পিডিএফ কিনেই নিজের কোন বন্ধু বা কোন কলিগকে শেয়ার করাটা আমানতের খেয়ানত হবে এবং কবিরা গোনাহ হবে, এবং যে নিবে তার জন্যও জায়েজ হবে না। (২) সদ্য প্রকাশিত কোন বই যদি সমসাময়িক সময়ের জন্য খুবই জরুরী হয়ে থাকে, কিন্তু তা সহজলভ্য নয়, পাওয়া যায় না, অথবা বাস্তবেই তার ক্রয়ের সামর্থ নাই অথচ সেটি খুবই জরুরীঃ তাহলে সেটির পিডিএফ পড়ার সুযোগ আছে, তবে সুযোগ থাকলে অবশ্যই মুল প্রকাশনী বা মালিক থেকে অনুমতি নেয়া উত্তম। যদিও এই মতের উপর আপত্তি করার সুযোগ আছে। কিন্তু কোর্স এবং এ্যাপসের অনুমতি নাই। কারণ বইয়ের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ঈলম সংক্রান্ত বিষয়, জ্ঞান বিতরণই উদ্দেশ্য, যা মানুষের জন্যই লেখা হয়েছে। পক্ষান্তরে পেইড কোর্স বা পেইড এ্যাপ গ্রাহকদের জন্য খাস, সেগুলো ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যটিই বেশি প্রাধান্য পায় । (৩) বই বা এ্যাপস বা কোর্সের পক্ষ থেকে যদি কোন প্রকার রেস্ট্রিকেশন না থাকে, এগুলোর ফ্রি ভার্সন বের করার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকে অথবা তাদের মৌন সম্মতি থাকেঃ তাহলে ব্যক্তিগতভাবে তা থেকে উপকৃত হওয়া, এমনকি বই প্রিন্ট করে শুধুমাত্র নিজের কাছে রেখে পড়ার জন্য জায়েজ আছে। দ্বিতীয় পয়েন্ট "খ", নিজে ব্যবহার করে, অন্যকেও শেয়ার করেঃ (১) যদি একেবারে নতুন পিডিএফ অথবা এ্যাপস অথবা কোর্স হয়; তাহলে কোনভাবেই সেটি সর্বত্র পাবলিশ, অন্যকে শেয়ার করার সুযোগ নাই। কারণ এর দ্বারা মালিকের হক্ব নষ্ট করা হয়। কোন জিনিস মেহনত করে তৈরীর একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে তা থেকে কিছু বেনিফিট বা মুনাফা অর্জন করা। এখন কেউ কোনক্রমে ফ্রি এ্যাপস/কোর্স/পিডিএফ পেয়ে যদি সেটি পাবলিক করে, তাহলে মালিকের শতভাগ ক্ষতি হবে। আর এটি একেবারেই নাজায়েজ; এই মাসআলা তখন, যখন উল্লেখিত এ্যাপস/পিডিএফ/কোর্স একদম বা মোটামোটি নতুন হয়। (২) এগুলা যদি এতটা পুরাতন হয়ে যায়, যার দ্বারা এতদিনে মালিকের মুনাফা মোটামোটি অর্জব হয়ে গিয়েছে বা এতবেশি পাবলিক হয়ে যায়, যেটা একেবারেই সবার জন্যই সহজলভ্য, সবখানে পাওয়া যাচ্ছে; তাহলে তা অন্যকে শেয়ার করার সুযোগ আছে। এতে গোনাহ হবে না। মোটকথা যেসব বইয়ের স্বত্ব সংরক্ষণের ঘোষণা দেওয়া হয়নি অথবা তার স্বত্বাধিকারী পিডিএফ প্রচার করা হচ্ছে জেনেও অসন্তোষ প্রকাশ করেনি অথবা প্রতিবাদ করেনি, এমন বই দ্বারা নিজে উপকৃত হওয়া এবং অন্যকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। তৃতীয় পয়েন্ট "গ", ব্যবসা করাঃ উল্লেখিত জিনিসগুলো একেবারে নতুন বা মোটামোটি নতুন বা যথেষ্ঠ পুরাতন যেটাই হোক; যদি মালিকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকে যে এগুলোর দ্বারা কোন প্রকার ব্যবসা, প্রিন্ট করে বিক্রি করা, বাজারজাত করা নিষেধ থাকে; তাহলে এগুলোকে কখনোই বাণিজ্যিক বাজারজাত করার কোন প্রকার সুযোগ নাই। হ্যাঁ, নিজের জন্য প্রিন্ট করে নিয়ে রাখতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়া দেয়ার জন্য প্রিন্ট করতে পারবে। তবে এগুলোর কোনটিই বিক্রি করার সুযোগ নেই। যেসব পিডিএফ বই/কোর্স/এ্যাপস অনলাইনে পাওয়া যায় এবং তাতে স্বত্ব সংরক্ষণের ঘোষণা থাকে, কিন্তু এ কথা জানা যায় যে এটা স্বত্বাধিকারীর অনুমতিতে পিডিএফ করা হয়েছে, নাকি অনুমতি ছাড়াই পিডিএফ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের প্রবল ধারণা অনুযায়ী আমল করবে। যদি ব্যক্তির প্রবল ধারণা হয় স্বত্বাধিকারী এতে সন্তুষ্ট নয়, তবে তাকওয়ার দাবি হলো এগুলো পরিহার করা। এর পরও কেউ যদি তা দ্বারা উপকৃত হয়, তবে তার জন্য তা নাজায়েজ হবে না। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে প্রকাশকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর এর দায় বর্তাবে, পাঠকের ওপর নয়। তবে একেবারে নতুন হলে তো অবশ্যই এসব থেকে বিরত থাকবে। উল্লেখ্য যেঃ আমাদের ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে যে উইন্ডোজ ব্যবহার করি বা মাইক্রোসফট অফিস, ভিপিএন, এন্টি ভাইরাসসহ মিডিয়ার কাজের জন্য অনেক পেইড সফটওয়্যারের ক্র্যাকড ভার্সন বিনামূল্যে ব্যবহার করি, মুলত এই সফটওয়্যারগুলোর মালিক হারবি কা*ফে*র'রা। হারবি কা'ফে-র"দের সকল সম্পদ মুসলিমদের জন্য হালাল, যতক্ষণ না তারা আমাদের সঙ্গে কোনো চুক্তির আওতায় আসে এবং তাদের সম্পদ সংগ্রহে তাদের সঙ্গে কৃত কোনো চুক্তি বা ওয়াদা ভঙ্গ করা না হয়। সুতরাং তাদের তৈরি এসব সফটওয়্যারের ক্র্যাকড ও পাইরেটেড ভার্সন (নেট থেকে হোক বা দোকান থেকে কিনে হোক) ব্যবহার করতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই। বাজারজাত করাও জায়েজ আছে।
বিস্তারিত পড়ুনতারাবীহ নামাযে প্রতি ৪ রাকাত পর পর দোআ
৯ মে, ২০২৫
আমাদের দেশে তারাবীহ নামাজের প্রতি চার রাকাত পর পর জোরে জোরে একটি দোআ পড়া হয়। "সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি....! এটিকে তারাবীহ নামাজের দোআ বলা হয়ে থাকে। ইমাম সাহেব না পড়লে তার উপর রাগ করা হয়। এটিকে মাসনুন দোআর মতই সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়া হয়। বাস্তব কথা হলো: উক্ত দোআটি হাদিসে পাওয়া যায় না। হাদিসের কোন প্রমাণিত দোআ নয় এটি। বরং ফুক্বাহায়ে কেরাম বিভিন্ন হাদিসের টুকরা টুকরা কিছু শব্দ/তাসবীহকে একত্রিত করে একটি দোআর রুপ দিয়েছেন। এটি অর্থবোধক এবং সুন্দর। এবং এটি পড়ার ও অবকাশ আছে। তবে এটিকে মাসনুন কোন হাদীসের দোআ মনে করা যাবে না, এবং আবশ্যপাঠ্য মনে করা যাবে না। বরং প্রতি চার রাকাত পরপর বিভিন্ন মাসনুন দোআ এবং দুরুদ শরীফ পাঠ করা উচিত। ফতোয়ায়ে শামিঃ "(يَجْلِسُ) نَدْبًا (بَيْنَ كُلِّ أَرْبَعَةٍ بِقَدْرِهَا وَكَذَا بَيْنَ الْخَامِسَةِ وَالْوِتْرِ) وَيُخَيَّرُونَ بَيْنَ تَسْبِيحٍ وَقِرَاءَةٍ وَسُكُوتٍ وَصَلَاةٍ فُرَادَى، نَعَمْ تُكْرَهُ صَلَاةُ رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ". "(قَوْلُهُ: بَيْنَ تَسْبِيحٍ) قَالَ الْقُهُسْتَانِيُّ: فَيُقَالُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ: «سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ نَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، نَسْأَلُك الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِك مِنْ النَّارِ»، كَمَا فِي مَنْهَجِ الْعِبَادِ. اهـ". (شامي، كتاب الصلاة، باب الوتر و النوافل، مبحث صلاة التراويح، ٢/ ٤٦)
বিস্তারিত পড়ুনতারাবীহ এর পর প্রচলিত মুনাজাত
২৯ এপ্রিল, ২০২৫
তারাবীহর নামাজ শেষ করার পর ইমাম সাহেবদেরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচলিত একটি দোআ পাঠ করতে দেখা যায়। "আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার.... "। কোন কোন জায়গায় উক্ত দোআটি না পাঠ করলে মুসাল্লিরা রাগারাগিও করে। আমি নিজেই এর সাক্ষী, আমার সঙ্গেই ঘটেছে কয়েকবার। আসল কথা হলো: উক্ত দোআটি সরাসরি হাদিসের কোন হুবহু বর্ণিত দোআ নয়। বরং হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন দোআ মূলক বাক্য এবং বেশকিছু সুন্দর অর্থবোধক বাক্যকে জুড়ে দিয়ে সুন্দর দোআর একটি রুপ দেয়া হয়েছে মাত্র। মৌলিকভাবে দোআটি পাঠ করতে কোন দোষ নেই। এটি পাঠযোগ্য। তবে এটি তারাবীহর নামাজের নিদৃষ্ট কোন দোআ নয়, এবং পুরোবছরে শুধুমাত্র রমজানের তারাবীর নামাজের পরেই এটি পড়ার নিয়ম বা জরুরত মনে করা যাবে না এবং এরুপ প্রচলন করা যাবে না। বছরের যে কোন সময় যে কোন নামাজের পর দোআটি পাঠ করা যাবে। উপরন্তু দোআটি পাঠ করা সুন্নাত বা জরুরী মনে করা যাবে না, এরকম আবশ্যকীয় মনে করলে বিদআত হবে। তাই বিষয়টি মুসাল্লিদের আগে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়া উচিত। মাঝেমাঝে পাঠ করা, ছেড়ে দেয়া, সঙ্গে আরো বিভিন্ন দোআ যুক্ত করে মোনাজাত করলে সমস্যাটা আর থাকে না। রেফারেন্সঃ الأذكار للنووی "اعلم أن صلاة التراويح سنة باتفاق العلماء، وهي عشرون ركعة، يسلم من كل ركعتين، وصفة نفس الصلاة كصفة باقي الصلوات على ما تقدم بيانه، ويجئ فيها جميع الأذكار المتقدمة كدعاء الافتتاح، وإستكمال الأذكار الباقية، واستيفاء التشهد، والدعاء بعده." (كتاب الأذكار في صلوات مخصوصة، باب أذكار صلاة التراويح، ص: 183، ط: دار الفكر للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت - لبنان) فتاوی شامی : "(يجلس) ندبا (بين كل أربعة بقدرها وكذا بين الخامسة والوتر) ويخيرون بين تسبيح وقراءة وسكوت وصلاة فرادى، نعم تكره صلاة ركعتين بعد كل ركعتين. (قوله وكذا بين الخامسة والوتر) صرح به في الهداية واستدرك عليه في النهر بما في الخلاصة من أن أكثرهم على عدم الاستحباب وهو الصحيح. اهـ. أقول: هذا سبق نظر، فإن عبارة الخلاصة هكذا: والاستراحة على خمس تسليمات اختلف المشايخ فيه وأكثرهم على أنه لا يستحب وهو الصحيح اهـ فإن مراده بخمس تسليمات خمس أشفاع: أي على الركعة العاشرة كما فسر به في شرح المنية لا خمس ترويحات كل ترويحة أربع ركعات، فقد اشتبه على صاحب النهر التسليمة بالترويحة فافهم. (قوله بين تسبيح) قال القهستاني: فيقال ثلاث مرات «سبحان ذي الملك والملكوت، سبحان ذي العزة والعظمة والقدرة والكبرياء والجبروت، سبحان الملك الحي الذي لا يموت، سبوح قدوس رب الملائكة والروح، لا إله إلا الله نستغفر الله، نسألك الجنة ونعوذ بك من النار» كما في منهج العباد. اهـ." (كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل، ج: 2، ص: 46، ط: سعيد)
বিস্তারিত পড়ুননবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহর সাদৃশ্য সিল দিয়ে তৈরি আংটির বিধান
২৮ এপ্রিল, ২০২৫
আবেগ বিক্রি করে খেতে আমরা পটু। যে কোন জিনিসের ইসলামি রুপায়ন হলেই সেটার প্রতি ঝুঁকে পড়ি আমরা। ছবির এই আংটি অনেকে অনলাইনে বিক্রি করছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহর সাদৃশ্য সিল দিয়ে বিক্রি হচ্ছে আংটি। অনেক আলেমও বিক্রি করছেন অনলাইনে। বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি আংটিটি স্টিল দ্বারা তৈরী। কয়েকটি বিষয় এখানে দ্রষ্টব্যঃ যদি স্টিলের তৈরী হয়, তাহলে তো নারী পুরুষ কারোর জন্যই কোনভাবে পরিধান করার কোন সুযোগ নেই। যদি রুপার তৈরী হয়, তাহলে দেখতে হবে এর ওজন কত। সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম ৩৭৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পুরুষের জন্য রুপার আংটি পরিধান বৈধ। এখন এটি সেই ওজন কিনা, যাচাই করা জরুরী। টয়লেটে আল্লাহ-নবীর নাম সম্বলিত কোন আংটি উন্মুক্ত নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নাই। ঢেকে যেতে হবে। নোটঃ পুরুষের জন্য শুধুমাত্র রুপার আংটি পরিধান জায়েজ। মহিলাদের জন্য শুধুমাত্র স্বর্ণ-রুপা এবং বর্তমানে সিটিগোল্ড/ইমিটিশন, হীরা, পাথর, কাচ, প্লাস্টিকের আংটি ব্যাবহার জায়েজ। এই ছাড়া বাকি যত ধাতুর আংটি হতে পারেঃ পিতল, লোহা, কাসা, তামা, সীসা, দস্তা, পারদ, এ্যালুমিনিয়াম, সিলভার সমস্ত প্রকার আংটি সরাসরি পরিধান তথা স্বর্ণ রুপার প্রলেপ দেয়া ছাড়া পরিধান নাজায়েজ। তবে আংটি ছাড়া মহিলারা অন্যান্য অলংকারের ক্ষেত্রে সমস্ত ধাতুর অলংকার ব্যাবহার করতে পারবে। অতএব শুধুমাত্র সিল/স্টিকার দেখেই লাফিয়ে পড়া যাবে না। যাচাই বাছাই করা জরুরী। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পুরুষদের আংটি যদি ৪ গ্রাম রুপার সাথে অন্য ধাতু এবং পাথর ব্যবহার করার ফলে ওজন ৪.৩৭৪ গ্রামের বেশি হয় তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ।
বিস্তারিত পড়ুনরাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের বিধান
২৭ এপ্রিল, ২০২৫
রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস ও তা ব্যবহার এর বিধানঃ যদি কোনো ব্যক্তি রাস্তায় টাকা বা কোনো মূল্যবান জিনিস পড়ে থাকতে দেখেন, আর যদি তিনি মালিককেও চেনেন এবং তার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, এবং রেখে দিলে জিনিসটির নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা তুলে মালিকের কাছে পৌঁছে দিবেন । আর যদি এই আশা থাকে যে মালিক নিজেই এসে খুঁজে নেবেন, সেই সুযোগ থাকে, তাহলে তা না তুললেও চলবে। তবে যদি মালিককে না চেনেন, এবং রেখে দিলে জিনিসটির নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা তুলে নিবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে তা "লুকতা" তথা গুম হওয়া জিনিস হিসেবে গণ্য হবে। আর লুকতার বিধান হলো, তা মালিকের কাছে পৌঁছানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা, জনসমাগমের জায়গায় বা সম্ভাব্য স্থানগুলিতে ঘোষণা দেওয়া। যদি মালিককে না পাওয়া যায় এবং এই ধারণা হয় যে মালিক তা নিতে আর আসবেন না এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন, যদি তিনি গরিব তথা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন, তবে তিনি তা নিজেই ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি তিনি গরিব না হন, তাহলে নিজে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। বরং কোন মিসকিন বা ফকিরকে দিয়ে দিতে হবে। নিজে ঋণ হিসেবে নিয়ে পরবর্তীতে সদকা করে দেয়ার নিয়তে রেখে দেয়ার সুযোগ নাই। উল্লেখ্য যেঃ ঐ পথে পাওয়া বস্তু সদকা করার পর বা নিজে গরিব হওয়ার কারণে তা ব্যবহার করার পরে মালিক এলে এবং তার জিনিস বা টাকার দাবি করেন, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি আখেরাতে সাওয়াবের অধিকারী হবেন। অবশ্য যদি কেউ কোনো গুম হওয়া জিনিস নিরাপত্তার জন্য তুলে নেয় এবং তা রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, তারপরেও যদি তা চুরি হয়ে যায়, তবে এটি তার ত্রুটি বলে গন্য হবে না এবং ধরে নেয়া হবে যে এই লুকতা তার কাছে আমানত ছিল; সুতরাং তার ওপর ক্ষতিপূরণের দায় থাকবে না। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। অনুরুপভাবে যদি কেউ হারিয়ে হওয়া জিনিস নিরাপত্তার জন্য তুলে নেয় এবং পরে সেই ব্যক্তি মারা যান, তবে তার ওয়ারিশদের (উত্তরাধিকারীদের) দায়িত্ব হবে সেই পাওয়া জিনিসটি সংরক্ষণ করা বা ঘোষণা দিয়ে মালিক বা তার উত্তরাধিকারী খুঁজে বের করা। যদি সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তা সদকা করা বাধ্যতামূলক। যদি ওয়ারিশরা গরিব হন, তাহলে তারা তা ব্যবহার করতে পারবে, নতুবা পারবে না।
বিস্তারিত পড়ুনসাম্প্রতিক প্রবন্ধ
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
Hm Sulayman - ১১ জুন, ২০২৫
সকল প্রসঙ্গ
২৭তম রজনী
অনলাইন কোর্স
অলিম্পিক
আংটি
আধুনিক মাসআলা
আধুনিক মাসাআলা
আমল
উম্মুল মু'মিনিন
ঋণ
ওকালতি
কট
কাপড়ের মোজা
কাফফারা
কাযা
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস
কুফর
কুরবানী
ক্রিকেট
ক্রিপ্টোকারেন্সি
ক্র্যাকড
খেলাধুলা
খেলাধুলা হতে উপার্জন
গোশত বন্টনে
জমি
জর্দা
ডাক্তারি বিদ্যা
ডিফেন্স ফোর্স
ড্রপ শিপিং
তাকবীরে তাহরিমা
তামাক
তারাবীহ
তালাক
দাবা
দৈনন্দিন আমল
দোআ
দোয়া
নবীজি
নবুয়তের সিলমোহর
নামাজ
নেশা
নৌবাহিনী
পাইরেটেড
পার্লামেন্ট সদস্য
পাশা
পুলিশ
পেইড কোর্স
প্রয়োজনীয়
ফরেক্স ট্রেডিং
ফিদিয়া
ফুটবল
বন্ধক
বর্গা
বাইনারি ট্রেডিং
বিচারপতি
বিটকয়েন
বিড়ি
বিডিআর
ব্যবসায়
ব্যাডমিন্টন
ব্যারিস্টার
মদ
মাকরুহ
মাসবুক
মাসেহ
মুনাজাত
মেডিকেল
মোজা
যাকাত
যাকাত-ফিতরা
রাজনীতি
রাস্তায় পাওয়া জিনিস
রুকু
রোজা
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজার মাসআলা
রোজার মাসাআলা
রোযা ভঙ্গের কারণ
র্যাব
লাইলাতুল ক্বদর
লাইলাতুল বারাআত
লুডু
শতরঞ্জ
শবে ক্বদর
শবে বরাত
শিক্ষক
সফটওয়্যার
সংবিধান
সরকারি চাকরি
সহশিক্ষা
সাধারণ সরকারি চাকরি
সামরিক বাহিনী
সামাজিক প্রথা
সালাম
সিগারেট
সিজদা
সুদ
সেক্যুলারিজম
সেনাবাহিনী
স্ত্রী
হারাম
© ২০২৫ শরয়ী সমাধান - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত